জাতীয় পার্টিতে চলমান সংকট

রওশনের অবস্থান নিয়ে রহস্য

প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২১, ০০:০০ | আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২১, ০০:০৯

ফয়সাল খান

নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার পথে থাকা জাতীয় পার্টি (জাপা) ফের সংকটের মুখে পড়েছে। পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিটিকে চ্যালেঞ্জ করে এরিক এরশাদ নতুন কমিটির প্রস্তাব করলে এই সংকটের সূচনা হয়। তবে এতে মূল রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের অবস্থান নিয়ে। এরিক এরশাদের প্রস্তাবিত কমিটিতে তার চাচা ও বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে রাখা না হলেও কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদকে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষ থেকে প্রায় একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে, রওশন এরশাদ জি এম কাদেরকে ফোন করে পার্টির কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ১৪ জুলাই রাতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের সঙ্গে বেগম রওশন এরশাদের টেলিফোনে কথা হয়। আলাপকালে বেগম রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হতে তিনি আগ্রহী নন। গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বে দল সঠিকভাবে চলছে। এ সময় রওশন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হিসেবে তার সাফল্য ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। অন্যদিকে এরিক এরশাদের প্রস্তাবিত কমিটির মূল চালকের ভূমিকায় রয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক। বৃহস্পতিবার বিকালে যায়যায়দিনের কাছে তিনি দাবি করেছেন রওশন এরশাদ তাদের সঙ্গেই আছেন। তবে এ ব্যাপারে রওশন এরশাদ এখনো স্পষ্ট করে কোনো বক্তব্য দেননি। বিভিন্ন মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও রওশন এরশাদের অবস্থান জানা যায়নি। যদিও জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা বলছেন, রওশন এরশাদ তার ইচ্ছার কথা এরই মধ্যে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। দুটি সংবাদমাধ্যমের নাম উলেস্নখ করে একজন নেতা দাবি করেছেন, রওশন এরশাদ ওই দুই সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছেন, পার্টির চেয়ারম্যান হওয়ার কোনো ইচ্ছা তার নেই। রওশন এরশাদের একটি ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। অন্য একটি নম্বরে কল দিলে তিনি তা রিসিভ করেননি। নতুন কমিটির বিষয়ে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, 'এটা আমরা জানি না। এটা আমরা গ্রহণ করিনি। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাজনৈতিক দল করার অধিকার যে কোনো মানুষেরই আছে, তবে কেউ একসঙ্গে দুটি দল করতে পারবেন না।' এদিকে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক তার ছেলে এরিক এরশাদকে দিয়ে কমিটি ঘোষণা করালেও হালে পানি পাচ্ছে না নতুন কমিটি। সারাদেশে কমিটি গঠন করতে গিয়েও নেতাদের সাড়া পাচ্ছেন না। এমনকি বেগম রওশন এরশাদকে সঙ্গে রাখলেও তিনি এখন পর্যন্ত নতুন কমিটির পক্ষে অবস্থান স্পষ্ট করেননি। বরং বিভিন্ন মাধ্যমে জি এম কাদেরের নেতৃত্বকে সমর্থন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জানতে চাইলে বিদিশা সিদ্দিক বৃহস্পতিবার বিকালে যায়যায়দিনকে বলেন, 'এরিক জাতীয় পর্টির নতুন কমিটির প্রস্তাব করেছে। এখন কমিটি গঠনের কাজ চলছে। গুলশানে অফিস নিয়েছি, সেখানে সবাই ব্যস্ত সময় পার করছি। কমিটি গঠনের ব্যাপারেও সারাদেশ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'রওশন এরশাদ আমাদের সঙ্গে আছেন। তিনি আমাদের সঙ্গে নেই এমন কোনো বক্তব্য এখনো পর্যন্ত গণমাধ্যমে দেননি। যেটা সবাই প্রচার করছে এটা পার্টির চেয়ারম্যানের বক্তব্য।' অপরদিকে জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, নতুন কমিটির প্রস্তাব বিদিশার স্ট্যান্টবাজি। এসব কমিটির নাম দিয়ে তারা কিছুই করতে পারবে না। নতুন কমিটি প্রসঙ্গে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, 'এটা বোগাস কমিটি। আলোচনায় থাকার জন্যই বিদিশা এমনটা করছেন। বিশেষ করে এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য না করায় তিনি ইন্ধন জুগিয়ে নতুন কমিটি দিয়েছেন। অথচ রওশন এরশাদ কিছুই জানেন না।' সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, 'চেয়ারম্যান এরশাদ মারা যাওয়ার পর একবার ঝামেলা হয়েছিল। আমি মহাসচিব হিসেবে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দিয়েছি। এখন বিদিশা যা করছেন, এগুলো কর্মচারীর মতো।' অপর সূত্রগুলো বলছে, নানা সময়ে বিতর্কের জন্ম দিয়ে আলোচনায় এসেছে জাতীয় পার্টি। সাম্প্রতিক সময়ে পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছিল কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য না করাসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে পদে না রাখায় কয়েকজন ক্ষুব্ধ হয়ে নতুন কমিটি দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবদ্দশাতেই জাতীয় পার্টিতে বেশ কয়েকবার অস্থিরতা দেখা দেয়। এরশাদের মৃতু্যর পরও বেশ কয়েকবার ভাঙনের মুখে পড়ে জাতীয় পার্টি। তবে এরশাদের মৃতু্যবার্ষিকীর দিন গত ১৪ জুলাই জাতীয় পার্টির ভাঙন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়। জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃতু্যবার্ষিকীর দিনেই এরশাদের স্ত্রী সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান করে জাপার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়াও এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক এবং ছেলে রাহগীর আল মাহি শাদকে (শাদ এরশাদ) কো-চেয়ারম্যান পদে রাখা হয়। এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদকে করা হয় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।