ভালুকায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন!

প্রক্রিয়াজাত কারখানা স্থাপনের দাবি

প্রকাশ | ১৬ জুন ২০২১, ০০:০০

সফিউলস্নাহ আনসারী, ভালুকা (ময়মনসিংহ)
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা পাকা কাঁঠালের ম-ম ঘ্রাণে এখন মুখরিত। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালুকায় এবার কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। বেশিরভাগ গাছে অন্যান্য বছরের তুলনায় সংখ্যার দিক দিয়ে কাঁঠাল বেশি ধরেছে এবং আকারেও বেশ বড়।  এদিকে গ্রামের বিভিন্ন হাট-বাজার ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসেছে কাঁঠাল বিক্রির হাট। প্রথমদিকে ভালো দাম পাওয়া গেলেও তা ধীরে ধীরে কমে আসে। কাঁঠালচাষিরা জানান, ভালুকায় একটি কাঁঠালের জুসের কারখানা হলে দ্রম্নত পচনশীল এই ফলের সঠিক দাম তারা পেতেন। প্রতি মৌসুমে ভালুকার হবিরবাড়ি সিডস্টোর বাজার, আংগারগাড়া বাজার, উথুরা মাহার বাজার, বাটাজোর, কাচিনা, ভালুকা পুরনো বাসস্ট্যান্ড, মলিস্নকবাড়ি, চমিয়াদী, রাজৈ, পনাশাইল, কেয়াদী, ভরাডোবা বাসস্ট্যান্ড, পারুলদিয়া, আশকা, জামিরদিয়া মাস্টারবাড়িসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কাঁঠালের হাট বসে।  চাহিদার কথা বিবেচনা করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা ছুটে আসেন ভালুকার ছোট-বড় ওইসব হাটে, কেনেন প্রচুর কাঁঠাল। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকদের বাধ্য হয়ে বেশিরভাগ বাগান মালিক কম দামেই বিক্রি করছেন কাঁঠাল।  ঠেলাগাড়ি ভর্তি কাঁঠাল নিয়ে এসেছেন এক কৃষক, তিনি ২৭ পিস কাঁঠাল দুই হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। বাজার ঘুরে দেখা যায় আকারভেদে প্রতিটি কাঁঠাল ৬০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এলাকার কৃষক ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে কাঁঠালের দাম ভালো থাকলেও করোনা ও লকডাউনে পরিবহণ সমস্যা হওয়ায় দ্রম্নত পচনশীল এ রসালো ফলটি অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। কাঁঠালের পাইকার আব্দুল লতিফ ফকির বলেন, কুমিলস্না, নোয়াখালী, লক্ষ্ণীপুর, সিলেট, মুন্সীগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভালুকার কাঁঠালের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। তবে রাজধানী ঢাকার কাঁঠালের বাজার মন্দা। উপজেলার পাড়াগাঁও গ্রামের কৃষক হায়দার খান, সাইফুল ইসলাম সাইদুলসহ অনেকেই জানান, চলতি মৌসুমে মাটিতে যথেষ্ট পরিমাণ রস থাকায় কাঁঠালের ফলন হয়েছে অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। কাঁঠালের আকারও গতবারের চেয়ে তুলনামূলক বড়। উপজেলার সিডস্টোর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. বিলস্নাল হোসেন জানান, গত দু-এক বছর আগেও সিডস্টোর বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০/৩০ লাখ টাকার কাঁঠাল বিক্রি হতো, কিন্তু করোনাকালে তা কমে ৫০ শতাংশেরও নিচে চলে এসেছে। বাজারে আমদানি থাকলেও পাইকাররা কাঁঠাল নিতে চান না। ফলে অনেক কাঁঠাল বাজারেই পচে-গলে নষ্ট হয়। উপজেলার হবিরবাড়ি গ্রামের কাঁঠাল চাষিরা জানান, সংরক্ষণের অভাবে প্রতিবছর তাদের এলাকার লাখ লাখ টাকার কাঁঠাল পচে-গলে নষ্ট হয়। ফলে তারা বঞ্চিত হন কষ্টার্জিত ওই ফসলের উপযুক্ত মূল্য থেকে। তারা কাঁঠালের উপযুক্ত মূল্য পেতে ভালুকা এলাকায় সরকারি উদ্যোগে কাঁঠাল প্রক্রিয়া জাতকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ করে চিপস, জুস, কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীর কারখানা স্থাপনের দাবি জানান। কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, হবিরবাড়ী ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে কাঁঠাল বাগান রয়েছে। এ এলাকায় খাজা ও গলা এই দুই জাতের কাঁঠাল চাষ হয়। কাঁঠালের উন্নতজাত স্থানীয়ভাবে খুবই অপ্রতুল। বাজার জাতকরণ ব্যবস্থাপনা ও সরকারি সহযোগিতা ও উন্নত গবেষণা প্রয়োজন, সেই সঙ্গে কাঁঠাল সংরক্ষণাগার/হিমাগার স্থাপন সময়ের দাবি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেসমিন জাহান জানান, কাঁঠাল গাছের যত্নের প্রতি কৃষকরা সব সময়ই উদাসীন থাকেন। সময়মতো যত্ন না নেওয়া ও প্রয়োজনীয় সারের অভাবে কাঁঠালের আকার-আকৃতি অনেক সময় ছোট ও বিভিন্ন পোকার আক্রমণ হয়। উপজেলার হবিরবাড়ী ও মলিস্নকবাড়ি এলাকায় বেশি কাঁঠাল উৎপাদন হয়।  ভালুকা উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ আবুল কালাম আজাদ জানান, ভালুকায় একটি কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত কারখানা হলে এলাকার কাঁঠাল চাষিরা উপকৃত হতেন। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতেন তারা।