আজ বিশ্ব বাঘ দিবস

নতুন বিপদে সুন্দরবনের বাঘ

সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি

প্রকাশ | ২৯ জুলাই ২০২১, ০০:০০ | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২১, ০০:২০

আলতাব হোসেন

সরকারের নানা উদ্যোগেও বিপদমুক্ত হতে পারছে না সুন্দরবনের বাঘ। সুরক্ষার অভাবে বিপন্ন হতে চলেছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এরমধ্যে মহামারি করোনা ডোরাকাটা বাঘের জন্য নতুন বিপদ নিয়ে এসেছে। করোনা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত তিনটি বাঘকে হত্যা করা হয়েছে। বাগেরহাটে একটি বাঘের চামড়া, অঙ্গপ্রত্যঙ্গসহ পাচারকারীকে আটক করেছে বন বিভাগ। চোরা শিকারিরা দুটি বাঘকে ফাঁদে আটকে হত্যা করেছে। সুন্দরবনে বছরে গড়ে এক থেকে দুইটি বাঘ হত্যা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন সম্প্রতি জাতীয় সংসদে বলেছেন, সুন্দরবনে গত দুই দশকে ৩৮টি বাঘ মারা গেছে। এর মধ্যে সিডরের আঘাতে একটি, দুষ্কৃতকারীরা হত্যা করেছে ১০টি, জনতার পিটুনিতে মারা গেছে ১৪টি এবং অস্বাভাবিক মৃতু্য হয়েছে ১৩টির। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে বাঘ তার আবাসস্থল হারাতে যাচ্ছে, সুন্দরবনে কয়লাভিক্তিক বিদু্যৎ ও শিল্পকারখানার দূষণ, বনের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচল, আন্তর্জাতিক চোরা শিকারিদের উৎপাত ও স্থানীয় মানুষের অমানবিক নিষ্ঠুরতায় মরছে বাঘ। সুন্দরবনের মধ্যে লোকালয় গড়ে ওঠায় বাঘ আর মানুষের মধ্যে সংঘাতে মরছে বাঘ। বাঘের বাসস্থান ও খাদ্যের সংকট বাড়ছে। সুন্দরবনের মধ্যে থাকা নদ-নদীর পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং মাছ ধরতে কীটনাশক প্রয়োগের ফলে। লবণাক্ত ও কীটনাশকযুক্ত পানি পান করে বাঘ লিভারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে হারিয়ে যাবে বিশ্ব-ঐতিহ্য সুন্দরবনের বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের সর্বশেষ গবেষণায় এমন আশঙ্কার কথাই উঠে এসেছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হবে। 'বাঘ বাঁচায় সুন্দরবন-সুন্দরবন বাঁচায় লক্ষ জীবন'। এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ পালিত হবে বিশ্ব বাঘ দিবস। বিশ্বজুড়ে বিলুপ্ত হতে যাওয়া এই প্রাণী রক্ষায় বিশ্ববাসীর উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিশ্বে বাঘ আছে, এমন ১৩টি দেশ দিবসটি পালন করবে। ২০১০ সাল থেকে বাঘ দিবস পালিত হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) রেড ডেটা বুক অনুযায়ী বাঘ বিশ্বের মহা বিপন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত। মহামারি করোনার কারণে দিবসটি উপলক্ষে ভার্চুয়ালি আলোচনা করবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। মহা বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত বাঘ পৃথিবীর মাত্র ১৩টি দেশে এখনো তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। এই ১৩টি বাঘসমৃদ্ধ দেশকে টাইগার রেঞ্জ কান্ট্রি (টিআরসি) বলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, বার্মা, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, ভুটান, নেপাল ও রাশিয়া। ২০০৪ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ও বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০। এরপর ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে ২০১৫ সালে বাঘ শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬টি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪টি। বন বিভাগ জানায়, বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে চলতি বছরের শেষে শীত মৌসুমে নতুন বাঘ শুমারি শুরু হবে। ইতোমধ্যে শুমারির প্রাথমিক প্রস্তুতি চলছে। শুমারি শেষে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যার তথ্য তুলে ধরা হবে। আগামী ২০২২ সালে রাশিয়ায় আবার বাঘ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে নতুন বাঘ শুমারির তথ্য উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে বন সংরক্ষণক (বন্যপ্রাণী সংরক্ষক ও প্রকৃতি) মুল্যা রেজাউল করিম বলেন, দুই বছর ধরে বন্যপ্রাণী শিকার কমেছে। বাঘ এবং হরিণের সংখ্যা বেড়েছে। সম্প্রতি পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে বাঘের আনাগোনা বেশি দেখা যাচ্ছে। নদীর চর ও খালধারে বাঘের পায়ের ছাপও মিলছে বেশি। বাঘ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার যায়যায়দিনকে বলেন, সরকার সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়ে বদ্ধপরিকর। সুন্দরবনের বনদসু্যদের গ্রেপ্তার ও আত্মসমর্পণ করিয়ে বাঘের বিচরণ এলাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। যথাযথ মনিটরিং এবং টাইগার প্রজেক্ট বাস্তবায়নসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ায় বাঘের সংখ্যা বেড়ে ১১৪টি হয়েছে। এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন যায়যায়দিনকে বলেন, সুন্দরবন ঘূর্ণিঝড়ে মায়ের মতো আচল বিছিয়ে লাখ লাখ মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করে। আর সেই সুন্দরবন রক্ষা করে বাঘ। বাঘ সংরক্ষণ করতে না পারলে সুন্দরবন থাকবে না। বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য নিরবচ্ছিন্ন টহল জোরদার করা হয়েছে। বাঘের নিরাপদ আবাসস্থল গড়তে সুন্দরবনের ৫২ শতাংশ এলাকাকে অভয়ারণ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।