বিভিন্ন জেলার করোনা চিত্র

খুলনায় ৪, যশোরে ৩ নাটোরে ২ জনের মৃতু্য

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০২১, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনা সংক্রমণ কমাতে অধিক সংক্রমিত এলাকায় লকডাউন চললেও শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে খুলনা, যশোর ও নাটোরে। গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনার করোনা হাসপাতালে আরও চারজন, যশোরে তিনজন ও নাটোরে দুজনের মৃতু্য হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবের পরীক্ষায় একদিনে ১৪৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী খুমেকের পিসিআর মেশিনে ১৩ জুন ৩৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে ২২৮ জন খুলনা মহানগরী ও জেলার। এর মধ্যে ১৪৮ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। শনাক্তদের মধ্যে খুলনা মহানগরী ও জেলার ৮৯ জন, বাগেরহাট ৪৬ জন, যশোরের ছয়জন, সাতক্ষীরার পাঁচ, নড়াইলের একজন ও পিরোজপুর জেলার একজন রয়েছে। খুমেক পিসিআর ল্যাবের রোববার মোট নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্তের হার ছিল ৩৯.৫৭ শতাংশ। এদিকে খুলনা করোনা হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, ১৪ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৪১ জন। এর মধ্যে রেড জোনে ৭৬ জন, ইয়োলো জোনে ১৬ জন, এইচডিইউতে ২৮ জন ও আইসিইউতে ২১ জন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হয়েছেন ৪৩ জন। ছাড়পত্র নিয়েছেন ৪৩ জন, আর মারা গেছেন চারজন। এর মধ্যে দুই জন করোনায় ও অন্য দুইজন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন বলে জানান তিনি। এদিকে যশোরে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৯০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, এপ্রিল ও মে মাসের তুলনায় চলতি মাসে (জুন) যশোরে করোনা শনাক্তের হার অনেক বেশি। সেই সঙ্গে মৃতু্যও বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৯০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৯ শতাংশ। এছাড়া মারা যাওয়াদের মধ্যে দুইজন করোনা রোগী এবং অপরজন উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ জন মারা গেছেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন, হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর চাপ বেড়েছে। বর্তমানে করোনা ডেডিকেটেড ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৯৯ জন ভর্তি আছেন। রোগী বাড়লেও হাসপাতালটি সেবা দিতে সক্ষম। এদিকে, ১০ জুন থেকে যশোর ও নওয়াপাড়া পৌরসভায় লকডাউন চললেও জেলার সড়ক ও হাটবাজারগুলোতে অবাধে চলাচল করছে মানুষ। এ বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে এবং প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে। নইলে এই ঊর্ধ্বগতি রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এছাড়া নাটোরে রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত নতুন করে ৭০ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সংক্রমণের হার ৪১ শতাংশ। একই সময়ে করোনায় মৃতু্য হয়েছে দু'জনের। সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নাটোরে ১১ জুন করোনা সংক্রমণের হার ছিল ৫৩ দশমিক ২ শতাংশ। রোববার সংক্রমণের হার ছিল ৩০ দশমিক ২ শতাংশ। একদিনের ব্যবধানে সোমবার সংক্রমণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ১ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৭০ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় নাটোর সদর হাসপাতালে করোনায় দুজনের মৃতু্য হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতু্য হলো ৩৪ জনের। এর মধ্যে ১০ জনের মৃতু্য হয়েছে শুধু জুন মাসে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সদর হাসপাতালের ৩১ শয্যার রেড জোনে রোগীর সংকুলান করা যাচ্ছিল না। রোববার বিকেলে রেড জোনে শয্যাসংখ্যা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫০টি। সোমবার পর্যন্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন ৪৪ জন। আমাদের নাটোর প্রতিনিধি জানান, কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে নাটোরের সিংড়া ও নাটোর পৌরসভা এলাকায় চলছে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ লকডাউনের সোমবার ছিল ষষ্ঠ দিন। লকডাউন বাস্তবায়নে শহরের বিভিন্ন এলাকায় শক্ত অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। এত কিছুর পরও স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা সাধারণ মানুষের। প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে বেরিয়ে আসছে রাস্তা বা হাট বাজারে। মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। আর এই স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা সংক্রমন বাড়ছে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমান। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, শহরতলির মোকরামপুর, দত্তপাড়াসহ অন্যান্য এলাকায় সংক্রমণের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। এদিকে নাটোর পৌরসভা কার্যালয়ে কর্মরত ৪৪ জনের মধ্যে ১৪ জন করোনা পজিটিভ হওয়ায় রোববার থেকে পৌরসভার কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।