বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

মৃতু্য সনদের সঙ্গে ঠিক হয় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াও!

চট্টগ্রাম অফিস
  ৩০ জুলাই ২০২১, ০০:০০

চট্টগ্রামে এ মুহূর্তে করোনায় আক্রান্ত রোগীর লাশ বেশি। সঙ্গে মুমূর্ষু রোগীও। আছে অন্য রোগেও মৃতু্য। যা বহনে অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কোনো পথ নেই। কঠোর লকডাউনের কারণে চলছে না লাশ বহনের মতো ব্যক্তিগত কোনো মাইক্রো বা সিএনজি অটোরিকশা। আর সরকারি অ্যাম্বুলেন্স তো সোনার হরিণ।

এ সুবাদে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বেসরকারি পর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে চলছে চরম নৈরাজ্য। আদায় করা হচ্ছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিন-চারগুণ বেশি ভাড়া। যা মৃত ব্যক্তির মৃতু্য সনদ নেওয়ার সময় ঠিক করে দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালে রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ চক্র। যাদের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে কর্তৃপক্ষের। তাদের কারণে হাসপাতাল থেকে লাশ বহনে সৃষ্টি হয়েছে নানা নৈরাজ্য।

গত কয়েকদিন হাসপাতালে আসা বিভিন্ন রোগীর স্বজন, ওয়ার্ড বয় ও অ্যাম্বুলেন্সের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বাসিন্দা এনামুল করিম বলেন, চমেক হাসপাতাল থেকে করোনা আক্রান্ত রোগীর স্বজনের লাশ নিতে ৭ হাজার টাকা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দিতে হয়েছে। অথচ স্বাভাবিক নিয়মে ভাড়া নেওয়া হয় ১৫০০ টাকা।

তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নেওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নির্ধারণ করে দেয় ওয়ার্ড মাস্টারের কক্ষে থাকা কয়েকজন। যা না মেনে বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্স আনতে চাইলেও কেউ লাশ পরিবহণ করতে আসেনি।

এর আগে মঙ্গলবার চমেক হাসপাতালে মারা যাওয়া স্বজনের লাশ নেওয়ার সময় আরিফুর রহমান নামে একজন বলেন, লোহাগাড়ায় যেতে ১০ হাজার টাকা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া আদায় করা হয়েছে। এটা নির্ধারিত ভাড়ার তিনগুণ বেশি। ডেথ সার্টিফিকেট নেওয়ার সময় হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টারের কক্ষে থাকা কয়েকজন এই ভাড়া নির্ধারণ করে দেন।

হাসপাতালের কয়েকজন ওয়ার্ড বয় জানান, ওয়ার্ড মাস্টারের কক্ষ থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নেওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ঠিক করে দেওয়া নতুন কিছু নয়, এটি দীর্ঘদিনের কাজ। অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির লোকজন ওই কক্ষে বসে থাকেন। তবে ওয়ার্ড মাস্টারের টেবিলে থাকা কয়েকজন কর্মচারী অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নির্ধারণ করেন। তারা মজুরি বাবদ জনপ্রতি মাসিক পাঁচ হাজার টাকা করে পান।

সূত্রমতে, অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির ১০৬ জনের ১৫০টি অ্যাম্বুলেন্স চমেক হাসপাতাল থেকে রোগী ও লাশ পরিবহণে কাজ করছে। এর মধ্যে ৮৪টি অ্যাম্বুলেন্সের লাশ পরিবহণের অনুমোদন রয়েছে। বাকি অ্যাম্বুলেন্সগুলো অনুমোদন ছাড়াই চলছে।

সূত্র আরও জানায়, হাসপাতালে কেউ মারা গেলে মৃতের স্বজনরা ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য ওয়ার্ড মাস্টারের কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। সেখানে দায়িত্বরতরা সমিতির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নির্ধারণ করেন। যা মানতে বাধ্য করা হয়।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সমিতির সদস্য মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ডেথ সার্টিফিকেটের সঙ্গে কৌশলে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। যা মানতে বাধ্য রোগীর স্বজনরা। এখানে নেওয়া অতিরিক্ত ভাড়া একটি চক্রের পকেটে ঢুকছে। ন্যায্য ভাড়া গাড়ির মালিকও পান না।

যোগাযোগ করা হলে চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম বলেন, এখানে অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ আছে। সমিতির নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হবে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, অতিরিক্ত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি আমরা। হাসপাতালের চক্রটির ওপর পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে