নওগাঁর ধামইরহাটে কালের আবর্তে ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। নানামুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার কারণে দেশের জনপ্রিয় শিল্পটি আজ মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে। অন্যদিকে প্রযুক্তির উন্নয়নে ও নতুন
শিল্পসামগ্রীর প্রসারে এ পেশায় জড়িত শিল্পীরা তাদের পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন জীবনের তাগিদে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকাজুড়ে বসবাসকৃত এ পেশায় নিয়োজিত মৃৎশিল্পীদের মধ্যে অধিকাংশ পাল সম্প্রদায়ের। প্রাচীনকাল থেকেই ধর্মীয় এবং আর্থসামাজিকতার কারণে মৃৎশিল্প পেশার মাধ্যমে শ্রেণিভুক্তভাবে তারা সমাজে বসবাস করে আসছিল।
এক সময় তাদের কোমল হাতের কৌশলী ছোঁয়ায় তৈরি মাটির শিল্পগুলো শোভা পেত গ্রাম-বাংলার প্রতিটি ঘরে। পাশাপাশি তাদের তৈরি পণ্যগুলো গ্রামের চাহিদা মিটিয়ে শহরের মানুষদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ত ব্যাপকহারে। তবে প্রযুক্তির ব্যবহারে সেসবের চাহিদা থেকে সরে আসছে মানুষ। সময়ের বিবর্তনে প্রযুক্তির যাঁতাকলে মাটির তৈরি শিল্পের বদলে প্রতিটি পরিবারে শোভা পাচ্ছে অ্যালুমিনিয়াম, কাচ ও পস্নাস্টিকের তৈরি পণ্য। প্রযুক্তির সঙ্গে পালস্না না দিতে পারায় প্রাচীন এ মৃৎশিল্প ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। তাই আগের মতো কর্মব্যস্ততাও নেই শিল্পীদের মাঝে।
ধামইরহাট দক্ষিণ চকযদু এলাকার প্রবীণ শিল্পী রামায়ন পাল (৮০) বলেন, 'আমি ১৮ বছর বয়স থেকে এই মৃৎশিল্পে জড়িত ছিলাম। বয়সের ভারে ও আধুনিকতার দাপটে আমি পেশা থেকে সরে দাঁড়ালেও আমার ছেলে তার পূর্ব বংশের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো এ পেশায় জড়িয়ে রয়েছে। তবে আগে যে হারে মাটির জিনিসপত্র ব্যবহার করতো মানুষ, বর্তমানে সেভাবে করছে না। ফলে ঋণ করে সংসার চালাতে হয়। ঐতিহ্যবাহী এ মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগরদের বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিল্পকে টিকিয়ে রাখার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে দেশ-বিদেশে ঐতিহ্যবাহী শিল্পের চাহিদা তৈরি করতে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার দাবি জানান তিনি।
Copyright JaiJaiDin ©2021
Design and developed by Orangebd