বিভিন্ন জেলার করোনা চিত্র

সাত জেলায় আক্রান্ত ও উপসর্গে ৬৯ মৃতু্য

প্রকাশ | ৩০ জুলাই ২০২১, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শনাক্ত ও মৃতু্য-দুটোই বেড়েই চলেছে সমানতালে। বৃহস্পতিবার আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২৩৯ জনের মৃতু্যর খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে রাজশাহীতে ১৭, ময়মনসিংহ ১৬, খুলনা ১৬, চাঁদপুর ৭, মৌলভীবাজার ৬, ঝিনাইদহ ৫ ও নাটোরে ২ জনের মৃতু্য হয়েছে। রাজশাহী অফিস জানায়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার মধ্যে করোনা ইউনিটে ১৭ জনের মৃতু্য হয়েছে। এর মধ্যে করোনায় পাঁচজন ও করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও ১০ জন। এছাড়া করোনামুক্ত হয়েও পরবর্তী স্বাস্থ্য জটিলতায় মারা গেছে আরও দুইজন। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে রাজশাহীর চারজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন, নাটোরের তিনজন, পাবনার পাঁচজন, কুষ্টিয়ার দুইজন ও বগুড়ার একজন। এদের মধ্যে নয়জন পুরুষ এবং আটজন নারী। এদিকে হাসপাতালের পরিচালক জানান, বুধবার দুইটি ল্যাবে রাজশাহী জেলার ৪২৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১২৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে করোনা পজিটিভ ও উপসর্গ নিয়ে আরও ১৬ জনের মৃতু্য হয়েছে। এর মধ্যে করোনা আক্রান্তে ৩ জন এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যায় ১৩ জন। এ তথ্য নিশ্চিত করে করোনা ইউনিটের ফোকাল পারসন ডা. মহিউদ্দিন খান মুন জানান, করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটে নতুন ৮৩ জন ভর্তিসহ এখন পর্যন্ত ৪৫৩ জন এবং আইসিইউতে ২০ জন চিকিৎসাধীন আছেন। এদিকে সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৬৬০টি নমুনা পরীক্ষায় আরও ৪৫৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৭.৫৯ শতাংশ। জেলায় মোট আক্রান্ত ১৪ হাজার ৮৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ১০ হাজার ৭০৫ জন। খুলনা অফিস জানায়, খুলনার চারটি হাসপাতালে বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ১৬ জনের মৃতু্য হয়েছে। খুলনা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে করোনা আক্রান্তে ৭ জন, শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তিনজন, খুলনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একজন এবং গাজী মেডিকেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৫ জনের মৃতু্য হয়েছে। বেসরকারি সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে টানা তিন দিন কোনো রোগীর মৃতু্য হয়নি। বুধবার খুমেক আরটি-পিসিআর ল্যাবে ৩১১টি নমুনার মধ্যে খুলনার ২৭৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ১০২ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে খুলনার ৯২, বাগেরহাটের ৫, সাতক্ষীলার ১, যশোরের ৩ ও বরিশালের একজনের করোনা শনাক্ত হয়। চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুর ২৫০ শয্যার সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশেন ইউনিটে ৭ জনের মৃতু্য হয়েছে। বুধবার রাত ১০টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত এ মৃতু্যর ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২ জন করোনা আক্রান্ত ছিলেন। এ তথ্য জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সুজাউদ্দৗলা রুবেল। স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার জানান, মৌলভীবাজারে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একই পরিবারের ৪ ভাইবোনসহ মোট ৬ জনের মৃতু্য হয়েছে। তারা করোনায় আক্রান্ত হলে সিলেটের একটি হাসপাতালে আইসিইউতে ৭ দিন ধরে চিকিৎসায় ছিলেন। এতে অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় গেল ২৮ জুলাই সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গলের সিরাজনগর গ্রামের এক নারী ও কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের দক্ষিণভাগ এলাকার এক ব্যক্তি সিলেটের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃতু্যবরণ করেন। এদিকে করোনার সব উপসর্গ নিয়ে রাজনগর উপজেলার খেয়াঘাটবাজারের এক মেইকারের স্ত্রী ও তুলাপুর গ্রামের বাসিন্দা ৬ দিন জ্বর-কাশি নিয়ে বৃস্পতিবার সকালে মারা গেছেন। এদিকে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছেন আরও ৯১ জন। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিসিআর ল্যাবে মৌলভীবাজার জেলার ১৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় পাঠালে ৯১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা পজিটিভ নিয়ে পাঁচজন মারা গেছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৯৪ জনে। এছাড়া নতুন করে ২৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৭০ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। আক্রান্তের হার ২৯ দশমিক ৪ ভাগ। সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা রোধ করা যাচ্ছে না। সরকারের দেওয়া নির্দেশনা না মেনে বিনা কারণে অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি আর স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। পুলিশ বা প্রশাসন কঠোর হলেও মানুষ সচেতন না হওয়ায় করোনার সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হবে না। নাটোর প্রতিনিধি জানান, নাটোরে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ২ জনের মৃতু্য হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ জন। নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৮২ জনের। সংক্রমণের হার ৩১.৮৬ শতাংশ। বৃহস্পতিবার নাটোর সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি রয়েছে ৬৩ জন। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র অনুযায়ী এ পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্ত ৬৬৮২ জন। সুস্থ হয়েছেন ২৭৪২ জন। হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৩৮৩০ জন। জেলায় এ পর্যন্ত মোট মৃতু্য বরণ করেছে ১১১ জন।