করোনায় করণীয়

সংক্রমণ-মৃতু্য কমাতে দরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন

প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

যাযদি রিপোর্ট
ডা. শাহ মুনির হোসাইন
দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে বিদেশ ফেরত অনেককে কোয়ারেন্টিনে রাখা হলেও পরবর্তীতে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগতদের কোয়ারেন্টিনে রাখতে না পারার কারণে করোনা ব্যাপকহারে ছড়িয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. শাহ মুনির হোসাইন। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে যে ব্যর্থতা সেটা প্রমাণ করে যে স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে অন্যান্য খাতের সমন্বয় নেই। সংক্রমণের শুরুতেই কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করে আইসোলেশন নিশ্চিতের মাধ্যমে সংক্রমণ ঠেকানো যায়নি উলেস্নখ করে শাহ মুনির হোসাইন বলেন, এখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে পড়ায় তা আর সম্ভব নয়। তিনি বলেন, প্রথমে দেশে যে লকডাউন ছিল, সেটা আসলে সাধারণ ছুটি ছিল। এতে লকডাউনের ফল পাওয়া যায়নি। সংক্রমণের হার চিহ্নিত করে রেডজোন, ইয়েলো জোন গ্রিন জোনের প্রস্তাব দেওয়া হলেও 'জীবন নাকি জীবিকা'র প্রশ্ন তুলে নীতিনির্ধারকরা সেটা নিয়ে উলেস্নখযোগ্যভাবে কাজ করেননি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন এসে যায়, নীতিনির্ধারক কারা? তারা কি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ? তারা কি চিকিৎসক? নাকি তারা প্রশাসক, আমলা বা রাজনৈতিক নেতা? টেকনিক্যাল এক্সপার্টদের উপদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা থাকলেও কখনোই তা করা হয়নি। অথচ সংক্রমণ-মৃতু্য কমাতে শুরু থেকেই সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে বাস্তবায়ন দরকার ছিল। করোনা মোকাবিলায় সরকারি এবং বেসরকারি খাত ভিন্নভাবে কাজ করছে দাবি করে ডা. শাহ মুনির হোসাইন বলেন, এ দুই খাতের কাজ করার ধরনের পার্থক্য বিশাল। এ বিষয়ে নজর দেওয়ারও প্রয়োজন ছিল। এনজিওদেরও সেভাবে সম্পৃক্ত করা যায়নি। বেসরকারি হাসপাতালগুলো সেবা নয়, বাণিজ্যিক দিকটাই বেশি দেখেছে। শুধু চিকিৎসকই নন, তৃণমূলের স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবন দিয়ে কাজ করে গেলেও সেভাবে তাদের কোনো প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। সব মিলিয়ে শুরু থেকেই সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারলে সংক্রমণ ও মৃতু্য অনেক কমানো যেত। তিনি বলেন, এখন সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে আগেই বলা হয়েছিল এরকম হতে পারে। অথচ ফেব্রম্নয়ারিতে যখন দেশে সংক্রমণ ও মৃতু্যর হার অনেক কমে গিয়েছিল তখন রাজনৈতিক নেতৃত্ব জনগণকে এমন বার্তা দিলেন যে, সংক্রমণ প্রায় শূন্য, করোনাকে জয় করার পথে। সাধারণ মানুষের ওপর এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে এবং তারা স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা কখনোই জনস্বাস্থ্যকেন্দ্রিক না হওয়াটাও এসবের পেছনে একটা বড় কারণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক এই মহাপরিচালক মনে করেন, অন স্পট রেজিস্ট্রেশন বা স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবন্ধন করা কিংবা কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে নিবন্ধনের ব্যবস্থা টিকা প্রক্রিয়ায় অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখত। তার মতে, মানবসম্পদ ঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পারলে শহর অঞ্চলে যে হারে টিকা দেওয়া যাচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেভাবে দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি কোভ্যাক্স থেকে প্রতিশ্রম্নত টিকা পাওয়া গেলে এবং সেরাম থেকে ক্রয় করা মোট টিকা পাওয়া গেলে সেগুলো মজুত করার ব্যবস্থা আছে কিনা তা নিয়েও ভাবতে হবে। কেন টিকা নিতে হবে সে সম্পর্কে মানুষকে বোঝাতে হবে। টিকা নিয়েও অনেকে মারা যাচ্ছেন- এমন প্রসঙ্গে ডা. শাহ মুনির হোসাইন বলেন, প্রথম ডোজ নেওয়ার পরই কেউ পুরোপুরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেন না। দুই ডোজ নেওয়ার পরও কোনো টিকাই শতভাগ নিরাপত্তা দিতে পারে না। কিন্তু টিকা নিলে মৃতু্যর সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। টিকা নিলে বস্নাড কট হওয়ার সম্ভাবনা নাম মাত্র। না নিলে সে সম্ভাবনা বহুগুণ বাড়ে। তিনি বলেন, মানুষ যেন টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আতঙ্কিত না হয় সেজন্য তাদের সচেতন করতে হবে। টিকা সংক্রান্ত কমিউনিকেশন আরও জোরদার করতে হবে। সর্বোপরি করোনাভাইরাস সংক্রমণ-মৃতু্য কমাতে দরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা তথা মাইক্রোপস্ন্যানিং, মানবসম্পদ উন্নয়ন, বেসরকারি খাত এবং এনজিওগুলোকে সম্পৃক্তকরণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন।