চট্টগ্রামে বেসামাল আতপ চালের বাজার!

প্রকাশ | ০৭ মার্চ ২০২১, ০০:০০

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

চট্টগ্রামে বেসামাল হয়ে পড়েছে আতপ চালের বাজার। ৫০ কেজির প্রতি বস্তা আতপ চাল এখন খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২শ' টাকা পর্যন্ত। যা গত ২০ দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২শ' টাকায়। ব্যবসায়ীদের মতে, বেসরকারিভাবে আমদানির অনুমতি না থাকায় আতপ চালের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। সিদ্ধ চাল আমদানির ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকায় এ চালের দাম কিছুটা নিম্নমুখী। আতপ চালের দাম কমাতে এই মুহূর্তে আমদানির অনুমতি চান ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামের এক চাল আমদানিকারক আব্দুল হান্নান শুক্রবার সন্ধ্যায় আলাপকালে একই কথা বলেন, চট্টগ্রামের অনেক ব্যবসায়ীর আবেদন সত্ত্বেও বেসরকারিভাবে আতপ চালের অনুমতি মেলেনি। সরকারি ঘোষণা অনুয়ায়ী আমদানিকৃত ১০ লাখ টন আতপ চালের মধ্যে ২০ হাজার টনের প্রথম চালান নিয়ে আল- মোথান্না নামে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের সাত নম্বর জেটিতে অপেক্ষমাণ। তবে এসব আতপ চাল খোলা বাজারের জন্য নয়। তিনি বলেন, পুলিশ,র্ যাব, বিজিবি, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার জন্য সরকারিভাবে এসব চাল আমদানি করা। ফলে চট্টগ্রামের খোলা বাজারে আতপ চালের চাহিদা পূরণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরবরাহ কম হওয়ায় আতপ চালের দাম প্রতিনিয়ত ঊর্ধ্বমুখী। সরকার এই মুহূর্তে বেসরকারি পর্যায়ে আতপ চালের অনুমতি দিলে অসাধু মিল মালিকরা বাধ্য হয়ে চালের দাম কমিয়ে দেবে। তাতে বাজারও নিয়ন্ত্রণ হবে। চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের প্রাণকেন্দ্র খাতুনগঞ্জের চালের আড়তদার আহসানুল করিম বলেন, চট্টগ্রামে আতপ চালের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। দেশের ৯০ ভাগ আতপ চাল চট্টগ্রামেই লাগে। কিন্তু করোনা প্রার্দুভাব ও ঘন কুয়াশার কারণে এবার চট্টগ্রাম বিভাগে আমন ধানের ফলন হয়েছে খুবই কম। ফলে খাতুনগঞ্জের চাল ব্যবসায়ীরা গাইবান্ধা, দিনাজপুর, আশুগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে আতপ চাল কিনে চট্টগ্রামে সরবরাহ করছে। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ টন আতপ চাল চট্টগ্রামে আসছে। তাতে চাহিদার এক তৃতীয়াংশও পূরণ হচ্ছে না। আগামী এপ্রিল পর্যন্ত আতপ চালের ঘাটতি থাকবে। আমদানি না হলে বা নতুন ফলন বাজারে না আসা পর্যন্ত চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, চালের আড়ত থেকে ট্রাকে উত্তোলন করা অধিকাংশই সিদ্ধ চাল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খাতুনগঞ্জে ভোরে এসে ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছেন এসব চাল। বর্তমানে পাইকারি বাজারে সিদ্ধ চাল ৫০ কেজির প্রতিবস্তা ২ হাজার ২শ' টাকা, আর আতপ চাল ২ হাজার ৪শ' থেকে ২ হাজার ৮শ' টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাতুনগঞ্জ চাল ব্যবসায়ী সমিতির তথ্যমতে, খাদ্য মন্ত্রণালয় সাত প্রতিষ্ঠানকে সিদ্ধ চাল আমদানির অনুমতি দেয়। কিন্তু আমদানিকারকরা আতপ চাল আমদানির আবেদন করেও সাড়া পায়নি। খাদ্য অধিদপ্তরের সংগ্রহ বিভাগের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, হ করোনার প্রাদুর্ভাব ও ঘন কুয়াশার কারণে এবার আমন ও বোরো ফলনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। তবে চাহিদা মেটাতে দেশের অভ্যন্তর থেকে গত তিন মাসে ১৪ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। দেশে এখনো আমন ধান বাজারে না আসায় সরকার চাল কিনতে পারছে না। তবে মিয়ানমার থেকে এক লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানি করার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ভারত থেকেও দেড় লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।