খালেদা জিয়ার করোনা-পরবর্তী জটিলতা দেখা দিচ্ছে

ঈদ কাটবে হাসপাতালে

প্রকাশ | ১১ মে ২০২১, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
খালেদা জিয়া
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া করোনামুক্ত হলেও এখনো সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত নন। শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও করোনা পরবর্তী জটিলতা দেখা দিচ্ছে। শারীরিক এই অবস্থার কারণে ঈদুল ফিতরেও তাকে হাসপাতালে কাটাতে হবে। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, 'খালেদা জিয়ার মতো বয়সি রোগীর করোনা পরবর্তীতে নানা জটিলতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এছাড়া ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) আগে থেকেই বেশ কিছু রোগ আছে। জেলখানায় যাওয়ার পর সেগুলো আরও বেড়েছে। সব মিলিয়ে ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ভালো বলা যাবে না।' বিএনপির একটি সূত্র জানায়, বিদেশে যাওয়া জন্য অনুমতি না মিললেও এখনো আশা ছাড়েনি দলের নেতাকর্মীরা। শেষ পর্যন্ত বেগম জিয়ার বিদেশ যাওয়া না হলে এভার কেয়ারের সিসিইউতেই আপাতত তার থাকতে হবে। ঈদুল ফিতরও কাটবে হাসপাতালে। বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও অবস্থা নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেছে। কারণ, খালেদা জিয়া পোস্ট কোভিড জটিলতায় ভুগছেন। করোনা পরবর্তীতে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। তার এখন দিনে ২-৩ লিটার অক্সিজেন লাগছে। রক্ত দেওয়ায় হিমোগেস্নাবিনের মাত্রাও কিছুটা বেড়েছে। এখন তিনি স্বাভাবিক খাবার খাচ্ছেন। তার ফুসফুস থেকে তরলজাতীয় পদার্থ (ফ্লুইড) দুই দফা অপসারণ করা হয়। তার ডায়াবেটিস এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এদিকে উন্নত চিকিৎসায় বিএনপি চেয়ারপারসনের বিদেশ যাওয়া আটকে যাওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারাও এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। পরবর্তী করণীয় কী হবে- এ নিয়ে পরিবারের পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা শলাপরামর্শ করছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নিন্দা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরকার অনুমতি না দেওয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে অমানবিক ও নিবর্তনমূলক বলেও দাবি করেছে তারা। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক এক বিবৃতিতে বলেন, 'অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে না দেওয়ার সরকারের সিদ্ধান্তটি অবশ্যই অমানবিক ও নিবর্তনমূলক। এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য মানবিক আহ্বান জানাচ্ছি।' নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এক বিবৃতিতে বলেন, 'বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা এবং তার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার বিষয় নিয়ে গত কয়েকদিনে সরকারের পক্ষ থেকে যা করা হয়েছে তাতে আমি বিস্মিত এবং উদ্বিগ্ন। সাজাপ্রাপ্ত আসামির বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে আইনি বাধার কথা আইন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, তার ব্যত্যয় ঘটিয়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামির বিদেশে চিকিৎসার নজির এ দেশে রয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হবার পরও জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রবকে ১৯৭৯ সালে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে পাঠানো হয়েছিল। এক্ষেত্রে মানবিক বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছিল সবার আগে। বেগম জিয়ার ক্ষেত্রেও তেমনটি আমি আশা করেছিলাম।' ২০ দলীয় জোট শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির (একাংশ) সভাপতি আবদুল করিম আব্বাসী ও মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো এই সরকার কতটা অমানবিক। গোটা রাষ্ট্র ও সংবিধানকে তারা দলীয় হাতিয়ারে পরিণত করেছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তাকে তারা ভয় পায়। ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি এক বিবৃতিতে বলেন, খালেদা জিয়া এমন কোনো মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামি নন। তার প্রতি মানবিক হোন। তিনি বয়স্কা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তার ভূমিকা আছে। আশা করি, সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিবে। খালেদা জিয়ার করোনার ভুয়া রিপোর্ট ভাইরাল হয়েছে- দাবি বিএনপির খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেছেন, খালেদা জিয়ার যে রিপোর্টটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা সরকারের লোকজনের মুখে ছড়িয়েছে সেটা মূলত ভুয়া। এই রিপোর্টের সত্যতা যাচাই করার জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এটার সত্যতা মিলত বলেও তিনি জানান। বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খালেদা জিয়ার কোভিড প্রতিবেদনটিতে জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ১৫ আগস্ট ১৯৪৬। আর যে রিপোর্টটি অনলাইনে ছড়ানো হয়েছে সেখানে জন্ম তারিখ দেখা যাচ্ছে ৮ মে ১৯৪৬। এছাড়া ল্যাবএইড থেকে পাওয়া রিপোর্টের নম্বর- ১২১০৫৯৫৮৩৫৮। আর যে রিপোর্টটি অনলাইনে ছড়ানো হয়েছে সেটির রিপোর্ট নম্বর হচ্ছে- ১২১০৫৯৫৮৫৩৫। তবে ইনভয়েস নম্বর ও বারকোড একই।