হবিগঞ্জের চা শিল্প হুমকিতে

দেখা মেলেনি গোল্ডেন শাওয়ারের বাগানে বৃষ্টি নেই গত পাঁচ মাস প্রতিটি বাগানে ৪০-৫০ হাজার কেজি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২১, ০০:০০

মো. নূরুল হক কবির, হবিগঞ্জ
বৃষ্টির অভাবে হবিগঞ্জের চা শিল্প এবার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এখন পর্যন্ত নতুন মৌসুম শুরু হয়নি। সেচের অভাবে গাছের পাতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দেখা দিয়েছে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ। চা বাগান সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সাধারণত মার্চের প্রথম দিকেই শুরু হয় চায়ের নতুন মৌসুম। ফেব্রম্নয়ারি ও মার্চ মাসের বৃষ্টিকে চা বাগানে বলা হয় 'গোল্ডেন শাওয়ার'। এ বছর গোল্ডেন শাওয়ারের দেখা তো মিলেইনি বরং গত পাঁচ মাস ধরেই কোনো বৃষ্টি হয়নি এখানে। মাধবপুর উপজেলার সুরমা চা বাগান ব্যবস্থাপক আবুল কাশেম যায়যায়দিনকে জানান, পাঁচ মাস ধরে বৃষ্টি নেই। পানির রিজার্ভারও শেষ হয়েছে। এজন্য সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অল্প সেচ দিয়ে কোনোভাবে নতুন লাগানো গাছগুলোকে রক্ষা করা হয়েছে। বৃষ্টি না হলে বাগানের বড় ধরনের ক্ষতি হবে। সাম্প্রতিককালে এ ধরনের অনাবৃষ্টির দেখা মিলেনি চা শিল্পে। চুনারুঘাট উপজেলার চানপুর চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক সরওয়ার রেজা চৌধুরী যায়যায়দিনকে জানান, এবার দেরিতে বৃষ্টি হওয়ায় এখন পর্যন্ত প্রতিটি বাগানের উৎপাদন ৪০ থেকে ৫০ হাজার কেজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টি আসতে বিলম্ব হলে এই ক্ষতি আরও বাড়বে। বিশেষ করে নতুন করে লাগানো গাছ এবং স্প্রুনিং করা গাছের ক্ষতি বেশি হচ্ছে। একই উপজেলার দেউন্দি চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক দেবাশীষ দাস যায়যায়দিনকে জানান, এখনো যদি বৃষ্টি আসে তাহলে ৮-১০ দিনের মাঝেই উৎপাদন শুরু করা যাবে। শনিবার জেলা শহরে ব্যাপক বৃষ্টি হলেও বাগান এলাকায় বৃষ্টির দেখা মিলেনি। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) পরিচালক মোহাম্মদ আলী যায়যায়দিনকে জানান, আগাম বৃষ্টি চা শিল্পের জন্য আনন্দময় প্রাপ্তি। এই সময়ে প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা মূল্যবান। নতুন কুঁড়ি গজানো ও চারা সুরক্ষার জন্য এই বৃষ্টি আশীর্বাদস্বরূপ। কিন্তু এবার আগাম বৃষ্টি পাওয়া যায়নি কোনো বাগানে। এখন পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় চা শিল্পের জন্য ভয়ানক হুমকি দেখা দিয়েছে। অনেক বাগানের নেই সেচের সুবিধা। আবার যাদের সুবিধা আছে তাদেরও পানির রিজার্ভার শেষ হয়ে গেছে। জানা গেছে, খরার কারণে চা বাগানগুলো লাল মাকড়শা বা রেড স্পাইডার রোগে আক্রান্ত হয়েছে। পাশাপাশি হেলোফেলটিস বা মশার আক্রমণও দেখা দিয়েছে পুরো চা বাগান এলাকাজুড়ে। বৃষ্টি আসতে বিলম্ব হলে রোগের প্রাদুর্ভাব আরও বেড়ে যেতে পারে। গত বছর বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ ৯ কোটি ৬৯ লাখ ৬২ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর এখনো লক্ষ্যমাত্রা সেভাবে চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে খরার কারণে এবার উৎপাদণের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চা শিল্প সংশ্লিষ্টরা।