শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম থেকে বাধাহীনভাবে চলছে দূরপালস্নার বাসও!

চট্টগ্রাম অফিস
  ১১ মে ২০২১, ০০:০০

করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কারণে গত ১৪ এপ্রিল থেকে লকডাউন চলছে সারাদেশে। এর মধ্যে ঈদের কারণে শপিংমল ও সিটির মধ্যে গণপরিবহণ চলাচলের অনুমতি দিলেও দূরপালস্নার বাস চলাচল বন্ধের নির্দেশনা দেয় সরকার।

কিন্তু সেই নির্দেশনা অমান্য করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা-সিলেট, কক্সবাজার, রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় রাতের আঁধারে চলাচল করছে দূরপালস্নার বাস। অভিযোগ উঠেছে, ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করেই চালানো হচ্ছে এসব দূরপালস্নার বাস।

রোববার দিনগত রাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর এ কে খান ও গরিবুলস্নাহ শাহ এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে বাসশ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য মিলেছে। গত চার-পাঁচ দিন ধরে এভাবে দূরপালস্নার বাস চলাচল করছে বলে জানান শ্রমিকরা।

চট্টগ্রাম মহানগরীর এ কে খান মোড়ে রোববার রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা-ঢাকা বলে যাত্রী ডাকছিলেন এক বাস শ্রমিক। নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাম জেনে কাজ কী! টিকিট লাগবে কিনা বলেন।

কোন বাসের টিকিট বিক্রি করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্যামলী বাসের এসি, নন-এসি দুটোরই টিকিট আছে। ঢাকায় যেতে নন-এসি বাসে ৯০০ ও এসি ১ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। অথচ স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে নন-এসি বাসে ৪৮০ টাকা ও এসি বাসে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হয়।

দ্বিগুণ ভাড়া কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে গাড়ি চালানোর অনুমতি নিতে হয়। হাজারের নিচে টাকা দিলে পুলিশ গাড়ি ছাড়তে দেয় না। ভাড়া বেশি না নিয়ে তো উপায় নাই। এ সময় প্রায়ই বন্ধ শ্যামলী কাউন্টারের গেট দিয়ে ভেতরে অনেক যাত্রীর উপস্থিতি দেখা যায়।

আরমান নামে সৌদিয়া কাউন্টারের এক টিকিট বিক্রেতা বলেন, বিজনেস ক্লাস ও ইকোনমি ক্লাস দুটো গাড়িতেই ঢাকায় যাওয়া যাবে। একটি গাড়ি রাত সাড়ে ১১টায় আরেকটি ১২টায় ছাড়া হবে।

পুলিশ ধরবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ মাঝে মাঝে চেক করে, মাঝে মাঝে করে না। আপনি যাবেন কিনা সেটা বলেন। আমাদের অনুমতি নেওয়া আছে।

এ সময় নগরীর এ কে খান মোড়ে রাস্তার বিভিন্ন পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা ছিল অনেকগুলো বাস। এসব বাসের সামনে লাগানো ছিল অতি জরুরি বিদেশগামী বিমানযাত্রী পরিবহণ, পুলিশ ইত্যাদি স্টিকার। যেগুলোতে সরাসরি উঠে যাচ্ছেন যাত্রীরা। এছাড়া নগরীর গরীবুলস্নাহ শাহ থেকে যারা টিকিট কাটছেন, তাদের মাইক্রোবাসে করে এ কে খান পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে এ কে খান থেকে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারের পাশাপাশি ট্রাক, পিকআপেও চট্টগ্রাম ছাড়ছে অসংখ্য মানুষ।

এ কে খান মোড়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইন্সু্যরেন্স কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি চট্টগ্রামে চাকরি করি। ঢাকায় আমার মা খুব অসুস্থ। তার ওপর সামনে ঈদ। তাই পরিবার নিয়ে একসঙ্গে ঢাকায় যাচ্ছি।

কীভাবে যাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দূরপালস্নার বাস তো চলছে। কাউন্টারগুলো বন্ধ হলেও বাইরে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। সেখান থেকে এস আলম পরিবহণে ৯০০ টাকা করে নন-এসি টিকিট নিয়েছি। স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া ৪৮০ টাকা। লকডাউনকে পুঁজি করে তারা দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে।

রাত ১২টায় এ কে খান মোড়ে এসে থামে ঢাকা ছেড়ে আসা আর এম ট্রাভেলসের একটি বাস। সারিবদ্ধভাবে বাস থেকে নামছেন যাত্রীরা। ওই বাসের যাত্রী এনাম হায়দারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, লেখাপড়ার জন্য ঢাকায় থাকি। মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করতে চট্টগ্রামে এসেছি। পথে দুইবার গাড়ি আটক করেছিল পুলিশ। দুবারই টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছে। বাড়তি ভাড়া দিলেও বাসটি তেমন আরামদায়ক ছিল না।

যাত্রা পথে বিরতিতে বিভিন্ন হোটেলের সামনে দূরপালস্নার বাস ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাসভর্তি যাত্রী নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যাচ্ছে বাসগুলো। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, কুমিলস্না, সিলেট, রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গের দিকে ছুটে চলা অসংখ্য দূরপালস্নার বাস চোখে পড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিরা হাইওয়ে পুলিশের ওসি মোহাম্মদ আবদুলস্নাহ বলেন, রাতের আঁধারে কোনো বাস চললে বা যাত্রী পরিবহণ করলে আমরা প্রত্যেকটা গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। সরকারি প্রজ্ঞাপন মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বার আউলিয়া হাইওয়ে পুলিশের ওসি মীর নজরুল ইসলাম বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের প্রয়োজনকে পুঁজি করে রাতের বেলা কিছু অসাধু বাস চালক পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে চট্টগ্রাম ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাদের এই তৎপরতা ঠেকাতে রোববার দিনগত রাত থেকে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এ সময় যাত্রী নামিয়ে দিয়ে আমরা ১৮টি বাস জব্দ করে থানায় নিয়ে আসি। ১৪টি বাসের বিরুদ্ধে মামলাও দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে