বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকৃতি ও জীবন

ফুলের রাজ্যে করোনার হানা

তারেক মাহমুদ, ঝিনাইদহ
  ৩০ জুলাই ২০২১, ০০:০০
আপডেট  : ৩০ জুলাই ২০২১, ০০:৫৯
ঝিনাইদহে গাছের পরিচর্যা করছেন এক চাষি

দুই বিঘা জমিতে গাঁদা আর এক বিঘা জমিতে লাল গোলাপ চাষ করেছেন কৃষক রাজু। প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা খরচ করে চাষ করা জমিতে সবেমাত্র ফুল ওঠা শুরু করেছে। সপ্তাহে গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার ফুলও বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু করোনাকালীন লকডাউনে কেনাবেচা বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি জেলার সদর উপজেলার গান্না গ্রামের পূর্বপাড়ার মিয়া বাড়ির ছেলে। রাজুর ভাষ্য, করোনার আগে দেশীয় জাতের গোলাপ দুই থেকে তিন টাকা এবং থাই জাতের গোলাপ পাঁচ থেকে সাত টাকায় বিক্রি করতেন। কিন্তু লকডাউনে সে ফুল ৫০ পয়সা থেকে ২ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া এক বান্ডিল গোলাপ লকডাউনের আগে ঢাকা বা চট্টগ্রামে পাঠাতে খরচ হতো ৩০০ টাকা। সেখানে এখন খরচ হচ্ছে প্রায় এক হাজার টাকা। ফলে বাধ্য হয়ে তিনি ফুল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। কালীগঞ্জ উপজেলার শাহুর ঘিঘাটির গ্রামের ফুলচাষি আনোয়ার হোসেন জানান, সরকার লকডাউন ঘোষণার পর সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় ফুলের তেমন চাহিদা নেই। একই অবস্থা জেলার হাজার হাজার ফুলচাষির। এ বছর ঝিনাইদহের ছয় উপজেলায় ১৭৩ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। গেল বছর এ জেলায় চাষ হয়েছিল ২৪৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি বছর সব থেকে বেশি ফুলের চাষ হয় জেলা সদর উপজেলার গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে। গেল ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ায় বিভিন্ন সময় লকডাউনে ফুল বিক্রিতে ধস নামে। ফলে জেলার ফুলচাষিদের ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়তে হয়। মাঝে করোনার ৪ প্রভাব কিছুটা কমে আসায় আবারও চাষিরা নতুন করে ফুলের চাষ শুরু করে। কিন্তু চলমান কঠোর লকডাউনে তাদের সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামের ফুলচাষি লিটন হোসেন জানান, 'এ বছর দুই বিঘা জমিতে লাল ও হলুদ গোলাপ চাষ করেছি। প্রতিদিন প্রায় এক হাজার গোলাপ ও দুই হাজার জারবেরা ফুল বিক্রি হতো। করোনার কারণে এখন ফুলের কেনাবেচা নেই। ক'দিন আগেও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বালিয়াডাঙ্গা, লাউতলা ও কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড দুপুর গড়ালে ফুলে ফুলে ভরে যেত। এসব বাজারে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ফুল কিনতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আসতেন। সকাল থেকেই বিভিন্ন রুটের বাসের ছাদে স্তূপ করে সাজানো হতো ফুল। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরে ট্রাক-পিকআপ ও ভ্যান ভরে ফুল যেত। ফুলচাষী, ব্যাপারী আর ফুল শ্রমিকদের হাঁকডাকে মুখরিত থাকত এলাকা। সেখানে এখন আর কাউকে দেখা যায় না। একই রকম অবস্থা জেলার বড় ফুলের হাট গান্না বাজারেও। সদর উপজেলার গান্না বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দাউদ হোসেন জানালেন, ফুলের ভরা মৌসুমে করোনার হানায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কবে নাগাদ ফুলের বেচাকেনা হবে তাও অনিশ্চিত। ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজগর আলী জানান, করোনাভাইরাসের কারণে ফুলচাষিরা বিপদে পড়েছে। তারা ফুল বিক্রি করতে পারছেন না। ফুলচাষ দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখলেও দ্রম্নত পচনশীল হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের কৃষকরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে