শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
উপেক্ষিত করোনা বিধিনিষেধ !

ওড়াকান্দির ঠাকুরবাড়িতে লাখো মানুষের ঢল

এসএম নজরুল ইসলাম, গোপালগঞ্জ
  ১০ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০
কাশিয়ানীর ঠাকুরবাড়িতে শুক্রবার মহাবারুণী স্নানোৎসবে লক্ষাধিক ভক্ত

করোনা মহামারির কারণে প্রথম ধাপের মতো দ্বিতীয় ধাপেও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর ওড়াকান্দির ঠাকুরবাড়িতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ মহাবারুণী স্নানোৎসব বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ঠাকুরবাড়িতে শুক্রবার লক্ষাধিক মতুয়া ভক্ত হাজির হয়েছেন। যোগ দিয়েছেন স্নানোৎসব ও পূজা অর্চনায়।

স্থানীয় প্রশাসন ও ঠাকুরবাড়ির পক্ষ থেকে স্নানোৎসব বন্ধের নানা ধরনের চেষ্টার পরও লক্ষাধিক মতুয়া ভক্ত শুক্রবার সূর্য ওঠার আগেই হাজির হন। সেখানে তারা কামনা ও বাসনা সাগরে (বড় ধরনের পুকুর) স্নান করে তাদের বিগত দিনের পাপ মোচন ও আগামী দিনের সফলতার জন্য আশীর্বাদ কামনা করেন।

সবার ধারণা ছিল গত বছর এই দিনটি তারা কড়াকড়ির কারণে পালন হয়নি, এবারও হয়তো তাই হবে। তারপরও লক্ষাধিক মতুয়া ভক্ত এসব নির্দেশনা উপেক্ষা করে কাশিয়ানীর ওড়াকান্দিতে স্নানোৎসবে যোগ দেন। তবে প্রতিবছর এখানে ১০ থেকে ১৫ লাখ ভক্তের সমাগম ঘটে এ সময়।

শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ১২১৮ বঙ্গাব্দে ইংরেজি ১৮১১

খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ কাশিয়ানী উপজেলার সাফলীডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। হরিচাঁদ ঠাকুরের বাল্য নাম ছিল হরি ঠাকুর। কিন্তু ভক্তরা তাকে হরিচাঁদ নামেই ডাকতেন। পিতা যশোবন্ত ঠাকুরের পাঁচ ছেলের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। পরে পার্শ্ববর্তী ওড়াকান্দি গ্রামে বসতি গড়েন হরিচাঁদ ঠাকুর। সেখানে হরিচাঁদ ঠাকুরের অলৌকিকত্ব ও লীলার জন্য তিনি প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠেন।

শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১০তম জন্মতিথি উপলক্ষে শুক্রবার ওড়াকান্দি গ্রামের ঠাকুরবাড়িতে বারুণী স্নানোৎসব ও ৩ দিনব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। করোনা মহামারির কারণে স্থানীয় প্রশাসন দ্বিতীয়বারের মতো এটি বন্ধ করে দেয়। গত বছরও এ সময় করোনার প্রথম ধাপের সংক্রমণ ঠেকাতে এই উৎসব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। স্নানোৎসব বন্ধ করে দেওয়ায় এ বছর ঢাক, ঢোল, ডাঙ্কা, কাঁসি ও শিঙ্গার শব্দে রাস্তাঘাট আর ঠাকুরবাড়ি মুখরিত হয়ে ওঠেনি। কিন্তু লক্ষাধিক ভক্তের আগমনে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত ছিল।

প্রতিবছর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, চীন, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, ভুটান, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লাখ-লাখ পুণ্যার্থীর আগমন ঘটে এ বারুণী স্নানোৎসব ও মেলায়।

ঠাকুরবাড়ির সদস্য ও মেলা উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি শচীপতি ঠাকুর বলেন, করোনা ভাইরাস ঠেকাতে এ বছর বারুণী স্নানোৎসব ও মেলা অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, মতুয়া ভক্তদের আবেগকে তারা বন্ধ করতে পারেননি। বাধা উপেক্ষা করে হাজার হাজার মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে এসে হাজির হয়।

ঠাকুরবাড়ির অপর সদস্য ও কাশিয়ানী উপজেলা চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ বারুণী স্নানোৎসব ও মেলা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলেও যথারীতি শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে পূজা-অর্চনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেহেতু এ বছর বারুণী স্নানোৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হবে না, সে কারণে ভক্তদের তারা ঠাকুরবাড়িতে আসতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তাদের শত অনুরোধ উপক্ষো করে লক্ষাধিক মতুয়া ভক্ত ওড়াকান্দিতে ঠাকুরবাড়িতে স্নান উৎসবে মেতে ওঠে। পূজা অর্চনা করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে