হাওড়ের মাঠে মাঠে সবুজের সমারোহ

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২১, ০০:০০

মন্তোষ চক্রবর্ত্তী, (অষ্টগ্রাম) কিশোরগঞ্জ
অষ্টগ্রামে হাওড়াঞ্চলের মাঠজুড়ে সবুজ ধানের ঢেউ -যাযাদি
কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সংযোগস্থলে বিস্তীর্ণ হাওড়। আর সেই হাওড়ে এখন সবুজের সমারোহ। হাওড়াঞ্চলের প্রতিটি মাঠে এখন বাতাসে সবুজ ধান গাছের দোলা। হাওড়ের তিন জেলাতে বোরো আবাদ হয়েছে ৪ লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে। অধিকাংশ জমিতে এখন ধানের শীষ বের হওয়ার অপেক্ষা। স্থানীয় কৃষক আর কিছুদিনের মধ্যেই সোনালী ধান কেটে গোলায় তুলবে। তাদের প্রত্যাশা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে, এ অঞ্চলে এবার বোরোর বাম্পার ফলন হবে। একই দাবি করছেন হাওড়ের তিন জেলার কৃষি কর্মকর্তারা। কিশোরগঞ্জের হাওড় অধু্যষিত অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন, বাজিতপুর, নিকলী, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, লাখাই, ব্রাহ্মণ-বাড়িয়ার সরাইল, নাছির নগর ইত্যাদি। এসব এলাকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ ভাগই একমাত্র ফসল বোরো উৎপাদন করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। বাকিরা জেলে, মৎসজীবী, কামারসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। এক জরিপে জানা যায়, এলাকার আবাদি ভূমির ৮০ ভাগের মালিক মাত্র ১৪ ভাগ মানুষ। বাকি ২০ ভাগ জমি ছোট ও মাঝারি প্রান্তিক ও বর্গাচাষি। একটি মাত্র ফসল ছাড়া বিকল্প কোনো কর্মসংস্থান না থাকায় এ অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই ভূমিহীন ক্ষেতমজুর ও শ্রমজীবী। কার্তিকে ধানের বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে হাওড়ের ধান কেটে গোলায় তোলা পর্যন্ত এসব শ্রমজীবী নর-নারী মজুরি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক কারণে এ অঞ্চলের প্রতিটি হাওরে প্রায় ৬ মাস বর্ষার পানি আটকে পলি পড়ে জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও প্রায় প্রতিটি হাওড়ের পাশেই রয়েছে কোনো না কোনো নদী, খাল, বিল বা বৃহৎ জলাভূমি। আর এসব জলাশয় থেকে সেচের পানি সরবরাহ করা হয়। এ অঞ্চলে উৎপাদিত বোরো ধানে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে একটি বড় অংশ জাতীয় খাদ্য ভান্ডারে যোগ হয়। হাওড় অঞ্চলের বড় হাওড়, বড়গোপ, বিলবলস্নী, গায়েলা, মেকুরা, লুগ্রা, মুগ্রা, কালনী, সুন্তিকালী, ছাইন্না, এলংজুরী, ঘাগড়া, ঢাকি, ধনপুর, পাহারপুর, আব্দুলস্নাহপুর, কুমড়ি, মৃগা, বামৈই, ডুবাজাইল, কাকরীয়া, শরীফপুর ঢালাকান্দি, বিলমাকশা, নাছিরপুর, চাতলপাড়, ভলাকুট, মাছমাসহ প্রতিটি হাওড়েই এবার বোরোর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এবার আবাদকৃত বোরো ধানের মধ্যে ব্রিধান-২৮, ব্রিধান-২৯, হীরা-সুপার হাইব্রিড, বি-আর ১৪ এবং ব্রিধান ৫৮, ব্রিধান-৮৮ সরকারিভাবে কৃষকদের দেওয়ায় হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদই বেশি হয়েছে। ব্রাক্ষ্ণনবাড়িয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: রবিউল হক মজুমদার জানান, এবছর জেলার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ। কিন্তু আবাদ হয়েছে ১লাখ ১০ হাজার ৮৯৬ হেক্টর জমিতে। ফলনও বাম্পার হবে বলে তিনি আশাবাদী। হবিগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো:তমিজ উদ্দিন খান জানান, ১ লাখ ২০ হাজার ৮শ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা ছিল কিন্তু আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে। কিশোরগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল আলম জানান, এই বছর কিশোরগঞ্জ জেলার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৬০ হেক্টর কিন্তু আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫০ জমিতে।