বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার মধ্যেও আমে চাঙ্গা পোরশার অর্থনীতি

এম রইচ উদ্দিন, পোরশা (নওগাঁ)
  ১৩ জুন ২০২১, ০০:০০
আড়তে আম কিনছেন ব্যবসায়ীরা -যাযাদি

মহামারি করোনায় জনজীবন কিছুটা স্থবির হলেও নওগাঁর পোরশায় জমে উঠেছে আমের ব্যবসা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগমে সরগরম হয়ে উঠেছে আড়তগুলো। করোনার সময়ও আমের চাহিদা থাকায় ব্যবসায়ীরা ভালো মুনাফা পাচ্ছেন। ভালো দাম পাওয়ায় আমচাষিরাও খুশি। এ মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হবে বলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন। ফলে চাঙ্গা হচ্ছে পোরশার অর্থনীতি।

এ উপজেলার আড়তগুলো থেকে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক ট্রাক আম ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বড় বাজারগুলোতে যাচ্ছে। আম কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ী, বাগান মালিক, গাছ থেকে আম নামানো, ঝুড়িতে আম সাজানোসহ ট্রাকে লোড করার কাজে এলাকার কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। একটুও যেন ফুরসত নেই তাদের। আর এই কারণে আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের মতো চাঙ্গা হচ্ছে এ উপজেলার অর্থনীতিও।

উপজেলার নোচনাহার বাজার, সরাইগাছী মোড়, পোরশা মিনাবাজার আড়তের মোড়, তেঁতুলিয়া বাজার আমের আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, আড়তগুলো ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত। গোপালভোগ,

খিরসাপাত ও ল্যাংড়া জাতের আম বেচাকেনা হচ্ছে। ভালো মানের আম প্রতি মণ গোপালভোগ ও ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা ও ভালো মানের খিরসাপাত (হিমসাগর) বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়।

নোচনাহার বাজার আম আড়ৎদার একতা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রইচ উদ্দিন জানান, এখন পর্যন্ত তাদের ব্যবসা ভালোই চলছে। এই বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ ট্রাক আম দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। প্রতিটি ট্রাকে ১২০ থেকে ৩০০ ক্যারেট আম পাঠানো হচ্ছে। যার পরিমাণ প্রতি ক্যারেটে ২২ কেজি এবং মোট ওজন সাড়ে ৬ হাজার কেজির বেশি। এই হিসাবে একটি ট্রাকে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকার আম যাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, উপজেলার বেশির ভাগ জমিতে আম্রপালি জাতের আম চাষ হওয়ায় জুনের শেষের দিকে ওই আম নামানো শুরু হলে বাজারে আমের আমদানি আরও বাড়বে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁর সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় পোরশা উপজেলায়। এ বছর উপজেলায় ১০ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এতে প্রতি হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ মেট্রিক টন। এই হিসেবে উপজেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। যদি বাজার প্রতি মণে ২ হাজার টাকা হয় তাহলে চলতি মৌসুমে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার আম কেনাবেচা হবে।

পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহফুজ আলম জানান, উপজেলার অধিকাংশ জমিতে একবার ধান উৎপাদন হয়। প্রায়ই খরা ও বন্যার কারণে জমিতে ধান উৎপাদন কম হওয়ায় এখানকার কৃষকেরা আম চাষে ঝুঁকছেন। গত তিন বছরে এ উপজেলায় প্রতি বছর ৫৫০ হেক্টর করে জমিতে আম চাষ বেড়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, পোরশা উপজেলাসহ সমগ্র নওগাঁ জেলায় প্রতি বছর যে হারে আম চাষ বাড়ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে চাঁপাইনবাবগঞ্জকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে