যশোরে মৃতু্য শতাধিক ছাড়াল সংক্রমণ ছড়িয়েছে গ্রামেও

প্রকাশ | ১৯ জুন ২০২১, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
যশোরের হুহু করে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও প্রতিদিন জেলায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণের হার। জেলায় গড় করোনা শনাক্তের হার ৪৮.৬৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে এই জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে শতাধিক রোগীর মৃতু্য হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৪ জন। এই সময়ে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৪৭ জন। করোনার প্রথম ধাপে চিহ্নিত করা হটস্পটগুলোতে \হদ্বিতীয় ধাপেও আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হচ্ছে। বর্তমানে শহর থেকে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার প্রথম অবস্থায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল শহর এলাকাতে। কিন্তু এখন করোনার সংক্রমণ গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২ মাসে যশোর জেলায় যাদের মৃতু্য হয়েছে তাদের অধিকাংশের বাড়ি গ্রামে। এ পর্যন্ত যশোরে করোনায় ১০১ মারা গেছে। এর মধ্যে যশোর সদরে ৬৮, অভয়নগরে ১০, বাঘারপাড়ায় ৩, চৌগাছায় ৪, ঝিকরগাছায় ৩, কেশবপুর ৬ ও শার্শায় ৭ জন। এর মধ্যে যারা মারা গেছেন, তাদের অধিকাংশের বাড়ি গ্রামে। সিভিল সার্জন অফিস একটি সূত্র জানায়, করোনার প্রথম ধাপে যেসব এলাকা রেডজোন ঘোষণা করা হয়েছিল, দ্বিতীয় ধাপেও সেসব এলাকায় আক্রান্ত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। যশোর সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, ১৮ জুন পর্যন্ত যশোর জেলায় ৯ হাজার ২৪১ জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১০১ জন নারী-পুরুষ। সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৭শ' ৪০ জন। এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৮৪ জন। হোম এবং হাসপাতাল আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন আছেন ২ হাজার ৩শ' ১৬ জন। যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, গত ২৪ ঘন্টায় যবিপ্রবির জেনোম সেন্টারে নমুনা পরীক্ষায় ২৭২ জনের কোভিড-১৯ পজিটিভ ফলাফল এসেছে। এর মধ্যে যশোরের ৫৩৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৪৭ জনের, মাগুরার ৩৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০ জনের ও নড়াইলের ৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ জনের নমুনাতে কোভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ যবিপ্রবির ল্যাবে মোট ৬৫০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৭২ জনের করোনা পজিটিভ এবং ৩৭৮ জনের নেগেটিভ ফলাফল এসেছে। যবিপ্রবি ছাড়াও যশোরে বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, যশোর আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে এন্টিজেন ও জিন এক্সপার্ট পরীক্ষার পর আরও ৪৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৪, অভয়নগরে ১৭, চৌগাছায় ৮, ঝিকরগাছায় ২৬, কেশবপুরে ৩, মনিরামপুরে ২ ও শার্শায় ২১ জন। উলেস্নখ্য, করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৯ জুন দিবাগত রাত থেকে যশোর ও নওয়াপাড়া পৌরসভার সব ওয়ার্ডে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তমিজুল ইসলাম। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতি প্রতিদিন রেকর্ড ভাঙছে। এরপর গত ১৫ জুন জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির দ্বিতীয় সভায় বিধিনিষেধ বাড়িয়ে যুক্ত করা হয় ঝিকরগাছা পৌরসভা, সদরের উপশহর, নওয়াপাড়া, আরবপুর, চাঁচড়া, শার্শা ইউনিয়ন ও বেনাপোল বাজার। যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজেস্ট্রিট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান বলেন, করোনার শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় আর একটি করোনা ডেডিকেটেট হসপিটাল প্রস্তুত করা হয়েছে। সদর হসপিটালে করোনা রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেলে সেখানেও রোগী হস্তান্তর শুরু করা হবে। পাশাপাশি লকডাউনে স্বাস্থবিধি মেনে চলতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রশাসন সর্বোচ্চ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।