শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির কমিটি ঘোষণা

বাইরের নেতারা চালকের আসনে নগর নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৩ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
আপডেট  : ০৩ আগস্ট ২০২১, ০০:১২

বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক শাখা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। দুই কমিটিতেই শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হয়েছে মহানগরের বাইরের নেতাদের। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে উত্তরের আসন ঢাকা-১৩ থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া আবদুস সালামকে দক্ষিণের আহ্বায়ক করা হয়েছে। এর বাইরে এ শাখার সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আহ্বায়ক আমান উলস্নাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক কখনো ঢাকা মহানগর বিএনপির রাজনীতিতের কোনো পদে ছিলেন না। শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে নগর নেতাদের বাদ দেওয়ায় কমিটি নিয়ে ক্ষোভ আছে নেতাকর্মীদের মাঝে। সোমবার বিকালে আমানের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর উত্তরে ৪৭ সদস্যের এবং সালামের নেতৃত্বে দক্ষিণে ৪৯ সদস্যের কমিটি দিয়েছে বিএনপি। বিকালে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের চলতি দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ জানান, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। আহ্বায়ক কমিটিতে কাউন্সিলের মাধ্যমে পরবর্তী কমিটি করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও ঘোষিত কমিটিতে তা দেওয়া হয়নি। ঢাকা উত্তরের কমিটিতে ১০ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ৩৫ জনকে সদস্য করা হয়েছে। আর দক্ষিণে ১২ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ৩৫ জনকে সদস্য করা হয়েছে। বিগত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলের দুই প্রার্থী তাবিথ আউয়াল (উত্তর) ও ইশরাক হোসেনকে (দক্ষিণ) কমিটিতে ১ নম্বর সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। ঢাকা উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়কেরা হলেন-আব্দুল আলী নকি, আনোয়ারুজ্জামান, আতিকুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, ফেরদৌসি আহমেদ, এ জি এম শামসুল হক, মোয়াজ্জেম হোসেন, আতাউর রহমান, আক্তার হোসেন ও গোলাম মোস্তফা। কমিটিতে সদস্যরা হলেন-ফয়েজ আহমেদ, শাহিনুর আলম, আবুল হাসেম, মাহফুজুর রহমান, আলাউদ্দিন সরকার, তুহিনুল ইসলাম, হাফিজুর রহমান, সোহেল রহমান, মো. আক্তারুজ্জামান, আবুল হোসেন, মো. শাহ আলম, এল রহমান, আফাজ উদ্দিন, আহসান হাবিব মোলস্না, সালাম সরকার, গোলাম কিবরিয়া, এ বি এম রাজ্জাক, তারিকুল ইসলাম, হাজী মো. ইউসুফ, আলী আকবর আলী, আহসান উলস্নাহ চৌধুরী, মিজানুর রহমান, হুমায়ুন কবির, আমজাদ হোসেন, রেজাউর রহমান, মাহবুব আলম, হাফিজুর রহমান, জাহাঙ্গীর মোলস্না, আজহারুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, আফতাব উদ্দিন, মো. হানিফ মিয়া, মো. মোজাম্মেল হেসেন ও মো. জিয়াউর রহমান। ঢাকা দক্ষিণ কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কেরা হলেন নবী উলস্ন্যাহ, ইউনুস মৃধা, মো. মোহন, মোশারফ হোসেন, আবদুস সাত্তার, সিরাজুল ইসলাম, আ ন ম সাইফুল ইসলাম, হারুন অর রশিদ, তানভীর আহমেদ রবিন, লিটন মাহমুদ, এস কে সেকেন্দার কাদির ও মনির হোসেন। আর সদস্যরা হলেন-ইশরাক হোসেন, ফরিদ উদ্দিন, গোলাম হোসেন, সাব্বির হোসেন, ফারুকুল ইসলাম, মকবুল হোসেন, আবদুল হান্নান, আরিফুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, কে এম জুবায়ের এজাজ, ফরহান হোসেন, লতিফ উলস্নাহ, মকবুল হোসেন সরদার, মোহাম্মদ আলী, আবদুল আজিজ, জামিনুর রহমান, হাজী শহিদুল ইসলাম, আকবর হোসেন, শামছুল হুদা, সাইদুর রহমান, এস এম আব্বাস, লোকমান হোসেন, জুম্মন হোসেন, ফজলে রুবায়েত, আবদুল হাই, মহিউদ্দিন চৌধুরী, আরিফা সুলতানা, সাইফুলস্নাহ খালেদ, ওমর নবী, আবুল খায়ের, নাছরিন রশিদ, নাদিয়া পাঠান, হাজী