শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ উদ্‌যাপনে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত নগরবাসী

রেজা মাহমুদ
  ১১ মে ২০২১, ০০:০০
রাজধানীর একটি শপিংমলে কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা

ক'দিন পরই ঈদ! এদিকে দেশে শনাক্ত হয়েছে করোনার প্রাণঘাতী 'ভারতের ভ্যারিয়েন্ট'। এ অবস্থায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল, মার্কেট ও ফুটপাতে ক্রেতাদের ভিড় দেখে তা বোঝার উপায় নেই। করোনা ভয় ছাপিয়ে এসব মার্কেটে চলছে ঈদ উদ্‌যাপনের জমজমাট প্রস্তুতি। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত নগরবাসী।

কঠোর বিধিনিষেধ ও করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে শেষ মুহূর্তে জমজমাট এবারের ঈদ বাজার। সকাল থেকে রাত অবধি সরব রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল ও বিপণি বিতানগুলো। প্রখর রোদের মধ্যেও থেমে নেই ফুটপাতের বেচাকেনা। তবে সর্বক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে নামমাত্র স্বাস্থ্যবিধি। রাত ৮ পর্যন্ত শপিংমল কিংবা দোকান খোলা রাখার কথা থাকলেও বিক্রি নেই এমন অজুহাতে তা মানছে না কেউ। বেশ কয়েকদিন ধরেই রাত ১১টা, এমনকি ১২টা পর্যন্ত রাজধানীতে অনেক শপিংমল ও মার্কেট খোলা রাখতে দেখা গেছে।

এবারের ঈদে জামা-কাপড়ের দোকান বিশেষ করে শিশু ও নারীদের পণ্যের বিক্রি বেশ ভলো। তবে তুলনামূলক ভিড় কম ছিল ঘড়ি কিংবা জুতার মতো পণ্যের দোকানে। এদিকে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় মার্কেটে প্রবেশে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এছাড়া নামিদামি সব ব্র্যান্ডের ফ্যাশন হাউসগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। এ দিন ধানমন্ডি ২৭ নম্বর আড়ংয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা রাস্তায় লাইনে দাঁড়িয়ে প্রবেশ করতে হয়েছে ক্রেতাদের। ভেতরে ছিল না তিল ধারণের জায়গা। শুধু আড়ং নয়, এদিন ক্রেতা-দর্শনার্থীতে ঠাসা ছিল ধানমন্ডি এলাকার প্রায় সব শপিংমল ও মার্কেট।

এদিকে, ঈদের আগ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছে ঢাকা নিউমার্কেট, গাওছিয়া, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটসহ এলিফ্যান্ট রোডের বিভিন্ন দোকানের কর্মচারী। যথারীতি গাওছিয়া ও চাঁদনী চকে গা ঘেঁষেই চলেছে বেচাকেনা। নিউমার্কেটের পরিবেশ তুলনামূলক একটু ভালো, তবে অধিকাংশ বিক্রেতার মুখেই ছিল না কোনো মাস্ক। এদিকে চরম ঝুঁকি সত্ত্বেও শিশুদের নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন অনেক অভিভাবক।

বিভিন্ন মার্কেটে আসা ক্রেতারা জানান, গত বার ঈদেও করোনার প্রকোপ থাকায় পরিবারে সদস্যদের জন্য কোনো কিছু কেনা হয়নি। এছাড়া বাড়ির ছোট সদস্যদের অবদার পূরণে বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেও কেনাকাটা করতে অনেকটা বাধ্য হচ্ছেন তারা। তবে অনেক ক্রেতা শুধু ঘুরে ঘুরে দেখছেন, যদি পছন্দ হয় কিনবেন আর না হলে বাড়ি চলে যাবেন। আর বিক্রেতারা বলছেন, স্বাভাবিক ঈদ বেচাকেনার অর্ধেক পরিমাণও এবার নেই। তবে গত দু-একদিন ধরে বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। বিভিন্ন শপিংমল ও মার্কেটে নতুন সব ফ্যাশন উদ্যোক্তা বিভিন্ন রকম ছাড় দিয়েও ক্রেতা টানতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

এসব প্রতিষ্ঠানের বিক্রেতারা জানান, স্বাভাবিক সময়ে সবাই জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডের পাশাপাশি এসব নতুন ব্র্যান্ডের পণ্য দেখতেন এবং বিক্রিও হতো। কিন্তু করোনার কারণে সবাই স্বল্পসময় নিয়ে মার্কেটে আসেন। তাই এসব নতুন ফ্যাশন হাউসে বেচাকেনা একবারেই নেই বললেই চলে। তবে চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে জমজমাট অনলাইন কেনাবেচা। ফেসবুক পেইজভিত্তিক বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসসহ দারাজের মতো প্রতিষ্ঠিত অনলাইন শপিং হাউসের বেচাকেনা কয়েক গুণ বেড়েছে। করোনা সংক্রমণ এড়াতে ও নিজের পছন্দের পণ্য কিনতে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই ঈদ বাজার করছেন অনলাইনে। যদিও পণ্যের দাম বেশিসহ মান ভালো নয় এমন অভিযোগও কম নয়। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে ফুটপাতের বেচাকেনা।

এদিন প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করেই ফুটপাতের দোকান থেকে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত অনেকের কেনাকাটার প্রধান পছন্দ হয়ে উঠেছে রাজধানীর ফুটপাত থাকা অস্থায়ী দোকানগুলো।

নিউমার্কেটসহ আশপাশের ফুটপাতগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় ছিল উলেস্নখযোগ্য। সিটি করপোরেশন মার্কেটের আশপাশে খালি ফুটপাতগুলো এখন গমগম করছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায়। শত শত মানুষ ভিড় করছেন তুলনামূলক কম দামে পণ্য কেনার জন্য। সারাক্ষণই হাঁকডাকে সরগরম প্রতিটি দোকান। এসব ব্যবসায়ী যেন দম ফেলার সুযোগ পাচ্ছেন না। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে তাদের বিক্রিও ততই বাড়ছে। এমনকি ফুট ওভারব্রিজের ওপরে শত শত হকার তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। বিক্রেতারা জানান, বিক্রি ভালোই হচ্ছে। পুলিশি কড়াকড়ি নেই তেমন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দূরপালস্নার যান চলাচল বন্ধ থাকায় ঈদে গ্রামে ফিরছে না মানুষ। এজন্য তারা কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছেন। মানুষ গ্রামে ফিরলে ফুটপাতে বিক্রি আরও ভালো হতো। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীজুড়ে প্রায় অর্ধশত রাস্তার ফুটপাতে চলছে ঈদের কেনাবেচা।

তবে রাজধানীর চকবাজারের পাইকারি বেচাকেনায় এবার মন্দা। আন্তঃজেলা যাতায়াত বন্ধ থাকায় মফস্বলের খুচরা ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় আসতে পারেননি। লকডাউনে দোকান-পাট খোলার অনুমতি মিললেও হতাশ ব্যবসায়ীরা। এসব ব্যবসায়ী জানান, তাদের পণ্যের মূল ক্রেতা মফস্বলের খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা এবার ঢাকায় না আসতে পারায় ব্যবসা একেবারেই মন্দা। কুরিয়ারে কিছু কাস্টমারের পণ্য পাঠিয়েছি। তবে এসব ফেন্সি পণ্য ব্যবসায়ীরা দেখেশুনে কিনতে পছন্দ করেন। কুরিয়ারে পণ্য নিতে ভরসা পান না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে