পাকুন্দিয়ায় চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে

মেটে আলুতে লাভের সন্ধান

প্রকাশ | ১৩ জুন ২০২১, ০০:০০

পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় মেটে আলুক্ষেত পরিচর্যায় কৃষক -যাযাদি
পুষ্টিগুণে ভরপুর হলেও এক সময়ের অবহেলিত গাছ বা মেটে আলু এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। অঞ্চলভিত্তিক গাছ বা মেটে আলু পরিচিত পেস্তা আলু, চুপরি আলু, মাচা আলু, গজ আলু, মোম আলু, মাইট্টা আলু, পান আলু, প্যাচড়া আলু ইত্যাদি নামে। আলুটি চাষের জন্য আলাদা জমি, সার ও বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয় না। এটি আন্তঃফসল হিসেবে ফলন দেয়। মে মাসের প্রথমে রোপণের পর গাছ আলুর ফলন আসে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়। তখন বড় হলে সেগুলো সবজি হিসেবে রান্নায় ব্যবহার করা যায়। ফলন দেয় আগস্ট মাস পর্যন্ত। প্রতিটি গাছে মাটির নিচেও ৩ থেকে ২০ কেজি ওজনের আলু হয়, গাছ আলু অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম খরচে ও বিনা পরিশ্রমে অধিক লাভজনক হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকার মাটি দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ হওয়ায় এবং উপযোগী পরিবেশ থাকায় গাছ বা মেটে আলু মিশ্র ও রোলিং পদ্ধতিতে বিনা খরচে আবাদ করা সম্ভব। তাই স্থানীয় কৃষক বাণিজ্যিকভাবে এ আলু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। অধিক লাভের আশায় গাছ আলু চাষে ঝুঁকছেন। কৃষক আহসান হাবীব জানান, আমাদের জমি কম, বেশি পরিশ্রম করি। কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে চাষাবাদ করি। প্রতি বছর বিষমুক্ত সবজি করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া ও পরিবারের ভরণ-পোষণ করেও ৭০-৮০ হাজার টাকা আয় করি। কৃষক বাবুল মিয়া জানান, এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে গাছ আলু রোপণ করেছি, মাটির উপরের আলুগুলো ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা যায়। আর মাটির নিচের প্রতিটি আলু ৩ থেকে ২০ কেজি ওজনের হয়। রোপণের সময় বড় আকারে গর্ত করে ওই গর্তের মাটির সঙ্গে কিছু ছাই, শুকনা গোবর মিশিয়ে দেই। মাটির নিচের আলু প্রতি ১০ শতাংশ জমিতে ২৫ থেকে ৩০ মন ফলন হয় যা বাজারে ১৪শ' থেকে ১৬শ' টাকা মণদরে বিক্রি করা যায়। কৃষক মস্তফা, আব্দুলস্নাহ, জামাল জানান, এ বছর আমরা জনপ্রতি দুই একর জমিতে গাছ আলু আবাদ করেছি। অন্য সবজি ক্ষেতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বীজ বপন করেছি, এখন ফলন আসতে শুরু করেছে। গাছ আলুর জন্য কোনো অতিরিক্ত খরচ করতে হয়নি। বাজারে প্রতিমণ আলু পাইকারি এক হাজার ২০০ টাকা থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা করে বিক্রি করা যায়। তাই উপজেলায় এ আলু আবাদের সম্ভাবনা ক্রমেই বাড়ছে। পাইকারি বিক্রেতা রুবেল মিয়া জানান, কৃষকদের কাছ থেকে পাইকারি হিসেবে কিনে নিয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে প্রতিমণ এক হাজার ৩০০ টাকা থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা করে বিক্রি করেন। পাকুন্দিয়া বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানান, তারা পাইকারদের কাছ থেকে কিনে খুচরা ক্রেতাদের কাছে প্রতি কেজি ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা করে বিক্রি করছেন। এতে করে মণপ্রতি তাদের লাভ হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা করে। তারা আরও জানান, এই আলু কোনো কারণে ২০ দিন দোকানে থাকলেও পচে না বা নষ্ট হয় না। ফলে এ সবজিতে তাদের কোনো রকম ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। চর তেরটেকিয়া বস্নকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বজলুল হক জানান, চাষিরা যখন গাছ আলু রোপণ করে তখন তাদের উৎপাদন খরচ খুবই নগণ্য। ২ থেকে ৩ হাজার হলেই এক একর জমিতে এই আলু আবাদ করতে পারে। ১০ শতাংশ জমিতে মাটির উপর ৩০ থেকে ৩৫ মণ ফলন হয় যা প্রতি কেজি বাজারমূল্য ৩০ থেকে ৪০ টাকা। আবার মাটির নিচে ২৫ থেকে ৩০ মণ ফলন হয় যা ১৪০০-১৬০০ টাকা মণ বিক্রি করা যায়। যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষি ফসল নষ্ট হয় তখন এই আলু বাজারে আসে এবং চাহিদা বেশি থাকে। এই আলু চাষ আন্তঃফসল হওয়ায় এই এলাকার জমিতে বছরে ৪ থেকে ৫টি ফসল উৎপাদন করা যায়। এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল হাসান আলামিন জানান, চরফরাদীর অধিকাংশ এলাকার মাটি দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ হওয়ায় প্রায় বিনা খরচে ও অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভজনক এ আলু চাষ করে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন। এ বছর চর তেরটেকিয়া বস্নকে ৩ শত হেক্টর জামিতে গাছ আলুর আবাদ হয়েছে।