শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সীতাকুন্ডে খাবার পানির সংকট

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুন্ড
  ১১ মে ২০২১, ০০:০০

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপে পানি উঠছে না। এতে ব্যক্তিগত তিন হাজারের পাশাপাশি অকেজো হয়ে আছে সরকারিভাবে স্থাপিত সাত হাজার নলকূপ। আর পানির সংকটে দিশেহারা উপজেলার লাখো মানুষ। এ ছাড়া পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ও আয়রন থাকায় প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন তারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ড অংশের পূর্ব পাশে অপরিকল্পিতভাবে অসংখ্য শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। এসব শিল্প কারখানায় ভূগর্ভ থেকে পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সাধারণ নলকূপে পানি উঠছে না।

উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া, মুরাদপুর, বাড়বকুন্ড, সৈয়দপুর ও সীতাকুন্ড পৌরসভা এলাকায় সারাবছরই খাওয়ার পানির তীব্র সংকট থাকে। পানির চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত নলকূপ নেই। ২৫টির মত পাতকুয়া থাকলেও সেখানেও পানি থাকে না। শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকার ৩২টি জেলে পলস্নী, সাতটি আদিবাসী এলাকা, বাড়বকুন্ড এবং দারোগারহাট আশ্রয়ন প্রকল্পের অধিবাসীদের সারাবছরই পানির সমস্যায় পড়তে হয়।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুন্ড উপজেলায় ব্যক্তিগত নলকূপের পাশাপাশি সরকারিভাবে ১০ হাজার নলকূপ রয়েছে। পানির স্তর না থাকায় অধিকাংশ নলকূপ অকেজো রয়েছে। নলকূপের ওপরের অংশ চুরি হওয়ার কারণে বেশিরভাগ নলকূপের কোনো চিহ্ন নেই। মাঝে-মধ্যে জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা নলকূপ সচল করলেও মেরামতের কিছুদিন পর তা পুনরায় অচল হয়ে পড়ে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, হোটেল-রোস্তোরাঁগুলোতে খাল ও পুকুরের দূষিত পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। বাড়বকুন্ডের ভায়েরখীল আশ্রয়ন প্রকল্পের আবদুল কাদের বলেন, প্রকল্পের একমাত্র নলকূপটি অকেজো হওয়ার কারণে বাসিন্দারা প্রায় দেড় মাইল দূরে গিয়ে একটি পুকুর থেকে পানি আনতে হয়। কিন্তু মাছ ধরার নামে বিষপ্রয়োগ করে পুকুরের পানি দূষিত করায় সেই পুকুরের পানিও ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে গেছে।

সরেজমিন কয়েকটি জেলেপলস্নী ঘুরে দেখা গেছে, ময়লা-আবর্জনায় ভরা খালের পানি সংগ্রহ করে তা খাওয়ার পানি হিসেবে ব্যবহার করছেন জেলেরা। দূষিত এই পানি ব্যবহারের ফলে জেলেপলস্নীর শিশু, নারী-পুরুষ সারাবছরই পানিবাহিত রোগে ভুগছেন।

উপজেলার পূর্ব সৈয়দপুর জেলে পাড়ার মোহনলাল জলদাস বলেন, তীব্র খরায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় জেলে পাড়ার অধিকাংশ নলকূপে পানি উঠছে না। এতে অনেকটা বাধ্য হয়ে আমাদের ময়লা-আবর্জনায় ভরা পুকুরের পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে।

কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম চৌধুরী জানান, 'তীব্র তাপদাহে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এলাকার অধিকাংশ নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানির সংকটে এলাকার জেলেপলস্নীর বাসিন্দারা পাশের খালের পানি পান করছে। যার ফলে প্রতিটি ঘরের লোকজন পানিবাহিত রোগে ভুগছে।

সীতাকুন্ড স্রাইন কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুখময় চক্রবর্তী বলেন, সীতাকুন্ড পাহাড়ের ঝরনার পানি সংরক্ষণ করে এলাকাবাসীর জন্য সুপ্রেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু একটি সংঘবদ্ধ চোর পানির পাইপ লাইন কেটে নিয়ে যাওয়ায় পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এটা চালু থাকলে পৌরবাসীর একাংশের সুপ্রেয় পানির চাহিদা মিটানো সম্ভব হতো।

সীতাকুন্ড পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ বদিউল আলম বলেন, চন্দ্রনাথ পাহাড় ও ইকোপার্ক এলাকায় কৃত্রিম উপায়ে ঝরনার পানিকে বিশুদ্ধকরণের মাধ্যমে খাবার পানি সরবরাহের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ চলছে। ব্যয়বহুল হলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর উদ্দিন রাশেদ বলেন, উপকূলীয এলাকার মানুষ পুকুর ও খালের পানি পান করে সারাবছরই পেটের পীড়ায় ভুগতে থাকে। দেখা যায়, হাসপাতালে আসা অধিকাংশ রোগী পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া ও আমাশয়সহ বিভিন্ন পেটের পীড়ায় আক্রান্ত।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে ১৫০ ফুট থেকে ১৮০ ফুট পর্যন্ত পাইপ দিয়ে নলকূপ বসানো হলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি ওঠে না। অকেজো নলকূপগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে