শেলাবুনিয়ায় শায়িত হতে ফিরছেন ফাদার রিগন

প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
ফাদার মারিনো রিগন
বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিক মুক্তিযোদ্ধা ফাদার মারিনো রিগনের শেষ ইচ্ছা পূরণে তার মরদেহ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হচ্ছে। এ দেশের মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসগর্ করা এই ধমর্যাজককে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার শেলাবুনিয়া চাচের্র পাশেই সমাধিস্থ করার ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকার পর গত বছর ২০ অক্টোবর ইতালির ভিচেঞ্চায় মারা যান ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ পাওয়া ফাদার মারিনো। ঠিক এক বছরের মাথায় আজ তার মরদেহ কফিনবন্দি হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছাচ্ছে বলে শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার অনুবিভাগ। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকার তার শেষ ইচ্ছার প্রতি সম্মান প্রদশর্ন করে তার দেহাবশেষ বাংলাদেশের মাটিতে তারই স্থাপিত বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার শেলাবুনিয়া চাচের্র পাশ্বের্ সমাধিস্থ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে।’ মারিনো রিগন ১৯২৫ সালের ৫ ফেব্রæয়ারি ইতালির ভেনিসের কাছে ভিল্লভেরলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্টধমর্ প্রচারের উদ্দেশ্যে ১৯৫৩ সালে তিনি বাংলাদেশে আসেন। দেশের নানা জায়গা ঘুরে মোংলার শেলাবুনিয়া গ্রামে থিতু হন এবং সেখানে চাচর্ ও স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তবে তার কাজ ধমর্ প্রচারের গÐির মধ্যে থেমে থাকেনি। বাংলাদেশের মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার প্রসার, চিকিৎসা সেবা ও দুস্থ নারীদের উন্নয়নে তিনি সবসময় উদ্যোগী ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল তার অকুণ্ঠ সমথর্ন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিতে নিজের চাচের্ তিনি গোপনে একটি চিকিৎসা ক্যাম্প খোলেন। সেই ক্যাম্পে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ফিরে গেছেন রণাঙ্গনে। মুক্তিযুদ্ধের হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দিন বীরবিক্রমও তাদের একজন। মুক্তিযুদ্ধে ফাদার মারিনো রিগনের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে তাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়। ২০১২ সালে তাকে দেয়া হয় ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’। বাংলাদেশে বসবাস শুরু করার পর বাংলা ভাষা শিখতে শুরু করেন ফাদার মারিনো। একপযাের্য় তিনি বাংলা শিল্প-সাহিত্য নিয়ে গবেষণায় মন দেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও লালন ফকিরের সংগীত ও দশের্নর প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট ছিলেন খ্রিস্টান এই ধমর্ যাজক। রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলিসহ প্রায় ৪০টি কাব্যগ্রন্থ, লালন সঁাইয়ের ৩৫০টি গান, জসীম উদদীনের নকশীকঁাথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট ছাড়াও এ দেশের গুরুত্বপূণর্ কবিদের অনেক কবিতা তিনি অনুবাদ করেছেন ইতালীয় ভাষায়। ১৯৮৬ সালে ফাদার রিগনের সহযোগিতায় বাংলাদেশের একটি দল ইতালির মঞ্চে পরিবেশন করে নৃত্যনাট্য ‘নকশীকঁাথার মাঠ’। বাংলার নকশিকঁাথাকেও ইতালির বিভিন্ন শহরে তুলে ধরেছেন ফাদার রিগন। তার প্রতিষ্ঠিত শেলাবুনিয়া সেলাই কেন্দ্রে তৈরি করা নকশিকঁাথার চারটি প্রদশর্নী হয় ইতালির বিভিন্ন শহরে। তার কমর্পরিধির বিরাট অংশজুড়ে ছিল শিক্ষামূলক কাযর্ক্রম। তার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য তিনি বৃত্তির ব্যবস্থা করেন। ২০০১ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে পরিবারের সদস্যরা তাকে ইতালি নিয়ে যেতে চান। তখনই তিনি শতর্ দিয়েছিলেন, ইতালিতে মৃত্যু হলে তার মরদেহ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসগর্কারী সব মুক্তিযোদ্ধার ত্যাগের মহিমাকে সমুজ্জ্বল রাখার চেষ্টার অংশ হিসেবেই বাংলাদেশের এই ‘অকৃত্রিম বন্ধুর’ শেষ ইচ্ছা পূরণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।