শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহ বাড়ছে

এইচএম মোকাদ্দেস, সিরাজগঞ্জ
  ০৬ মার্চ ২০২১, ০০:০০
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ -যাযাদি

এখন পুকুর, খাল-বিলের প্রয়োজন নেই মাছ চাষ করতে। স্বল্প জায়গা ও ঘরের ভেতরে আধুনিক প্রযুক্তি বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায়। বর্তমানে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাড়ির আঙ্গিনায় শুরু হয়েছে মাছ চাষ। নতুন এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সিরাজগঞ্জের পৌর এলাকার সরকার পাড়ার তুষার আহম্মেদ ও চর-রায়পুর গ্রামের রিপন সরকার সফল হয়েছেন। কম খরচে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে সফল হওয়ায় নিজ এলাকা পেরিয়ে এখন পুরো জেলায় মৎস্যজীবী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তারা।

তুষার ও রিপনের সফলতা দেখে জেলার শিক্ষিত বেকার যুবকরা এখন বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে চাকরির পেছনে না ছুটে স্বাবলম্বী হয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এমন প্রত্যাশা তাদের।

ইতোমধ্যেই তাদের হাত ধরে জেলায় নতুন এই পদ্ধতিতে মাছ চাষের সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন দেশি মাছের চাহিদা পূরণ হচ্ছে অন্যদিকে আমিষের জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

প্রতি বছর পুকুর খনন করতে গিয়ে যেমন কৃষিজমির পরিমাণ কমছে। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে গিয়ে যেমন নতুন করে পুকুর খননের প্রয়োজন হবে না। তেমনি খাল-বিল কিংবা নদী-নালারও প্রয়োজন হয় না। বাড়ির উঠানে স্বল্প জায়গায় ও অল্প পুঁজিতে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা সম্ভব। তুষার আহম্মেদের সঙ্গে বায়োফ্লক এ মাছের খামার দেওয়ার বিষয় কথা হয়। তিনি বলেন, ইউটিউব চ্যানেলে মাছ চাষের ভিডিও দেখে তার মনে আগ্রহ জন্মায়। বায়োফ্লক পদ্ধতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে তিনি রাজশাহী থেকে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে প্রায় ১ বছর আগে নিজ বাড়ির ঘরের মেঝেতে ৯০ হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি হাউজ তৈরি করেন। এতে তার ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। এ কাজের অর্থ ও সহযোগিতা করেন তার পিতা জাহাঙ্গীর আলম। এরপর সেখানে দেশীয় প্রজাতির শিং, কৈ, মনোসেক্স তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছের ২৫ কেজি পোনা দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। এতে তার খরচ হয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা। স্থানীয় বাজারে সেই মাছগুলো ২ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। বর্তমানে সেই হাউজে আবারও মাছ চাষ হচ্ছে। এই মাছ আগামী মাসে স্থানীয় বাজারে ৩ লাখের বেশি টাকায় বিক্রি করা যাবে বলে আশাবাদী তিনি। তুষার আরও বলেন, রেণু ছাড়ার ৭ দিনের মধ্যে জীবাণুমুক্ত এবং প্রবায়োটিকের মাধ্যমে পানি তৈরি করা হয়। এরপর নিয়মিত ফিড খাবার এবং পানির গুণগতমান পরীক্ষা করা হয়। পানির অ্যামোনিয়া নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চিটাগুড় ব্যবহার করা হয়। অভিজ্ঞদের কাছ থেকে এবং মৎস্য অফিসের পরামর্শ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করা যায়। চর-রায়পুর গ্রামের রিপন সরকার বলেন, পুকুর ইজারা নেওয়া যাদের পক্ষে সম্ভব না। তারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে উদ্যোক্তা হয়ে অল্প পুঁজিতে স্বল্প জায়গায় মাছ চাষ করতে পারেন। দশ কাঠা পরিমাণ জলাশয়ে যে পরিমাণ মাছ চাষ করা যায়, তার একটি হাউজে সেই পরিমাণ মাছ চাষ করা সম্ভব। হাউজে মাছ চাষে খাবারের খরচটা কম লাগে।

সরকার বেকার দূরীকরণে জামানতবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করে তাহলে চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হয়ে মাছ চাষ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব বলে রিপন সরকার মনে করেন। সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাহেদ আলী বলেন, 'বায়োফ্লক পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় মাছ চাষ করা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে অনেকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এবং মাছ চাষ করে লাভবানও হচ্ছেন অনেকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে