চউকের জলাবদ্ধতা প্রকল্প

মেয়াদ শেষ হলেও অর্ধেক কাজ বাকি !

৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ ২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু করে চউক। যা ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু যথাসময়ে কাজ শেষ হয়নি।

প্রকাশ | ১৩ জুন ২০২১, ০০:০০

চট্টগ্রাম অফিস
সর্বশেষ গত ৬ জুন মাঝারি বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতার সম্মুখীন হন চট্টগ্রাম নগরবাসী। এখন বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস মিলছে। চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের চার সমূদ্রবন্দরকে ৩নং সতর্ক সংকেত জারি করতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে চট্টগ্রাম নগরবাসীর মনে আবারও জলাবদ্ধতার আশঙ্কা জাগছে। কারণ চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ এখনো অর্ধেক বাকি। অথচ চলতি জুন মাসে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এ অবস্থায় ভারীবর্ষণ হলে চট্টগ্রাম নগরীতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ ২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু করে চউক। যা ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু যথাসময়ে কাজ শেষ হয়নি। কাজ শেষ হয়েছে মোট প্রকল্পের মাত্র ৫০ শতাংশ। তিনি বলেন, মহামারি করোনার কারণে প্রকল্পের অর্থছাড় ঠিকভাবে হয়নি। এখনো প্রকল্পাধীন কিছু ভূমি অধিগ্রহণের কাজ বাকি। তাই কাজ শেষ করতে সময় লাগবে। প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হলেও কাজ শেষ হয়নি। কাজ শেষ হতে আরও দুই বছর সময় লাগবে। আমরা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করব। এতে প্রকল্প ব্যয়ও বাড়বে। তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পের অধীন কর্ণফুলী সংযুক্ত পাঁচটি খালের মুখে স্স্নুইস গেট বা টাইডাল রেগুলেটর নির্মাণ চলছে। এগুলোর জন্য কিছু যন্ত্রপাতি দেশের বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এগুলো আনতে সময় লাগছে। নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় এবং খাল ভরাট থাকায় অতিবর্ষণ হলে এবারও নগরবাসীকে পোহাতে হবে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ। সূত্রমতে, কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ১৬টি খাল এবং এসব খালে সংযুক্ত আরও ২০টি খালসহ মোট ৩৬টি খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কথা প্রকল্প পরিকল্পনায় উলেস্নখ রয়েছে। এছাড়া ১৭৬ কিলোমিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ৪৮টি পিসি গার্ডার ব্রিজ প্রতিস্থাপন, ছয়টি আরসিসি কালভার্ট প্রতিস্থাপন, পাঁচটি টাইডাল রেগুলেটর বা স্স্নুইস গেট নির্মাণ, ১২টি পাম্প হাউজ স্থাপন, ৪২টি সিল্টট্রেপ স্থাপন এবং ২০০টি ক্রসড্রেন কালভার্ট নির্মাণ করার কথা। কিন্তু প্রায় চার বছরে প্রকল্পের কাজে উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি। বর্ষা আসার আগেই চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমের প্রথম মাঝারি বৃষ্টিতে ঈদের দিন নগরীর অনেক এলাকা তলিয়ে যায় পানিতে। ঈদের পরেও গত ৬ জুন মাঝারি বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় চট্টগ্রাম নগরজুড়ে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের মূল অংশের কাজ বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী-৩৪ ইসিবি। তাদের কাজের অগ্রগতি নিয়ে প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, 'যেহেতু চউকের প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করছি সেহেতু চউককে প্রস্তাব করেছি ৭০৯ কোটি টাকা দিতে। যদিও মন্ত্রণালয় ৫৩২ কোটি টাকা পুনঃবরাদ্দ করেছে। কিন্তু ৫৩২ কোটির টাকার মধ্যে হিজড়া খালের দু'পাশে ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ৩৫২ কোটি টাকা। তাই আমরা সুপারিশ করেছি, প্রকল্পের ভৌত কাঠামো এবং ভূমি অধিগ্রহণের জন্য আলাদা বরাদ্দ দিতে। এরমধ্যেই ৫০ শতাংশ প্রকল্পের সামগ্রিক অগ্রগতি হয়েছে। নগরের ৫টি খালের মুখে রেগুলেটর বসানোর প্রক্রিয়াগত কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। বাকি কাজটুকু সম্পন্ন করতে পারলে এবং পরবর্তীতে খালের ব্যবস্থাপনা ঠিকমতো করলে এ ৫টি খাল দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করবে না। বৃষ্টির পানিও নেমে যাবে। জলাদ্ধতা আর থাকবে না।' নগর পরিকল্পনাবিদ আশিক ইমরান বলেন, গত বছর চট্টগ্রামে বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে জলাবদ্ধতা ছিল না। ২০১৮-১৯ সালের মতো যদি এবার বৃষ্টি হয়, তাহলে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে। কারণ অনেকগুলো খালে বাঁধ দেওয়া আছে। সেগুলোতে রিটার্নিং দেয়ালের কাজ চলছে। এছাড়া বিকল্প খাল খননের কথা থাকলেও তা এখনো করতে পারেনি চউক। জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম গড়তে সেবাসংস্থার সমন্বয়ের কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, খালগুলোর নাব্য ধরে রাখার জন্য যে কাজগুলো করা দরকার, সেগুলোর সবই যে চউকের কাজ, এমন নয়। চট্টগ্রাম নগরকে জলাবদ্ধতামুক্ত রাখতে সিটি করপোরেশন ও সেবা সংস্থাগুলোর কাজের সমন্বয় করতে হবে। খালগুলো পরিষ্কারের অল্পদিনেই পলিথিন ও বর্জ্য এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে, সেদিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি তাদের পাহাড় কাটা বন্ধের দিকে খেয়াল রাখা দরকার। নগরে পাহাড় কাটা হচ্ছে। বৃষ্টি হলে পাহাড়ের মাটি এসে নালা-নর্দমা ও খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করলে বর্ষায় চাপ সৃষ্টি হবে না।