চট্টগ্রাম, যশোর ও কুমিলস্নায় ১১ জনের ফাঁসির আদেশ

চট্টগ্রামে প্রবাসী হত্যায় ৯ জন যশোরে বোনকে হত্যায় ভাই ও কুমিলস্নায় এক আসামিকে হত্যায় অন্য আসামিকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে

প্রকাশ | ০৯ মার্চ ২০২১, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
দেশের ৩ স্থানে ১১ জনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে সোমবার। এর মধ্যে চট্টগ্রামে প্রবাসী হত্যা মামলায় ৯ জনের ফাঁসির রায় দেওয়া হয়। যশোরে বোনকে হত্যার দায়ে ভাই ও কুমিলস্নার আদালতে এক আসামিকে অন্য আসামির হত্যার দায়ে অপর একজনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিরা এ তথ্য জানিয়েছেন। আমাদের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার রাঙামাটিয়ায় নেছার আহমদ নামে এক প্রবাসীকে জবাই করে হত্যার দায়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। ৮ মার্চ সোমবার বিকেলে চট্টগ্রামের ৪র্থ অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফারজানা আক্তার এ আদেশ দেন। একই মামলায় আদালত প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা দেওয়ারও আদেশ দিয়েছেন। আদালতের পেশকার জহিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দন্ডিত আসামিরা হলেন- লেডা নাছির, জংগু, যোবায়ের, দিদার, বাবুল, নুরুল ইসলাম, আবু বক্কর প্রকাশ বাসিক, ইসমাইল ও শাহীন। দন্ডিত আসামিদের মধ্যে শাহীন নামে একজন ছাড়া অন্য ৮ জন আসামি পলাতক রয়েছেন। আদালত সূত্র জানায়, ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফটিকছড়ি উপজেলার রাঙামাটিয়ার বাসিন্দা লেডা নাছিরের কাছে ৫ হাজার টাকা পেতেন প্রবাসী নেছার আহমেদ ওরফে তোতা। এই টাকা ফেরত চাওয়ায় তার ওপর ক্ষিপ্ত হন লেডা নাছির। কৌশলে তাকে টাকা দেওয়ার নামে ডেকে নিয়ে দন্ডিত আসামিরা জবাই করে নেছারকে খুন করেন। পরদিন তার স্ত্রী মোর্শেদা আক্তার বাদী হয়ে ফটিকছড়ি থানায় আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ তদন্ত করে আরও দুইজনকে যোগ করে মোট দশজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় আদালতে। ২০০৭ সালের ২০ মার্চ দশজনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। এরই মধ্যে চার্জশিটভুক্ত আসামি কপাল কাটা নাছির মারা গেলে তাকে ছাড়াই বিচার কাজ চলে। মোট ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত ৪র্থ দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফারজানা আক্তার জীবিত ৯ আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃতু্যদন্ডের আদেশ দেন। স্টাফ রিপোর্টার, যশোর জানান, যশোরের মণিরামপুরে আপন বোনকে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে ভাইয়ের মৃতু্যদন্ডের আদেশ দিয়েছেন বিচারক। সোমবার যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (১ম) আদালতের বিচারক এমএ হামিদ এই াদেশ দেন। মৃতু্যপ্রাপ্ত আসামি আব্দুর রহিম (৩৮) মণিরামপুর উপজেলার বিজয়রামপুর গ্রামের এনায়েত আলীর ছেলে। যশোর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বিমল কুমার রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আদালত সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রম্নয়ারি জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে মণিরামপুরের বিজয়রামপুর গ্রামের এনায়েত আলীর ছেলে আব্দুর রহিম তার আপন বোন নূরজাহান বেগমকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডের বিষয়টি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সোমবার যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (১ম) আদালতের বিচারক এমএ হামিদ আসামি আব্দুর রহিমকে মৃতু্যদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন। রায় ঘোষণার পর আসামি আব্দুর রহিমকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বাদীপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন যশোর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বিমল কুমার রায়। অন্যদিকে, আসামিপক্ষে স্টেট ডিফেন্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অ্যাডভোকেট আহাদ আলী লস্কর। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বিমল কুমার রায় জানিয়েছেন, এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট। স্টাফ রিপোর্টার, কুমিলস্না জানিয়েছেন, কুমিলস্নায় একটি খুনের মামলার আসামি ফারুককে তার সহযোগী আসামি হাসান কর্তৃক বিচারকের খাস কামরায় উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে খুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ঘাতক হাসানকে ফাঁসির দন্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আতাব উলস্নাহ চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় দেন। এ সময় দন্ডপ্রাপ্ত আসামি হাসান আদালতে উপস্থিত ছিল। দন্ডপ্রাপ্ত হাসান জেলার লাকসাম উপজেলার ভোজপুর গ্রামের শহিদুলস্নাহর ছেলে এবং আদালতে হাসানের ছুরিকাঘাতে খুন হওয়া ফারুক জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দি গ্রামের অহিদুলস্নাহর ছেলে। তারা উভয়ে জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দি গ্রামের হাজী আবদুল করিম হত্যা মামলার আসামি। আদালত সূত্রে জানা যায়, সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে বিরোধের জেরে ২০১৩ সালের ২৬ আগস্ট খুন হন হাজী আবদুল করিম। এ মামলায় ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই কুমিলস্না অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতে হাজিরা দিতে আসেন মামলার দুই আসামি হাসান ও ফারুক। ওইদিন আদালতে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে আসামি হাসান একই মামলায় তার সহযোগী ফারুককে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে ঘাতক হাসানের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়েরের পর মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা ডিবির পরিদর্শক প্রদীপ মন্ডল একমাত্র আসামি হাসানকে অভিযুক্ত করে ২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট কুমিলস্না সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ১ নং আমলী আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। সোমবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আতাবউলস্নাহ এ হত্যা মামলায় ফারুকের ঘাতক আসামি হাসানের ফাঁসির দন্ডাদেশ দেন। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সেলিম ও এপিপি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম এবং আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকু ও অ্যাডভোকেট আ হ ম তাইফুর আলম।