নাজিম, জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী ও জামশেদুল আলম। অভিযোগ উঠেছে, কমিটিতে পদ দেওয়ার ক্ষেত্রেও যোগ্যতা ও ত্যাগের মূল্যায়ন করা হয়নি। আগের কমিটির অনেককে বাদ দেওয়া হয়েছে। আগের কমিটির উত্তরের এম এ কাইয়ুম এবং দক্ষিণে হাবিব উন নবী খান সোহেল সভাপতি ছিলেন। এবারের কমিটিতে তাদের রাখা হবে না বলে রোববার রাতেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আগের কমিটির উত্তরের সিনিয়র সহ- সভাপতি বজলুল বসিত আন্‌জু, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার, যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিবকে কমিটিতে রাখা হয়নি। অথচ হাবিব ঢাকা মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে সবচেয়ে দূরদর্শী ও যোগ্য নেতা। উত্তরের সাধারণ সম্পাদক করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করেন আবদুল আলী নকী। তাকে এবার প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরের আহ্বায়ক হিসেবে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির নাম থাকলেও শেষ মুহূর্তে তাতে পরিবর্তন আসে। আবদুস সালামকে দক্ষিণের আহ্বায়ক করায় এ্যানিকে বাদ দিয়ে আমানকে উত্তরের আহ্বায়ক করা হয়। কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুই মহানগরের শীর্ষ পদ পাওয়া আমান ও সালাম দুইজন-ই বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। আমান ডাকসুর সাবেক ভিপি ও সালাম অবিভক্ত ঢাকা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মজনু যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আর আমিনুল বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক, তিনি জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার। কমিটি বিশ্লেষণে আরও সামনে আসে, ঢাকা মহানগরের প্রভাবশালী দুই নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার অনুসারীদের সমন্বয় করে দক্ষিণের নতুন কমিটি করা হয়েছে। দক্ষিণের আহ্বায়ক সালাম প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার অনুসারী। কমিটিতে খোকার অনুসারীদের সংখ্যাই বেশি। মহানগরের প্রভাবশালী আরেক নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের অনুসারী রফিকুল আলম মজনুকে দক্ষিণের সদস্য সচিব করা হয়েছে। ছাত্রদলের কয়েকজনকে মহানগর বিএনপিতে আনা হয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি থেকে বহিষ্কৃত নাদিয়া পাঠান পাপনকে সদস্য করা হয়েছে। সোমবার সকালে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া ছাত্রদলের সাবেক নেত্রী আরিফা সুলতানা রুমাকেও সদস্য করা হয়েছে। বিগত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিনকে দক্ষিণের ৯ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করে আরেকটি বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। তার মতো একজন নেতাকে সিরিয়ালি এত পেছনে রাখায় তার অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। পদ পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় আব্দুস সালাম বলেন, হাইকমান্ড তার ওপর যে আস্থা রেখেছেন তা পালনে আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। দক্ষিণ বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেবেন। একই বিষয়ে আমিনুল হক বলেন, দলের হাইকমান্ড তাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তা সততার সঙ্গে পালনের চেষ্টা করবেন। আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে থাকাদের অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রম্নত থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেবেন। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগরকে দুই ভাগ করে কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। হাবীব উন নবী খান সোহেলকে সভাপতি ও কাজী আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করে দক্ষিণে ৭০ সদস্যের এবং এম এ কাইয়ূমকে সভাপতি ও আহসান উলস্নাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে উত্তরে ৬৬ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে