পদ্মায় ফেরি চলাচল বন্ধ

টানা বর্ষণে নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত পানিবন্দি লাখো মানুষ

প্রকাশ | ৩০ জুলাই ২০২১, ০০:০০ | আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২১, ০০:৫৯

যাযাদি ডেস্ক
পস্নাবিত বান্দরবানের নিম্নাঞ্চল

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে তিন দিনের টানা ভারী বর্ষণে বান্দরবানের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। সেইসঙ্গে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। এদিকে বৈরী আবহাওয়ায় ও পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাবাজার ঘাট কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, টানা বর্ষণে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে অসংখ্য ছোট-বড় মৎস্য ঘের ও পুকুর। তলিয়ে আছে সদ্য রোপা আমন, বীজতলা ও ফসলি জমি। আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, তিন দিনের টানা ভারী বর্ষণে পস্নাবিত হয়েছে বান্দরবান পৌরসভার ওয়াপদার ব্রিজ, বাসস্ট্যান্ড এলাকা, আর্মিপাড়া, মেম্বারপাড়া, হাফেজঘোনা, শেরেবাংলা নগর, বনানী স'মিল এলাকা, ইসলামপুর, কালাঘাটার ড্রাইভার পাড়া, ক্যাচিংঘাটাসহ শহরের নিম্নাঞ্চল। এছাড়াও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লামা-আলীকদমের লাইনঝিরি, শিলেরতুয়া, সিবাতলী, দরদরাঝিরি, রুমা, থানচি এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। এসব এলাকায় সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে সব ধরনের যান চলাচল। অন্যদিকে সাঙ্গু এবং মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বান্দরবান বাজার, মধ্যমপাড়া ও উজানী পাড়ার নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী অধিকাংশ ঘরবাড়ি উজান থেকে নেমে আসা পানির স্র্র্রোতে ভেসে গেছে। জানা গেছে, সোমবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণে পুরো জেলায় পাহাড়ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ছোটখাটো পাহাড়ধসের ঘটনাও ঘটেছে। নদীভাঙনের মুখে রয়েছে ব্রিজ-কালভার্ট, বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট। তবে এতে এখনো কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। আমাদের নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি জানান, তিন দিনের টানা ভারী বর্ষণের ফলে দক্ষিণ বাইশারী, পশ্চিম বাইশারী, নারিচ বনিয়া, ধুংরি হেডম্যান পাড়া, চাকঢালা, চেরারকুল, জারুলিয়াছড়ি, সোনাইছড়ি, তুমব্রম্ন পাড়া, পশ্চিমকুল কোনার পাড়া, রোহিঙ্গ্যা শিবির, বাঁকখালী, ছাগল খাইয়া, লেমুছড়ি মাঠসহ অনেক গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। এদিকে বাইশারী-গর্জানিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক, বাইশারী-ঈদগাও সড়ক, নাইক্ষছড়ি- সোনাইছড়ি সড়ক ভেঙে ও ধসে যাওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, জেলায় মোট ১৪০টি আশ্রয়কন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যা দুর্গতরা এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও বিদ্যালয়গুলোয় আশ্রয় নিচ্ছে। এছাড়াও সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্কুল-কলেজ পরিষ্কার করে খুলে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি। আমাদের মাদারীপুরের শিবচর প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ৬টি ফেরি চলাচল করলেও বৈরী আবহাওয়া ও পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ঘাট এলাকায় ঢাকাগামী যাত্রীদের চাপও রয়েছে। বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টির কারণে ঘাট এলাকায় যাত্রীরাও বিপাকে পড়েছে। ঘাটের টার্মিনালেও ৫ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে। বৃষ্টিতে ভিজেই পদ্মা পারাপারের জন্য অপেক্ষা করছে ঢাকামুখী যাত্রীরা। এসব যাত্রী মোটর সাইকেল, ইজিবাইক, মাহিন্দ্র বা অটোরিকশায় করে ঘাটে আসছে কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই। বাংলাবাজার ঘাট ম্যানেজার মো. সালাউদ্দিন মিয়া জানান, জরুরি পরিবহণ পারাপারের জন্য ৬টি ফেরি চালু ছিল। তবে বৈরী আবহাওয়া, পদ্মায় তীব্র সোত ও ঢেউয়ের কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আমাদের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, দুই দিনের টানা বর্ষণে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে অসংখ্য ছোট-বড় মৎস্য ঘের ও পুকুর। তলিয়ে আছে সদ্য রোপা আমন, বীজতলা ও ফসলি জমি। উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরের কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়াসহ বিভিন্ন নদ ও নদীর বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। বুধবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। টানা এই বৃষ্টির কারণে বিশেষ করে সাতক্ষীরার তালা, কলারোয়া, আশাশুনি, দেবহাটা, কালীগঞ্জ, শ্যামনগর ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। কলারোয়ার খোরদো এলাকার আইয়ুব হোসেন জানান, বেত্রবতী ও কপোক্ষাক্ষ নদীর উভয় পাশের বিল ও গ্রামগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। তালা উপজেলার পাটকেলঘাটার ভারসা গ্রামের লিটন জানান, কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত বিভিন্ন গ্রাম ও বিল পানিতে পস্নাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে মৎস্য ঘের ও কোটি কোটি টাকার মাছ। অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এসব এলাকার বিলগুলোয় সদ্য রোপা আপন ও বীজ তলার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া পানের বরজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরায় ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেরর তথ্য কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, ভারী বর্ষণে জেলার নিম্ন এলাকা পস্নাবিত হয়েছে। রোপা আমন, আউশ বীজতলা তলিয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের জরিপ করে ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণ করে তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা মো. আব্দুল বাছেদ জানান, ভারী বর্ষণে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। অতি বর্ষণজনিত ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণে এখনো পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাননি তারা।