বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
ফরিদপুর

কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনের চেষ্টায় চাষিরা

শেখ মফিজুর রহমান শিপন
  ২৭ জুলাই ২০২১, ০০:০০
ফরিদপুরের বোয়ালমারীর ধুলপুকুরিয়ায় পাট কাটতে ব্যস্ত চাষিরা -যাযাদি

পাটের জেলা ফরিদপুর। তাই তো সরকারিভাবে এ জেলার স্স্নোগান- 'সোনালি আঁশে ভরপুর, ভালোবাসি ফরিদপুর'। চলতি মৌসুমে জেলার অধিকাংশ কৃষাণ-কৃষাণী পাট উৎপাদনে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে।

ফরিদপুর জেলাজুড়ে এখন চলছে 'সোনালি আঁশখ্যাত' পাট ঘরে তোলা প্রক্রিয়ার কাজ। কেউ ক্ষেত থেকে কাটছে, কেউ আবার আঁটি বেঁধে জাগ দেওয়ার জন্য ছুটছে নদ-নদী কিংবা জলাশয়ের ধারে। কেউ আবার পানি থেকে তুলে পাটের আঁশ বাছাই করে ধুয়ে রোদে শুকানোর কাজে সময় পার করছেন। আর যারা আগড় (আগেভাগে) এ প্রক্রিয়া শেষ করেছে তারা বিক্রি করার কাজে ব্যস্ত।

ফরিদপুর জেলার ৯ উপজেলায় চলছে এমন চিত্র। প্রতি মৌসুমে জেলার আবাদি জমির অধিকাংশেই পাট চাষ হয়। চাষে উপযোগী মাটির স্বাস্থ্য ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ফরিদপুরে গুণগত মানসম্পন্ন পাট উৎপাদন হয়, যা পৃথিবীজুড়ে সমাদৃত। চলতি মৌসুমে জেলার দেড় লক্ষাধিক চাষি তাদের জমিতে পাটের চাষ করেছেন।

ফরিদপুর পাট গবেষণা অফিস সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরে দুই জাতের (তোসা জিআরও ৫২৪-ভারতীয় এবং মাস্তে ও-৯৮৯৭ দেশি জাত) আবাদ হয়। এর মধ্যে ভারতীয় জাতের ৯০ শতাংশ চাষ হয়ে থাকে।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত ২০১০-১১ সালে ৭৫ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমিতে আবাদ করে চাষিরা আট লাখ ৭৩ হাজার ৫৩ বেল পাট উৎপাদন করেছে।

চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে ফরিদপুরে পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল (১৮০ কেজিতে ১ বেল)। গত ১০ মৌসুমে জেলায় পাটের আবাদ বেড়েছে ৯ হাজার ১০৯ হেক্টর জমিতে।

ফরিদপুর পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (পিএসও) ডক্টর রণজিৎ কুমার ঘোষ জানান, ফরিদপুরে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে জমি থেকে পাট কাটা হয়।

তিনি বলেন, জেলায় দেড় লক্ষাধিক চাষি পাট চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এছাড়া প্রতি বছরই নতুন নতুন চাষি যুক্ত হন পাট আবাদে।

জেলার সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের পাটচাষি হাবিব মোল্যা ও আকমল খান জানান, যদি পাটের দাম প্রতি মণ ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার থাকে তাহলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে।

বোয়ালমারীর বিভিন্ন মাঠের পাট চাষি দাবি করেন, বিগত বছরগুলোর অধিকাংশ সময়ই পাটের ন্যায্যমূল্য পাননি তারা, তবে গত দুই বছর ধরে তুলনামূলক ভালো দর পাচ্ছেন। এ উপজেলার ঘোষপুরের পাট চাষি মজিবুর রহমান জানায়, গত বছরের তুলনা দুই হেক্টর বেশি জমিতে পাটের আবাদ করেছি। ক্ষেতে পাটের ফলনও বেশ হয়েছে। আশা করছি উৎপাদন ভালো হবে।

জেলার পাট চাষের অন্যতম নগরকান্দার পাট চাষি আবজাল হোসেন, জসিম তালুকদারসহ আরও অনেকেই জানান, গত বছরের তুলনায় পাটের আবাদ বেশি করেছেন।

জেলার পাটের বাজার হিসেবে পরিচিত সালথা বাজারের পাট ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন জানান, ফরিদপুর অঞ্চলের পাটের বিশেষ গুণ হলো 'আঁশের দানা অন্য অঞ্চলের দানার চেয়ে ভালো মানের'। যে কারণে জগৎবিখ্যাত 'সোনালি আঁশ' পাট উৎপাদন হয় ফরিদপুরে।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডক্টর হযরত আলী জানান, আবহাওয়াগতভাবে ফরিদপুর অঞ্চল পাট আবাদের জন্য উপযোগী, এ জেলার মাটি পাট চাষের জন্য উত্তম, যে কারণে এর আঁশ গুণগত মানসম্পন্ন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে