করোনাভাইরাসের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে প্রচন্ড দাবদাহের মধ্যেই চলছে দেশের বিভিন্ন স্থানে বোরো ধান কাটার মহোৎসব। ভোর থেকে রাত অবধি সোনালি ধান ঘরে তোলার তাগাদায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কিষান-কিষানিসহ পরিবারের ছোট-বড় সবাই। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের চোখে-মুখে দেখা যাচ্ছে হাসির ঝিলিক।
আমাদের নেত্রকোনার স্টাফ রিপোর্টার জানান, নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চলে অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে শতাধিক কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মাধ্যমে চলছে ধান কাটার কাজ। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কায় জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে দ্রম্নতগতিতে চলছে এই ধান কাটা।
নেত্রকোনার মদন ও খালিয়াজুড়ির হাওড়াঞ্চলে সোমবার সকালে কৃষকদের ধানকাটা পরিদর্শন করে তাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে হাওড়াঞ্চলে ৭০ শতাংশ ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্তসংখ্যক শ্রমিক হাওড়াঞ্চলে ধান কাটছেন। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি অনুকূলে রয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম.এল সৈকত, মদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ, খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এস.এম আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
লাখাই (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কৃষি ভান্ডারখ্যাত হবিগঞ্জের লাখাইয়ে চলছে ইরি-বোরো ধান কাটার মহোৎসব। বাড়ির আঙিনা ও ধান শুকানোর খলায় মাড়াইকৃত ধান শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন এলাকার কিষান-কিষানিরা।
মাহে রমজানের রোজা রেখে মহামারি করোনাভাইরাসের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে প্রচন্ড দাবদাহের মধ্যেই ইরি-বোরো ধান ঘরে তুলতে আশাবাদী কৃষক।
শুরুতে খরাজনিত কারণে জমির ফসলের কিছুটা ক্ষতি হলেও বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা ছাড়াই এবার ধান সংগ্রহ শেষ হবে বলে সরেজমিনে আলাপে আশাবাদ ব্যক্ত করেন কৃষকরা।
প্রকৃতি এবং আবহাওয়া অনুকূলসহ বাম্পার ফলনের ধারা অব্যাহত থাকলে লাখাই উপজেলায় প্রায় ৭৫ হাজার মেট্ি্রক টন ধান উৎপাদন সম্ভব হবে বলে আশাবাদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলার প্রায় ১১ হাজার ২ শত ৮০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদ হয়েছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এক হাজার হেক্টরের অধিকতর জমির ধান কর্তন চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। ইতিমধ্যে উপজেলার হাওড় অঞ্চলে উফশী জাতের ব্রি ধান ২৮ ও হাইব্রিড ধান কর্তন করা হয়েছে। উফশী ২৮ জাতে প্রায় হেক্টর প্রতি ৬-৬.৫ টন ফলন পাওয়া গেছে।
এছাড়াও পরীক্ষামূলক শস্য কর্তন করে ব্রি ধান ২৯ জাতের ৮ টনের বেশি ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অমিত ভট্টাচার্য্য।
আনুষ্ঠানিক বোরো ধান কর্তন উৎসবের কথা উলেস্নখ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুসিকান্ত হাজং জানান, নিয়মিত ফসলি জমি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, মহামারি করোনার বিষয় মাথায় রেখে কৃষকের দুর্ভোগ লাঘবে এবং স্থানীয় শ্রমিক সংকট নিরসনে এবারও উপজেলায় রংপুর, কুড়িগ্রাম, পাবনা, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলা থেকে উলেস্নখযোগ্যসংখ্যক শ্রমিক এসে ধান কাটার কাজে যুক্ত হয়েছেন। তাছাড়া কৃষিতে আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকায়নের অংশ হিসেবে ফসলের মাঠে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৭টি কৃষিযন্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে।
তিতাস (কুমিলস্না) প্রতিনিধি জানান, তিতাসে বোরো ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। ভোর থেকে রাত অবধি সোনালি ধান ঘরে তোলার তাগাদায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কিষানিসহ পরিবারের ছোট-বড় সবাই। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকের চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক দেখা গেলেও বৈরী আবহাওয়া আশঙ্কায় সংশয় কাজ করছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ২৭টি বস্নকে চলতি বোরো মৌসুমে আগাম নতুন জাত হিসেবে বি-ধান-৮১ ও বি-ধান-৮৮ এবং পুরাতন জাত হিসেবে বি-ধান-২৮ ব্যাপক হারে চাষ করা হয়েছে। উপজেলায় এবার ৬ হাজার ৭শ ৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও চাষাবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৭শ ১০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ কম হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার চারা থেকে শুরু করে পানি সরবরাহ, রক্ষণাবেক্ষণে শ্রমিক, কীটনাশক ও সারের কোনো সংকট ছিল না। এছাড়া আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে আছে। আগামী কয়েকদিন এ অবস্থায় থাকলে কৃষক ভালোভাবে সোনালি ফসল ঘরে তুলতে পারবে।
স্থানীয় কাপাশকান্দি গ্রামের কিষানি মিনারা খাতুন বলেন, ধান ঘরে তুলতে গিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে পানির সংকট। ধান ভিজানো ও সিদ্ধ করার কাজে প্রচুর পানি লাগে। আশপাশের জলাশয় ও ডোবা-নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ সংকট আরও প্রকট হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সালাহউদ্দিন জানান, স্থানীয় জাতের ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। বোরো ফসল উৎপাদন বাড়াতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার কৃষক বেশ লাভবান হবেন।