বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জবিতে অন্তর্কোন্দলে চার ভাগে বিভক্ত নীল দলের শিক্ষকরা

মহিউদ্দিন রিফাত
  ১৬ জুন ২০২১, ০০:০০

রাজধানীর অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সাতশ শিক্ষক আছেন। তাদের মধ্যে ছয় শতাধিক শিক্ষক আওয়ামীপন্থি নীল দলের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু প্রশাসনিক পদপদবি, উপাচার্যের ঘনিষ্ঠতা, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতাসহ নানা কারণে অন্তর্কোন্দলে চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নীল দলের শিক্ষকরা।

জানা যায়, ২০১৭ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নীল দলের ২০১৬-১৭ কার্যনির্বাহী পর্ষদের মেয়াদ ছিল ৩০ জুন পর্যন্ত। ৩১ জুলাই নীল দলের নির্বাচনের দিন ধার্য করে তফসিল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনের আগে নীল দলের দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে একটি পক্ষ গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবিত ৫ ধারার ১১ সদস্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি পদ দাবি করে। কিন্তু অন্য পক্ষ তাদের দাবিকে সমর্থন না করে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের মতামত দেয়। সভায় দু'পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হলে ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুলস্নাহর অনুমোদনক্রমে ২০১৭-১৮ সালের ১৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। অপরদিকে ৩১ জুলাই নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি অংশ অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলামকে সভাপতি ও ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করে। পরে দুটি অংশ দুটি করে কমিটি দিয়ে আসছে।

২০২০ সালের ৫ মার্চ আঞ্চলিকতা ও বিএনপি জামাতের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে ড. জাকারিয়া মিয়া ও ড. মোস্তফা কামালের কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামসুল কবির। তার পর থেকে ড. শামসুল কবির ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. নুর মোহাম্মদের অনুসারী শিক্ষকরা নীল দলের কোনো অংশের সভা ও কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন না।

এদিকে জবি শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন-২০২০ এর আগে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস ও গণযোগাযোগ বিভাগের সহাকারী অধ্যাপক মিথুন মিয়াকে সদস্য সচিব করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষকদের নিয়ে 'জয় বাংলা শিক্ষক সমাজে'র উত্থান ঘটে।

জবি শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন-২০২০ এ তিনটি পক্ষ থেকেই পৃথক প্যানেলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। গত বুধবার নীল দলের একাংশ নির্বাচনের মাধ্যমে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়।

বৃহস্পতিবার নীল দলের আরেকাংশের সভাপতি ড. জাকারিয়া মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিতে নীল দলের নির্বাচনের নামে যে প্রক্রিয়া চলছে তার সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নীল দলের কোনো সম্পর্ক নেই বলে উলেস্নখ করেন। এ প্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষকদের বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য বলেন। এবং তারা দ্রম্নত আলোচনার মাধ্যমে নতুন কমিটি দেবেন বলে জানান।

তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমানের কয়েকটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া ও ড. মোস্তফা কামালের মধ্যে মতবিরোধ শুরু হয়। তাদের মধ্যে মতানৈক্য এখনো চলমান।

এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে নীল দলের একাংশের সাবেক সভাপতি ড. কাজী সাইফুদ্দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেন, 'বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের নীল দল নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মিথ্যাচার চলছে আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ৩০ লাখ শহীদের এবং বঙ্গবন্ধু রক্তের নাম করে এহেন মিথ্যাচার এবং ভন্ডামী করার অধিকার কারও নাই। এই চিহ্নিত মহলটি ইতোপূর্বে সবসময় মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে।'

নীল দলের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, নীল দলের মধ্যে কোন মতানৈক্য নেই। পৃথক কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, সবাইকে বলব একত্রিত হওয়ার জন্য।

আরেকাংশের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, গবেষক ও আওয়ামী পরিবারের সন্তানদের নিয়ে একক কমিটি করার জন্য কেউ উদ্যোগ নিলে আমরা আলোচনায় বসার জন্য প্রস্তুত আছি।

বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস বলেন, তদবিরবাজ, গুটিবাজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পদপদবির কারণে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষকদের মধ্যে গ্রম্নপিং। ক্যাম্পাস খুললে তদবিরবাজ ও গুটিবাজদের বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষকদের একত্রিত করার কাজ শুরু করব।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, সময়ের সঙ্গে আমি নীল দলে কোথায় থাকব তা সিদ্ধান্ত নেব। আঞ্চলিকতা, বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্ঠতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাবের কারণে আমি একটি অংশের কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছি। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে যারা কাজ করবে তাদের সঙ্গে সবসময় থাকব।

এদিকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর দেশের রাজনীতির পটপরিবর্তনের স্রোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আদর্শিক পরিবর্তনও ত্বরান্বিত হয়। বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের শিক্ষকরা কেউ কেউ গা-ঢাকা দিয়েছেন কেউ নীলের রঙে নিজেদের রাঙিয়েছেন।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সাদা দলের শিক্ষকরা প্রকাশ্যে কর্মসূচি ও নির্বাচনে অংশ না নিলেও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা নিজেদের স্বার্থ আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময় সাদা দলের শিক্ষকদের নিজেদের দলে ভিড়িয়েছেন। শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের আগে নিজেদের প্যানেলকে জয়ী করতে নীল দলের প্রত্যেক গ্রম্নপের শিক্ষকরা সাদা দলের শিক্ষকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন।

তবে সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদদিন বলেন, সাদা দলের নিয়মিত সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রশাসনের প্রতিহিংসার কারণে প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালন করা হয় না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে