অস্ত্র জমা দিয়ে ৪৩ সন্ত্রাসীর আত্মসমপর্ণ

প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

কক্সবাজার প্রতিনিধি
শনিবার দুপুরে মহেশখালী পৌরসভার আদশর্ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমপর্ণ করেন ৬ দুধর্ষর্ জলদস্যু বাহিনীর সদস্যরা Ñফোকাস বাংলা
কক্সবাজারের মহেশখালী ও কুতুবদিয়া অঞ্চলের ছয়টি দুধর্ষর্ জলদস্যু বাহিনীর শীষর্ ১২ দস্যুসহ ৪৩ সন্ত্রাসী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমপর্ণ করেছেন। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে মহেশখালী পৌরসভার আদশর্ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিযনে (র‌্যাব-৭) অস্ত্র জমা ও আত্মসমপর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে ৯৪টি আগ্নেয়াস্ত্র ও সাত হাজার ৬৩৭ রাউন্ড গুলি জমা দিয়ে আত্মসমপর্ণ করেন ৪৩ জন। এদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত জলদস্যুরা হলো মহেশখালীর আনজু বাহিনীর ১০ জন সদস্য, ২৪টি অস্ত্র, ৩৪৫টি গোলাবারুদ, রমিজ বাহিনীর ২ জন, ৮টি অস্ত্র ১২০টি গোলাবারুদ, নুরুল আলম ওরফে কালাবদা বাহিনীর ৬ জন, ২৩টি অস্ত্র, ৩৩৩টি গোলাবারুদ, জালাল বাহিনীর ১৫ জন, ২৯টি অস্ত্র ৬ হাজার ৭৯৮টি গোলাবারুদ, আইয়ুব বাহিনীর ৯ জন, ৯টি অস্ত্র ৩৭টি গোলাবারুদ ও আলাউদ্দিন বাহিনীর ১ জন, ১টি অস্ত্র, ৪টি গোলাবারুদ হস্তান্তর করা হয়। অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে, অত্যাধুনিক এসএমজি ১টি, ব্রিটিশ ৩৪ রিভলবার ১টি, দেশি পিস্তল ২টি, দেশি একনলা বন্দুক ৫২টি, দেশি দুই নলা বন্দুক ২টি ওয়ান শ্যুটারগান ১৯টি, থ্রি কোয়াটার্র ১৫টি ও ২২ বোর রাইফেল। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া নিদের্শনা রয়েছে দেশে কোনো অবস্থাতেই মাদক ও অস্ত্রবাজ থাকতে পারবে না। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসীরা আত্মসমপর্ণ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় মহেশখালীর উপক‚লীয় এলাকার জলদস্যুরা আত্মসমপর্ণ করেছে। আমরা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এসব জলদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ করে দেব।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমি জেনেছি এখানে বাহিনী-বাহিনী যুদ্ধ চলে। একটা বাহিনীকে ঘায়েল করতে আরেকটি বাহিনীর জন্ম দিচ্ছে। মহেশখালীর উন্নয়নে কোনো জলদস্যু বা বনদস্যু থাকতে দেয়া হবে না।’ মহেশখালীকে শুধু জলদস্যু মুক্ত নয়, কক্সবাজারকেও মাদকমুক্ত করতে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন। র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘কক্সবাজারে ২৩ লাখ মানুষের বসতি। এদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মাদক ব্যবসায়, কিছু সংখ্যক ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। এদের আমাদের দরকার নেই। এই কিছু সংখ্যক মানুষকে বিনাশ করে ফেললে দেশের কোনো ক্ষতি হবে না’। র‌্যাব কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. মেহেদী হাসান বলেন, যারা আত্মসমপর্ণ করেছেন এদের মধ্যে এমনও সন্ত্রাসী আছেন, যার বিরুদ্ধে ৪১টি মামলা পযর্ন্ত রয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম দফায় ৪৩ জন সন্ত্রাসী আত্মসমপর্ণ করলেও দ্বিতীয় ধাপে আরও ২০০-২৫০ সন্ত্রাসী আত্মসমপের্ণর বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। আত্মসমপের্ণর পরে তাদের মামলাগুলো আইন অনুযায়ী চলবে। তবে আইন সমুন্নত রেখে মামলার বিষয়ে যতটা সহযোগিতা করা যায় তা করবে র‌্যাব। মেজর মেহেদী বলেন, এছাড়াও তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর পাশাপাশি পুনবার্সনের বিষয়েও উদ্যোগ নেয়া হবে। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আত্মসমপর্ণ করা সন্ত্রাসীদের প্রত্যেককে আট লাখ করে পযার্য়ক্রমে আথির্ক সহায়তা দেয়া হবে । অনুুষ্ঠানে পুলিশের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ কমর্কতার্ খন্দকার গোলাম ফারুক, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, বছরের পর বছর ধরে কক্সবাজারের উপক‚লীয় এলাকাজুড়ে সক্রিয় রয়েছে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনীর শত শত সশস্ত্র সদস্য সাগরে ডাকাতি, হত্যা, লুটরাজ চালিয়ে আসছিল। জলে ও স্থলে তারা সমান তালে দস্যুতা ও সন্ত্রাসী কাযর্ক্রম চালিয়ে আসছিল। এর আগে, সুন্দরবনের জলদস্যুদের আত্মসমপণের্র ঘটনা বেশ আলোচিত হয়।