জামালগঞ্জে অভাবে দিন কাটাচ্ছেন কারিগররা

প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২১, ০০:০০

মো. ওয়ালী উলস্নাহ সরকার
বাঁশ আর বেতকেই জীবিকার প্রধান বাহন হিসেবে আঁকড়ে রেখেছেন জামালগঞ্জ উপজেলার অর্ধশত কারিগর। এই বাঁশ-বেতই বর্তমানে তাদের জীবিকার বাহন। কিন্তু দিন দিন বাঁশ বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত অর্ধশত কারিগর। তবু পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যবাহী পেশাকে ধরে রেখেছেন কিছুসংখ্যক পরিবার। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে জামালগঞ্জ উপজেলায় বাঁশ-বেত শিল্পের তৈরি মনকাড়া বিভিন্ন পণ্যের জায়গা করে নিয়েছে কম দামের পস্নাস্টিক ও মেলামাইন জাতীয় পণ্য। বাঁশ বেতের তৈরি পণ্যগুলো এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। কদর না থাকায় গ্রাম-গঞ্জ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের তৈরি বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। অভাবের তাড়নায় এই শিল্পের কারিগররা দীর্ঘদিনের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। শত অভাব অনটনের মাঝেও এ উপজেলায় হাতেগোনা কিছু পরিবার এই পেশাটি ধরে রেখেছেন। জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ভাটি লালপুর গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি পরিবার বাঁশ- বেতের কাজ করে যাচ্ছেন। পুরুষদের পাশাপাশি ছেলেমেয়েরাও অনেক ধরনের পণ্য তৈরি করছেন। বাঁশ থেকে উঠানো বেত দিয়ে এইসব পণ্য তৈরি করেছেন তারা। তাদের পূর্বপুরুষদের পেশা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। অপ্রতুল ব্যবহার আর বাঁশ ও বেতের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এই শিল্প আজ হুমকির মুখে। বাঁশ-বেত থেকে তৈরি বাচ্চাদের দোলনা, হাতপাখা, ধান উড়ানোর কুলা, ঢালা, মাছ ধরার পলো, মাটি কাটার পাতি বা উরাসহ হাওড়াঞ্চলের সর্বত্র মানুষের কাছে পছন্দনীয় ছিল। ভাটি লালপুর গ্রামের আহমদুল হক জানান, ২৫ বছর ধরে এই পেশায় আছি। একসময়ের যে বাঁশ ৫০ টাকায় কিনা যেত, সেই বাঁশ এখন ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনতে হয়। আগে একজোড়া বেতের দাম ছিল ৬০০ টাকা। এখন কিনতে হয় ৯০০ টাকায়। বর্তমানে একটি পাতি বা উরা তৈরিতে খরচ হয় ৮০ টাকা। আবার বেত লাগাতে হয় আরও ৭০ টাকার। বাজারে বিক্রি করি ২০০ থেকে ২২০ টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি উরায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা লাভ হয়। একই পেশায় থাকা মো. খুরশিদ মিয়া ও ছায়েদ মিয়া জানান, আগে বাঁশ ও বেতের সামগ্রীর কদর ছিল। বর্তমানে পস্নাস্টিকের জিনিসপত্র অর্ধেক দামে কেনা যায়। তাই বাঁশ বেতের তৈরি জিনিসপত্রের কদর কমে গেছে। সে কারণে অনেকে এ কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। আমাদের যে বয়স তাতে অন্য পেশায় যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই এ কাজ করে যা লাভ হয় তা দিয়ে কোনোরকম সংসার চালাই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাঁশ-বেতের কাজ করি। প্রতি হাটবারে বাজারে গিয়ে বিক্রি করি। তারা আরও জানান, খেয়ে না খেয়ে অতি কষ্টে তাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যবাহী পেশা টিকিয়ে রাখতে ধার- দেনা করে চলতে হচ্ছে। সরকারিভাবে অল্প সুদে বিসিক কিংবা অন্য কোনো সংস্থা থেকে যদি ঋণ পাওয়া যেত তাহলে এ শিল্পের কারিগররা হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রেখে টিকে থাকতে পারত।