বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
ডায়রিয়ার প্রকোপ

বরিশালে চিকিৎসা সংকট

বরিশাল অফিস
  ১৯ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের ভরসাস্থল ৫শ' শয্যার শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা হয় না যুব বা বয়স্ক ডায়রিয়া রোগীর। সেজন্য যেতে হয় ১শ' শয্যার জেলা সদর হাসপাতালে। সেখানেও একটি জীর্ণশীর্ণ ভবনে পুরো জেলাবাসীর জন্য বরাদ্দ মাত্র চারটি বেড। জেলাজুড়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এর বিপরীতে ভর্তি রয়েছে অর্ধশতাধিক রোগী। এই পরিস্থিতিতে তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল মাঠে তাঁবু টানানো হয়েছে। তবুও জেলা শহরের বৃহত্তম হাসপাতাল শের-ই-বাংলা কর্তৃপক্ষ শিশু ছাড়া ডায়রিয়ার কোনো রোগীর চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করছেন।

জেলার হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গরম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলাতে বাড়তে শুরু করেছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। দিনের শুরু থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে অর্ধশত রোগী আসছে ওই হাসপাতালেই। সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের শুরু থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। অথচ এ হাসপাতালে পুরুষ রোগীদের জন্য দুটি ও মহিলা রোগীদের জন্য দুটি সিট বরাদ্দ রয়েছে। বাড়তি রোগীদের চিকিৎসা দিতে ওয়ার্ডের ফ্লোর ও বারান্দায় সিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানেও জায়গার সংকুলান না হওয়ায় হাসপাতালের খোলা মাঠে তাঁবু টানিয়ে রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। তার ওপর দেখা দিয়েছে স্যালাইন সংকট। মার্চ মাসে যেখানে পাঁচ শতাধিক ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে সেখানে এপ্রিল মাসে এরই মধ্যে ভর্তি হয়েছে ৮ শতাধিক রোগী। বর্তমানে ভর্তি রয়েছে প্রায় ৬০ জন। অন্যদিকে বরিশালের ৫শ' শয্যার শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে না ডায়রিয়া আক্রান্ত কোনো বয়স্ক রোগী। শুধু ১২ বছর পর্যন্ত শিশুদের ভর্তি রাখছেন তারা। সেখানে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে।

সদর হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর স্বজন আনিচুর রহমান জানান, শের-ই-বাংলা হাসপাতালে যদি বয়স্কদের চিকিৎসা হতো তবে এখানে মাঠের মধ্যে গরম সহ্য করে মানবেতরভাবে থাকতে হতো না। আর অতিরিক্ত রোগী সামাল দিতে কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সরা হিমসিম খাচ্ছেন বলে দাবি করেন রোগীর স্বজনরা।

এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, 'শের-ই-বাংলা হাসপাতালের ডায়রিয়া আক্রান্ত বয়স্ক রোগীদের চিকিৎসা না দেওয়ার সিদ্ধান্তটি মোটেই সঠিক নয়। কেননা সদর হাসপাতালে সীমিত জনবল ও অবকাঠামো সংকট নিয়ে এতগুলো রোগীর সেবা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অতিরিক্ত রোগীদের জন্য একদিকে যেমন পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা নেই, তেমনি সীমাবদ্ধতা রয়েছে ওষুধেরও। ফলে চিকিৎসা দিতে গিয়ে ডাক্তার ও নার্সদের হিমসিম খেতে হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে সমস্যা সমাধানে বিষয়টি এরই মধ্যে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারকে অবগত করা হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন।'

অন্যদিকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, 'একটা সময় বরিশাল সদর হাসপাতাল শের-ই-বাংলা হাসপাতালের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তখন থেকে শিশু ডায়রিয়া রোগীদের শের-ই-বাংলা ও বয়স্কদের সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ইউনিট বরাদ্দ করা হয়। বছর দুই আগে সদর হাসপাতাল পৃথক হয়ে গেলেও শের-ই-বাংলা হাসপাতালে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় নতুন করে ডায়রিয়া ওয়ার্ড চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে শের-ই-বাংলা হাসপাতালে চলমান মেরামত কাজ শেষ হলে বয়স্কদের জন্য ডায়রিয়া ওয়ার্ড চালু করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে