গণহত্যার শোকাবহ স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি

প্রকাশ | ০৭ মার্চ ২০২১, ০০:০০

সৈয়দ হাবিবুর রহমান ডিউক
রেল জংশনের পাশেই অরক্ষিত বধ্যভূমি -যাযাদি
বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসে এক করুণ অধ্যায় বধ্যভূমি। দেশের অনেক জায়গার মতো হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ রেল জংশনের পাশেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর গণহত্যার দলিল বধ্যভূমিটি এখনো অরক্ষিত। জানা যায়, ১৯৭১ সালের গণহত্যার এক শোকাবহ স্মৃতিচিহ্ন এই বধ্যভূমি। যেখানে পাক হানাদার বাহিনী লালচান চা-বাগানসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ১১ জনকে ধরে নিয়ে হত্যা করে গণকবর দেয়। তারা হলেন- অনু মিয়া, শ্রী কৃষ্ণ আউরি, জয়াজ কুমার, শ্রী বভাবরা বাউরি, শুনিলা বাউরি, নেপু বাউরি, লাল সাধু বাউরি, রাজেন্দ্র রায়, গফুর রায়, মহাদেব বাউরি ও দিপক বাউরি। সরেজমিনে দেখা যায়, শায়েস্তাগঞ্জ বধ্যভূমিটি রেল লাইনসংলগ্ন হওয়ায় রেল লাইন না পেরিয়ে সেখানে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ সড়ক থেকে বধ্যভূমিতে যাতায়াতের সুবিধার্থে একটি পাকা সড়ক নির্মাণ করা হলেও ওই সড়কটি এখন সিএনজি অটোরিকশার দখলে। এ সড়ক দিয়ে মানুষ চলাচলের কোনো পরিবেশ নেই। বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য একজন মুক্তিযোদ্ধা তার নিজস্ব অর্থায়নে ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। কিন্তু বধ্যভূমিতে গড়ে ওঠেনি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। শুধুমাত্র একটা সাইনবোর্ড বসানো রয়েছে। যার লেখাও অনেকটা মুছে গেছে। ভালো করে না দেখলে বুঝা যায় না যে, এটা বধ্যভূমির সাইনবোর্ড। আর কয়েকটা পাকা পিলার দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বাধীনতার ৪৯ বছরও পার হলেও এখনো অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে বধ্যভূমিটি। রক্ষণাবেক্ষণ কার্যালয়ের সামনে ১১ জন চা শ্রমিকের নাম-সংবলিত একটা ফলক থাকলেও তাও মুছে যাওয়ার উপক্রম। এ ব্যাপারে বধ্যভূমি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাবেক আহ্বায়ক শিপন মিয়া জানান, তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুস ছাত্তার বধ্যভূমির পাশে নিজের অর্থায়নে একটি মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় ভবন নির্মাণ করেন। বর্তমানে তিনি বধ্যভূমির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সহকারী কমান্ডার ও জেলা সাংগঠনিক ইউনিট কমান্ড বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে এ বধ্যভূমি স্বীকৃতি পেয়েছে এবং গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে পৌর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক ওই বধ্যভূমি রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে এই বধ্যভূমির পবিত্রতা রক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে রক্ষণাবেক্ষণ কর্তৃপক্ষ পাকা পিলার দিয়ে বধ্যভূমির সীমানা চিহ্নিত করে ঘিরে দিয়েছেন। এতে বধ্যভূমির সীমানা চিহ্নিত হলেও এর পবিত্রতা ও মর্যাদা নিশ্চিত হয়নি। এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে খুবই আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল। বধ্যভূমি সংরক্ষণে তারা দ্রম্নত পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তিনি বধ্যভূমি উন্নয়নে ও মুক্তিযুদ্ধ কমপেস্নক্স নির্মাণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে শিগগিরই চিঠি লিখবেন। আশা করছেন, দ্রম্নত সময়ে দেশের অন্যান্য উপজেলার মতো শায়েস্তাগঞ্জেও বধ্যভূমির উন্নয়ন হবে।