গ্রাহক স্বার্থরক্ষায় ব্যাংকে চার্জ কাটার বিষয়ে নতুন নির্দেশনা

হ সঞ্চয়ী হিসাবে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত কোনো ফি আদায় করা যাবে না হ যেকোনো ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে সুদ, মুনাফা হারের অতিরিক্ত কোনো সার্ভিস চার্জ অনুরূপ অন্য যেকোনো নামে অতিরিক্ত কোনো চার্জ, ফি, কমিশন আরোপ, আদায় করা যাবে না

প্রকাশ | ১২ জুন ২০২১, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
গ্রাহকের স্বার্থরক্ষায় আমানতকারীদের ব্যাংকিং সেবা তথা ব্যাংক হিসাব খোলা, রক্ষণাবেক্ষণ ফিসহ বিভিন্ন ধরনের চার্জ কাটার বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে। নির্দেশনাটি দেশের সব তফসিলি ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানা গেছে। যেসব বিষয়ে চার্জ ও কমিশন নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- সঞ্চয়ী হিসাব খোলার ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা এবং চলতি হিসাব খোলার ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা জমা দিয়ে নিজ নিজ নামে ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবেন গ্রাহক। তবে, বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হিসাব খোলার ক্ষেত্রে নূ্যনতম জমার বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতিপ্রাপ্ত থাকবে। সঞ্চয়ী হিসাবে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যাংকে থাকলে হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ফি আদায় করা যাবে না। ১০ হাজার টাকার উপরে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত গড় আমানত স্থিতির ক্ষেত্রে প্রতি ছয় মাসে সর্বোচ্চ সার্ভিস চার্জ ১০০ টাকা। ২৫ হাজার টাকার উপরে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত গড় আমানত স্থিতির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা, দুই লাখ টাকার উপরে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত গড় আমানত স্থিতির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা এবং ১০ লাখ টাকার বেশি আমানত স্থিতির ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা ফি আদায় করা যাবে। চলতি হিসাবে প্রতি ষান্মাসিকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা ও স্পেশাল নোটিশ ডিপোজিটের (এসএনডি) হিসাবে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা আদায় করা যাবে। তবে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হিসাবে কোনো প্রকার হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ফি আদায় করা যাবে না। একই ব্যাংকের অন্য শাখায় হিসাব স্থানান্তরের ক্ষেত্রে একই জেলায় সর্বোচ্চ ৫০ টাকা এবং অন্য জেলায় সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ফি আদায় করা যাবে। অ্যাকটিভেশন অব ডরম্যান্ট অ্যাকাউন্ট বাবদ কোনো চার্জ বা ফি আদায় করা যাবে না। বিভিন্ন মাসিক সঞ্চয়ী হিসাব (ডিপোজিট পেনশন স্কিম) বা এফডিআর বা অন্য কোনো মেয়াদি আমানত মেয়াদপূর্তির পূর্বে নগদায়নের ক্ষেত্রে নগদায়ন ফি বা অনুরূপ ফি আরোপ করা যাবে না। হিসাব বন্ধ করতে চার্জ হিসেবে সঞ্চয়ী হিসাবে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা, চলতি হিসাবে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা এবং এসএনডি হিসাবে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা আদায় করা যাবে। তবে, বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হিসাবসমূহে হিসাব বন্ধকরণ বাবদ কোনো ফি আদায় করা যাবে না। চেক বই হারানোর ক্ষেত্রে নতুন চেক বই ইসু্য বাবদ প্রকৃত খরচ ছাড়া অতিরিক্ত চার্জ বা প্রসেসিং ফি আদায় করা যাবে না। বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাবে আরোপিত নূ্যনতম ব্যালেন্স ফি, ইনসিডেন্টাল চার্জ, লেজার ফি, সার্ভিস চার্জ, কাউন্টার ট্রানজেকশন ফি বা অনুরূপ ফি আদায় করা যাবে না। ঋণ প্রসেসিং ফি হিসেবে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে মোট মঞ্জুরিকৃত ঋণের সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ আদায় করা যাবে, তবে এর পরিমাণ ১৫ হাজার টাকার অধিক হবে না। ৫০ লাখ টাকার অধিক পরিমাণ ঋণের ক্ষেত্রে এ হার হবে সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ তবে এর পরিমাণ ২০ হাজার টাকার অধিক হবে না। তবে ঋণ আবেদন ফি নামে কোনো ফি আদায় করা যাবে না। পুনঃতফসিলিকরণ, পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে ঋণ প্রসেসিং, পুনঃতফসিলিকরণ, পুনর্গঠন ফি ইত্যাদি নামে কোনো ফি, চার্জ, কমিশন আদায় করা যাবে না। তবে, সিএমএসএমই ও কৃষি খাত ব্যতীত অন্যান্য খাতে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ, পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে পুনঃতফসিলিকরণ, পুনর্গঠন ফি বাবদ সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ আদায় করা যাবে, তবে এর পরিমাণ ১০ হাজার টাকার অধিক হবে না। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ডকুমেন্টেশন ফি, সিআইবি চার্জ, স্ট্যাম্প চার্জ এবং আইনি ও জামানত মূল্যায়ন ফি প্রকৃত ব্যয়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। রপ্তানি ঋণসহ যেকোনো ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে সুদ, মুনাফা হারের অতিরিক্ত কোনো সার্ভিস চার্জ, ঋণ ব্যবস্থাপনা ফি, মনিটরিং, সুপারভিশন চার্জ, ঝুঁকি প্রিমিয়াম বা অনুরূপ অন্য যেকোনো নামে অতিরিক্ত কোনো চার্জ, ফি, কমিশন আরোপ, আদায় করা যাবে না। গ্রাহকের গৃহীত ঋণ নির্দিষ্ট মেয়াদের পূর্বে পরিশোধের ক্ষেত্রে বকেয়া ঋণের সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ আর্লি সেটেলমেন্ট ফি বা অনুরূপ ফি আদায় করা যাবে। তবে, কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র খাতে প্রদত্ত ঋণ এবং চলতি ঋণ বা ডিমান্ড লোন এর ক্ষেত্রে মেয়াদপূর্তির পূর্বে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে আর্লি সেটেলমেন্ট ফি বা অনুরূপ ফি আদায় করা যাবে না। ১০০ শতাংশ নগদ মার্জিনে এলসি খোলার কমিশন প্রতি ত্রৈমাসিকে সর্বোচ্চ দশমিক ২৫ শতাংশ, ডেফার্ড/ইউজান্স এলসি খোলার কমিশন প্রতি ত্রৈমাসিকে সর্বোচ্চ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং সাইট ও ব্যাক টু ব্যাকসহ অন্যান্য এলসি খোলার কমিশন প্রতি ত্রৈমাসিকে সর্বোচ্চ দশমিক ৪০ শতাংশ নির্ধারণ করা যাবে। এলসি ট্রান্সমিশন, এলসি অ্যামেন্ডমেন্ট, কনফারমেশন, ক্যানসেলেশন, ফরেন করেসপন্ডেন্ট চার্জের ক্ষেত্রে মেইলিং, কুরিয়ার, টেলেক্স, সুইফট ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রকৃত ব্যয়ের ভিত্তিতে চার্জ নির্ধারণ করা যাবে। এলসি অ্যাডভাইসিং চার্জ, এলসি অ্যামেন্ডমেন্ট চার্জ ও এলসি ট্রান্সফার চার্জ বাবদ সর্বোচ্চ ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করা যাবে। এলসি অ্যাকসেপটেন্স চার্জ প্রতি ত্রৈমাসিকে সর্বোচ্চ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং এলসি কনফারমেশন চার্জ প্রতি ত্রৈমাসিকে সর্বোচ্চ দশমিক ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা যাবে। ফরেন করেসপন্ডেন্ট চার্জ (স্থানীয় অংশ), ডাটা ম্যাক্স, হ্যান্ডেলিং চার্জ, কপি ডকুমেন্ট অ্যানডোর্সমেন্ট চার্জ, এলসি বাতিল কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ অব্যবহৃত এলসি চার্জ আদায় করা যাবে না। রপ্তানি বিল নেগোসিয়েশন কমিশন ও রপ্তানি বিল কালেকশন কমিশন সর্বোচ্চ দশমিক ১৫ শতাংশ নির্ধারিত হবে। তবে, রপ্তানি বিল নেগোসিয়েশন ও কালেকশনের ক্ষেত্রে যেখানে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে এক্সচেঞ্জ এগেইন হয় সে ক্ষেত্রে কমিশন বাবদ ৫০০ টাকার অধিক আদায় করা যাবে না। ব্যাক টু ব্যাক এলসি সার্টিফিকেট ইসু্যর চার্জ, সিঅ্যান্ডএফ সার্টিফিকেট ইসু্যর চার্জ, রপ্তানি মূল্য আদায়ের সার্টিফিকেট ইসু্যর চার্জ ৫০০ টাকার বেশি আদায় করা যাবে না। ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদানের ক্ষেত্রে কমিশন বাবদ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে সর্বোচ্চ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং নূ্যনতম এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা যাবে। এলসি খোলা/এলসি অ্যাকসেপটেন্স/এলসি কনফারমেশন/ ব্যাংক গ্যারান্টি এক ত্রৈমাসিক বা এর চেয়ে কম সময়ের জন্য প্রদত্ত হলে সে ক্ষেত্রে ব্যাংক নিজস্ব বিবেচনায় সর্বোচ্চ এক ত্রৈমাসিকের সমপরিমাণ চার্জ/কমিশন আদায় করতে পারবে। তবে, মেয়াদ যদি এক ত্রৈমাসিকের চেয়ে বেশি সময়ের জন্য হয় সে ক্ষেত্রে যে তারিখে মেয়াদ পূর্ণ হবে শুধুমাত্র ওই নির্ধারিত তারিখ পর্যন্ত সময়কালের জন্য চার্জ/ কমিশন আদায় করা যাবে। \হবৈদেশিক মুদ্রায় ডিমান্ড ড্রাফট (ডিডি), টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফার (টিটি), মেইল ট্রান্সফার (এমটি) প্রভৃতি ইন্সট্রুমেন্ট ইসু্যর ক্ষেত্রে এক লাখ টাকার নিচে বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা এবং এক লাখ এক টাকা থেকে অনধিক পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২০০ টাকা, পাঁচ লাখ এক টাকা থেকে অনধিক ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা এবং ১০ লাখ টাকার উপরে সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা চার্জ/ফি আদায় করা যাবে। ইন্সট্রুমেন্টসমূহ বাতিলের ক্ষেত্রে প্রতিবার সর্বোচ্চ ২০০ টাকা চার্জ/ফি আদায় করা যাবে। স্থিতি নিশ্চিতকরণ সনদ ফি ষান্মাসিক ও বাৎসরিক ভিত্তিতে অর্থাৎ বছরে দুবার ব্যাংকের আমানত ও ঋণ হিসাবধারী প্রত্যেক গ্রাহককে হিসাবের স্থিতি নিশ্চিতকরণ সনদ (হিসাব বিবরণীসহ) প্রদানের জন্য কোনো চার্জ/ফি আদায় করা যাবে না। তবে, গ্রাহককে বছরে দু'বারের বেশি এ সনদ (হিসাব বিবরণীসহ) গ্রহণ করতে হলে সে ক্ষেত্রে প্রতিবার সর্বোচ্চ ১০০ টাকা চার্জ/ফি আদায় করা যাবে। সচ্ছলতা সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিবার সর্বোচ্চ ২০০ টাকা চার্জ/ফি আদায় করা যাবে। চেক ফেরতের ক্ষেত্রে প্রতিবার সর্বোচ্চ ৫০ টাকা চার্জ আদায় করা যাবে। বিও একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে বিও সনদ প্রদানের চার্জ সর্বোচ্চ ১০০ টাকা আদায় করা যাবে। হিসাব/চেকে প্রদত্ত অর্থ প্রদান নির্দেশনা স্থগিতকরণ চার্জ প্রতিবার অনুরোধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা এবং অর্থ প্রদান নির্দেশনা স্থগিতকরণ বাতিলের ক্ষেত্রে প্রতিবার অনুরোধে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা আদায় করা যাবে। \হপে-অর্ডার ইসু্যর ক্ষেত্রে অনধিক ১ হাজার টাকা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২০ টাকা, এক হাজার এক টাকা থেকে অনধিক এক লাখ টাকা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫০ টাকা এবং এক লাখ টাকার বেশি পরিমাণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা চার্জ/ফি আদায় করা যাবে। পে-অর্ডার বাতিলের ক্ষেত্রে প্রতিবার সর্বোচ্চ ৫০ টাকা চার্জ/ফি আদায় করা যাবে। সিডিউল অব চার্জেসের সর্বশেষ হালনাগাদকৃত পূর্ণ তালিকা স্ব স্ব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়, সব শাখা, উপশাখা ও এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটসমূহের দর্শনীয় স্থানে/নোটিশ বোর্ডে এবং ব্যাংকের ওয়েবসাইটের হোম পেজে প্রদর্শন করতে হবে। ঘোষিত/প্রকাশিত তালিকা বহির্ভূত কোনো চার্জ/ফি/কমিশন আরোপ করা যাবে না। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রতি বছর ৩০ জুন ও ৩১ ডিসেম্বর তারিখের মধ্যে (ষান্মাসিক ভিত্তিতে) পরবর্তী ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর ও জানুয়ারি-জুন) ঘোষিত চার্জ/ফি/কমিশনের তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে।