শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাভারে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ভিনদেশি তন্দুরি চা

মো. আরজু মীর, সাভার
  ০৬ মার্চ ২০২১, ০০:০০

বিকাল শেষে সন্ধ্যা যত গড়াচ্ছে মানুষের ভিড় ততই বাড়তে থাকে। হাতে মাটির কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে গল্পের ফাঁকে ফাঁকে চুমুক দিচ্ছেন ভিড় জমিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। হাসি-ঠাট্টা, গল্প-গুজবে চুমুকের সেই আড্ডাটা বেশ জমে ওঠে। এভাবে মামুনের চায়ের টেবিলের সামনে আড্ডা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। বলছিলাম সাভারের বিরুলিয়ার ২৬ বছর বয়সি মামুনের বাঙালিখানা রেস্টুরেন্টের দারুণ উপাদেয় তন্দুরি চায়ের কথা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে গিয়ে এমন চিত্রই চোখে পড়ে।

উত্তপ্ত মাটির কাপে পুড়ে যাওয়া চায়ের সুগন্ধে আকৃষ্ট করে যে কাউকে। তাইতো ভিনদেশ কলকাতার এই চায়ের কদর বেড়েছে এখানে। জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই চা। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এক কাপ চা পান করার জন্য অপেক্ষা করে বিনাদ্বিধায়।

সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, সন্ধ্যা হতেই মানুষের চাপ বাড়তে শুরু করে। দল বেঁধে মানুষ চা খেতে আসছেন। চা খেয়ে আবার চলে যাচ্ছেন।

চায়ের দোকানটি সড়কের পাশে হওয়ায়- সড়কের দাঁড়িয়েই চা খাচ্ছেন অনেকে। তন্দুরি চা তৈরির কারিগরের দম ফেলানোর ফুসরত নেই। একের পর এক চা বানিয়েই চলছেন তিনি।

দোকানের মালিক মামুনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার বাড়ি বিরুলিয়া এলাকাতেই। তিনি প্রতিদিন যাতায়াতের সময় চিন্তা করতেন এখানে ব্রিজের পাশে একটি রেস্তোরাঁ দরকার। সে থেকে তিনি আড়াই মাস আগে রেস্টুরেন্ট খুলে তন্দুরি চা তৈরি শুরু করেন। তুরস্ক থেকে তন্দুরি চায়ের আবিষ্কার। তারপর ভারতের পুনেতে বেশি জনপ্রিয় হয় এই চা। বর্তমানে বাংলাদেশেও এ চায়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

তন্দুরি তৈরিতে দুধের ভূমিকা অপরিহার্য। এছাড়া দুধ তৈরিতেই প্রয়োজন পরে আরও ১১টি উপকরণ। তারপর গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী চা-পাতি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের তন্দুরি চা তৈরি করা হয়। মালাই তন্দুরি চায়ে প্রয়োজন পড়ে আটটি আইটেম, চকলেট তন্দুরিতে নয়টি ও খির তন্দুরিতে ১০টি আইটেম। প্রতিদিন প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ কাপ চা বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া যে কোনো দিবসে এর চেয়েও বেশি বিক্রি হয়। তার রেস্টুরেন্টে ছয়জন কর্মী রয়েছে। এর মধ্যে শুধু চা তৈরি করে তিনজন। তান্দুরি রেগুলার ২০ টাকা, তান্দুরি স্পেশাল ৪০ টাকা, তান্দুরি স্পেশাল মালাই ৫০ টাকা, তান্দুরি স্পেশাল চকলেট, স্বর মালাই, রস মালাই ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

তন্দুরি চা খেতে আসা বাপ্পা জানান, 'তন্দুরি চা খেতে বেশ সু-স্বাদু হওয়ায় আমি মাঝে মাঝে কাজের ফাঁকে এখানে আসি। এখানকার পরিবেশের সঙ্গে চা-টা বেশ মানায়। এখানে এসে অবসর সময়ে নিজেকে একটু রিফ্রেশ করে নেই।

মামুন বলেন, 'আমি কলকাতার এক বন্ধুর কাছে শিখেছি তন্দুরি চা কিভাবে তৈরি করে। সে আমাকে রেসিপিগুলো দিয়েছে। সেখান থেকে আমি মোটামুটি সব রেসিপি সংগ্রহ করা শুরু করেছি। প্রথমে যখন শুরু করি আমার বন্ধু আমাকে ভিডিও কলে সব বুঝিয়ে দেয়। তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে বেশিরভাগ অফিসিয়াল লোকজন আসে। এর মধ্যে শুক্রবার বন্ধের দিন হওয়ায় সেদিন সব চেয়ে বেশি মানুষের সমাগম হয়। তাছাড়া পাশেই গোলাপ গ্রাম। যারা গোলাপ গ্রামে ঘুরতে আসেন তারা একটুর জন্য হলেও এখানে বসে চা খেয়ে যান।'

সুস্বাদু এই চা খেতে যে কেউ চলে আসতে পারেন বিরুলিয়া, সাভার ও পলিস্নবিদু্যৎ এলাকায়। বিরুলিয়ায় আসতে হলে মিরপুর থেকে আলিফ অথবা মোহনা পরিবহনে উঠে বিরুলিয়া ব্রিজে নামলেই হবে। পলিস্নবিদু্যৎ এলাকায় আসতে হলে রাজধানী থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিয়ে সাভার হয়ে নবীনগর থেকে একটু সামনে এলেই তান্দুরি চায়ের দোকান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে