বিভিন্ন জেলার করোনা চিত্র

রাজশাহীতে মৃতু্যর রেকর্ড আরও ৬ জেলায় মৃত ৩৯

প্রকাশ | ২৫ জুন ২০২১, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনায় মৃতু্যতে একের পর এক রেকর্ড গড়ছে রাজশাহী। চলতি মাসের গত ২৪ দিনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে গড়ে প্রতিদিন ১১ জনের মৃতু্য হয়েছে। তবে রেকর্ড পেছনে ফেলে শেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৮ জনের মৃতু্যর খবর জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যা এ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে একদিনে সর্বোচ্চ মৃতু্য। এছাড়া বগুড়ায় করোনায় মারা গেছেন ৩ নারীসহ ৮ জন। করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে যশোর ও সাতক্ষীরায় ৯ জন করে, খুলনার তিন হাসপাতালে ৬ জন, ময়মনসিংহে এক শিশুসহ ৪ জন এবং ঝিনাইদহে ৩ জন মারা গেছে। আমাদের রাজশাহী অফিস জানিয়েছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে শেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১৮ জনের মধ্যে আটজনের করোনা পজেটিভ ছিল। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার মধ্যে বিভিন্ন সময় মৃতদের রাজশাহীর ১৩ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন, নওগাঁর চারজন। এদের মধ্যে চারজন মারা যান আইসিইউতে। এদের ১০ জন পুরুষ ও আটজন নারী। ছয়জনের বয়স ৬১ বছরের উপরে। বাকিদের মধ্যে ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে পাঁচজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে তিনজন এবং ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সের চারজন। এ নিয়ে চলতি মাসের গত ২৪ দিনে এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেলেন ২৬০ জন। এর আগে সবচেয়ে বেশি মারা যান গত ৪ জুন ও ২৩ জুন ১৬ জন এবং সবচেয়ে কম ১২ জুন চারজন। এদিকে টানা চারদিন কমার পর রাজশাহীতে ফের বাড়ল ভাইরাস শনাক্তের হার। বুধবার দুটি ল্যাবে রাজশাহীর ৩৮০ নমুনা পরীক্ষা করে ১২৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। যা আগের দিনের চেয়ে দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়ে করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। উলেস্নখ্য, গত ১১ জুন থেকে রাজশাহী শহরে সাতদিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। পরে তা আরও সাতদিন বাড়ানো হয়। যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২৪ জুন রাত ১২টায়। কিন্তু সংক্রমণ ও মৃতু্য না কমায় লকডাউন আরও সাতদিন বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া জানিয়েছেন, বগুড়ায় করোনা সংক্রমণ ও মৃতু্য দুটোই বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার ৩ হাসপাতালে করোনায় মারা গেছেন ৩ নারীসহ ৮ জন। এদের মধ্যে ৫ জনের বাড়ি জয়পুরহাট, ২ জনের বাড়ি বগুড়া এবং একজনের বাড়ি নওগাঁ। এদিকে বগুড়া শহর ও সদর এলাকায় কঠোর ও সর্বাত্মক বিধিনিষেধ চললেও জেলার অন্য উপজেলাতেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। আক্রান্তের সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে ১০ উপজেলার গ্রাম এলাকাতে করোনা রোগী রয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন জানান. গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৯৮ জন। সংক্রমণ হার ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ। করোনা ডেডিকেটেড বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শফিক আমিন কাজল জানান রোগী বৃদ্ধির হার নিয়ে তারা শঙ্কিত। রোগী বৃদ্ধির হার একই থাকলে ২ দিন পর আর রোগী ভর্তির জায়গা থাকবে না। স্টাফ রিপোর্টার, যশোর জানান, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৮৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই সময়ে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ৯ জনের মৃতু্য হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জন করোনা পজেটিভ এবং ৪ জনের উপসর্গ ছিল। যশোর সিভিল সার্জন অফিসের করোনা ফোকাল পারসন ডা. মো. রেহনেওয়াজ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যশোরে মোট ৫০২ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে পিসিআর ল্যাবে ২৭৭ জনের মধ্যে ১১৬ জন এবংর্ যাপিড এন্টিজেন টেটেস্ট ২২৫ জনের মধ্যে ৭১ জন করোনা পজেটিভ হয়েছেন। আক্রান্তের হার ৩৭ ভাগ। এদিকে, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় যশোরে টানা তৃতীয় সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়েছে। ২৩ জুন মধ্যরাত থেকে এই লকডাউন শুরু হয়। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিধিনিষেধ এলাকাভিত্তিক থেকে জেলাজুড়ে সম্প্র্রসারণ করা হয়েছে। সাতক্ষীরায় কঠোর লকডাউন দিয়েও করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আটজন ও ক্লিনিকে একজন মোট ৯ জনের মৃতু্য হয়েছে। এদের সবাই করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। নিহতদের মধ্যে চারজন নারী রয়েছেন। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ফোকাল পার্সন ডা. মানস কুমার মন্ডল আরও বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের হার ৩৪.০২ ভাগ। এছাড়া এ পর্যন্ত জেলায় করোনা পজিটিভ নিয়ে মৃতু্য হয়েছে ৬৩ জনের ও করোনা উপসর্গ নিয়ে ২৯৭ জন মারা গেছেন। এদিকে খুলনার সরকারি ও বেসরকারি তিনটি হাসপাতালে একদিনে ছয় জনের মৃতু্য হয়েছে। মৃতদের দুইজন সাতক্ষীরার। এছাড়া গোপালগঞ্জ, নড়াইল, বাগেরহাট ও যশোরের একজন করে রোগী রয়েছেন। পাশাপাশি গত রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে আরও ১৯১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা জেলারই ১৬৫ জন রয়েছেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ২৪ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৪৮ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হয়েছেন ৩২ জন ও ছাড়পত্র নেন ৩৯ জন রোগী। এ সময়ে মারা গেছেন একজন। এছাড়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে ১০ বছরের এক শিশুসহ চারজনের মৃতু্য হয়েছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃতু্য হয় বলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিটের কনসালট্যান্ট ও কোভিড ইউনিটের ফোকাল পার্সন ডা. মহিউদ্দিন খান মুন জানান। মহিউদ্দিন বলেন, জেলায় নতুন করে ৫৭ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২১ জন ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালের সাধারণ বেডে ১৫৯ জন ও আইসিইউতে ১১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানান তিনি। ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহে ২৪ ঘণ্টায় ১৪৩টি নমুনা পরীক্ষা করে আরও ৭৩ জনের শরীরে করোনার অস্তিত্ব মিলেছে। মারা গেছে তিনজন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল তিন হাজার ৭১১ জন। আর মোট মৃতু্যর সংখ্যা দাঁড়াল ৭৮ জনে। এদিকে দিন যতই গড়াচ্ছে করোনা পরিস্থিতি ভয়ানক হচ্ছে। সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে করোনা বিভাগে গত এক সপ্তাহ আগে ৫০ শয্যার বিপরীতে স্থান সংকুলান না হওয়াই আরও ২০টি শয্যা বাড়ানো হয়। বর্তমানে এ বিভাগে ভর্তি রয়েছে ৬৮ জন। এর মধ্যে ৫১ জনের করোনা পজেটিভ এবং ১৭ জনের উপসর্গ রয়েছে। এমন কি যে অক্সিজেন আছে তা আর মাত্র তিন দিন চলবে। ফলে তরল অক্সিজেন চাওয়া হয়েছে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারুন-অর-রশিদ জানান, হাসপাতালে প্রতিদিন নতুন নতুন করোনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেখা দিয়েছে চিকিৎসক সংকট। ঝিনাইদহে করোনা সংক্রমণ রোধে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয়েছে এক সপ্তাহের বিশেষ লকডাউন।