শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কুষ্টিয়ায় রেকর্ড শনাক্ত, ছয় মাসের সর্বোচ্চ নোয়াখালীতে, বেড়েছে সাতক্ষীরায়

যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ জুন ২০২১, ০০:০০

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান বিধিনিষেধের মধ্যেও রেকর্ড সংখ্যক সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে কুষ্টিয়ায়, নোয়াখালীতে শনাক্ত হয়েছেন গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ, আবারও শনাক্তের হার বেড়েছে সাতক্ষীরায়। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় তিনজন ও কুষ্টিয়ায় দুইজন মারা গেছেন।

কুষ্টিয়ায় বিধিনিষেধ আরোপের পরও রেকর্ড সংখ্যক সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ শনাক্ত। সম্প্রতি কুষ্টিয়া পৌরসভায় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। কিন্তু এখানে চারদিন ধরে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। এরপরও কেন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, সেটা গবেষণা করা প্রয়োজন। সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর লকডাউনের মতো ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ২৯৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে পিসিআর ল্যাবে ১৬২টি নমুনায় ৫৮টি, অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ১১৬টি নমুনার মধ্যে ৩২ এবং বিদেশগামী ১৫ জনের মধ্যে একজনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। নতুন শনাক্ত হওয়া রোগীর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৯ জন, যার সিংহভাগই পৌর এলাকার।

জেলায় করোনায় সংক্রমিত রোগীর মোট সংখ্যা পাঁচ হাজার ৭৩৬। সুস্থ হয়েছেন চার হাজার ৮৫৮ জন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩২ জন।

এদিকে জেলায় করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলেও প্রশাসনের প্রতিরোধব্যবস্থা চলছে ঢিমেতালে। গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় সাতদিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। কিন্তু মানুষের চলাচল দেখে তা বোঝার উপায় ছিল না।

এদিকে নোয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৯১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। ৫৬৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় এই ফলাফল পাওয়া যায়। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। শনাক্তের দিক থেকে ছয় মাসের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার।

জেলা সিভিল সার্জন বলেন, গত ছয় মাসে এটি জেলায় একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছে। ১৯১ জন আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ১২৫ জন, কোম্পানীগঞ্জে ২৭ জন, বেগমগঞ্জে ২০ জন, কবিরহাটে সাত, চাটখিলে ছয়, সোনাইমুড়ীতে তিন, সেনবাগে দুই ও সুবর্ণচরে একজন রয়েছেন।

তিনি বলেন, এতে জেলায় মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮৩৬ জন। মোট আক্রান্তের হার ১০ দশমিক ৬০ শতাংশ। জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃতু্য হয়েছে ১২৭ জনের। মৃতু্যর হার ১ দশমিক ২৯ শতাংশ।

জেলা সিভিল সার্জন আরও বলেন, এ সময় সুস্থ হয়েছেন সাত হাজার ১৩০ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৭২ দশমিক ৪৯ ভাগ।

উলেস্নখ্য, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও নোয়াখালী পৌরসভায় চলমান লকডাউনের সময়সীমা প্রথম ধাপে ৫ জুন থেকে ১১ জুন এবং সংক্রমণ অব্যাহত থাকায় তা ১৮ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯১ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। এতে শনাক্তের হার ৪৭ দশমিক ৩১ শতাংশ থেকে আবারও বেড়ে ৪৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

এ ছাড়া সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজন করোনা পজিটিভ রোগীর মৃতু্য হয়েছে। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. জয়ন্ত সরকার জানান, প্রতিদিন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালে করোনা পজিটিভ রোগীর চাপ বাড়ছে। বর্তমানে এই দুই হাসপাতালে মোট ৩৮ জন করোনা পজিটিভ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে বাসাবাড়িতে হোম কোয়ারেন্টিনে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৭০৩ জন করোনা পজিটিভ রোগী।

জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতু্য হয়েছে ৫৫ জন। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে আরও ২৪৮ জন।

এদিকে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে ৫ জুন থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত স্থানীয় জেলা প্রশাসনের দুই দফায় দেওয়া দুই সপ্তাহের লকডাউন চলছে। করোনার ঊর্ধ্বমুখী নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শহরের মোড়ে মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে চেকপোস্ট বসিয়ে মানুষ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে খুলনা ও যশোর থেকে সাতক্ষীরায় প্রবেশের পথ। কিন্তু হাটবাজারের সাধারণ মানুষ কোনোভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে