বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিলুপ্তির পথে মৃৎশিল্প সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ

কালের আবর্তে ক্রমেই হারিয়ে যচ্ছে শত বছরের ঐতিহ্য মৃৎশিল্প। একদিকে আধুনিকতা এবং অন্যদিকে পস্নাস্টিক, মেলামাইন ও অ্যালুমিনিয়ামের থাবায় মুখ থুবড়ে পড়েছে শিল্পটি। বাঁচার তাগিদে এ পেশায় জড়িত মৃৎশিল্পীরা এখন ভিন্ন পেশায় ঝুঁকছেন। মৃৎশিল্পের নানাদিক নিয়ে আমাদের এ আয়োজন-
মো. ওয়ালী উলস্নাহ সরকার
  ০৬ মার্চ ২০২১, ০০:০০

আধুনিকতা ও উন্নয়নের কারণে মানুষের রুচির পরিবর্তনে মাটির তৈরি সামগ্রীর স্থানে চলে এসেছে পস্নাস্টিক, মেলামাইন, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি আধুনিক সামগ্রী। মৃৎশিল্পের চাহিদা কমে যাওয়ায় ও কাঁচামালের চড়া মূল্যের

কারণ, আর বাজারে বৈরিতা-সর্বোপরি পুঁজির অভাবে আধুনিক শিল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বিলুপ্তির পথে জামালগঞ্জের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিকে চোখ রাখলে দেখা যায়, মৃৎশিল্পের জন্য জামালগঞ্জ ব্যাপক পরিচিত ছিল। কালের আবর্তনে আজ তা বিলীনের পথে। হয়তো বা এমন সময় আসবে এ পেশার অস্তিত্ব শুধু খাতাকলমে সীমাবদ্ধ থাকবে।

উপজেলার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা জানান, তাদের পূর্বপুরুষরা মৃৎশিল্পের তৈরি থালা, বাসন, হাঁড়ি-পাতিল, ঘটি-বাটি ইত্যাদি ব্যবহার করতেন। বর্তমানে এই স্থান দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন ধরনের পস্নাস্টিক, সিলভার, মেলামাইন সামগ্রী।

সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের কুমারপাড়া এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। মৃৎশিল্পীদের চোখেমুখে এখন শুধু হতাশার গস্নানি। বদরপুর প্রমিলা রানী পাল ও সতী রানী পাল বলেন, 'এখন পূজা-পার্বণ ছাড়া মৃৎশিল্পের কোনো ভূমিকা নেই। কোনো একসময় মানুষের জীবনে মাটির হাঁড়ি-পাতিলের বিকল্প ছিল না। পস্নাস্টিক, মেলামাইন ও সিলভারের বিভিন্ন আসবাবপত্র এখন বাজার দখল করে নিয়েছে।' তিনি আরও বলেন, বৈরী পরিস্থিতি, আর্থিক সংকট এই শিল্পের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চড়া মূল্যে কিনতে হয়। আগে যেখানে বিনামূল্যে মাটি সংগ্রহ করা যেত, বর্তমানে মাটি অগ্রিম টাকায় কিনতে হয়।

বদরপুর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মৃৎশিল্পের করুণ পরিণতি। শত অভাবের মাঝেও বেশকিছু কুমার-কুমারী তাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কুমার পাড়ায় ঢুকে দেখা যায়, তাদের করুণ জীবনযাত্রা। ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সঙ্গতি না থাকায় অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। পুরুষ কুমারেরা কৃষি দিনমজুরি এবং বিভিন্ন দোকানে কর্মচারী পেশায় যোগ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, 'মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে কুমারদের পরিবারভিত্তিক ব্যাংক ঋণ ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি উপকরণ সহায়তা দেওয়া হলে আবারও তারা শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে অবলম্বন করে টিকে থাকতে পারবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে