আজও ঘণ্টার শব্দ শুনে ইফতার করে যে গ্রামের মানুষ

প্রকাশ | ১১ মে ২০২১, ০০:০০

ইউনুছ আলী আনন্দ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা সদরের চেয়ারম্যানপাড়া। আজও ইফতারের সময় হলে এখানে লোহার ঘণ্টা বাজানো হয়। এই ঘণ্টার শব্দ শুনেই ইফতার করে এখানকার মানুষ। যদিও ইফতারের সময় এখানকার মসজিদগুলোতে আজান হয়। কিন্তু চেয়ারম্যান পাড়ায় ঘণ্টা বাজানোর সেই পুরনো ঐতিহ্য ধরে রেখেই ইফতার করেন এখানকার বাসিন্দারা। এখানকার পাকা এক ফালি লোহার ঘণ্টাটির বয়স অর্ধশত বছরেরও বেশি। এই ঘণ্টায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে এর আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে চারিদিক। এ আওয়াজ শুনেই ইফতার করেন এখানকার মানুষ। যদিও ঘণ্টাটি বছরের অন্য সময় স্থানীয় মোক্তবের কাজেও ব্যবহার করা হয়। জানা গেছে, একসময় কুড়িগ্রামের জনপদের মসজিদগুলোতে মাইক ছিল না। তখন রমজান এলেই সেহরি ও ইফতারের সময় জানান দেওয়ার জন্য পটকার বিস্ফোরণ ও লোহার ঘণ্টা বাজানো হতো। ঘড়িতে সময় দেখে ইফতার ও সেহরির নির্ধারিত সময়ে দশ গ্রামের মানুষকে জানান দেওয়ার জন্য এই পন্থা অবলম্বন করা হতো। যুগের পরিবর্তনে বর্তমানে মসজিদগুলোতে মাইকের ব্যবহার শুরু হলে লোহার ঘণ্টা বাজানোর গুরুত্ব হারিয়ে যায়। তবে এখানকার সর্বত্র মাইকের ব্যবহার শুরু হলেও চেয়ারম্যান পাড়ায় সেই পুরনো ঐতিহ্য ধরে রেখেই বাসিন্দারা ঘণ্টার শব্দ শুনে ইফতার করছেন। চেয়ারম্যান পাড়ার সমন্বিত ৩ গ্রাম পানিমাছকুটি, বিদ্যাবাগীশ ও কুটিচন্দ্রখানা গ্রামের অসংখ্য মানুষ ইফতারের সময় ঘনিয়ে এলে কান পেতে থাকেন কখন ঘণ্টা বাজানো হবে। স্থানীয় কিশোর খোরশেদ আলম জানান, 'আমরা যখন ঘণ্টার শব্দ শুনতে পাই তখন ঘরে ছুটে যাই ইফতার করার জন্য। ঘণ্টা বাজানোর শব্দটি অনেক দূর ছড়িয়ে পড়ে।' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংগ্রামী মোহন উচ্ছ্বাস বলেন, 'আমি আমার দাদার বাড়ি চেয়ারম্যান পাড়ায় এটি দেখে অবাক হয়েছি। এখানকার মানুষ সেই পূরণো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।' স্থানীয় গৃহবধূ মোক্তারা বেগম জানান, আমরা বেল বাজানোর শব্দ শোনার পরেই ইফতার করে থাকি। এখানে ঘণ্টার আওয়াজ ও আজান এক সময়েই হয়। এতে সঠিক সময়ে ইফতার করার সুযোগ হয় বলেও মনে করেন ওই গৃহবধূ। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ নুর জামাল মিয়া বলেন, এটি আমাদের পুরনো ঐতিহ্য। পাকা লোহার ঘণ্টায় হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি মারলে বহু দূর থেকে বেলের আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে।