একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন

আ’লীগে প্রাথীর্র ছড়াছড়ি

পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা-গলাচিপা)

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

মো. মামুন তানভীর দশমিনা (পটুয়াখালী)

পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা-গলাচিপা) আসনের মাটি আওয়ামী লীগের ঘঁাটি। কথাটি দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও ভালো করেই জানেন। স্বাধীনতার পর এখানে শুধু জিয়াউর রহমানের আমলে একবার জিতেছিল বিএনপি। এছাড়া সব নিবার্চনে আওয়ামী লীগের প্রাথীর্ জয়লাভ করেন। প্রাথীর্ যিনিই হোন এই এলাকার মানুষ ভোট দেন নৌকায়। তবে বিএনপি এ আসনে না জেতার কারণ হিসেবে প্রাথীর্ নিবার্চনে ভুল দেখছেন স্থানীয় বিএনপির প্রবীণ নেতাকমীর্রা। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে এ আসনের প্রধান দুই দলের প্রাথির্তায় কোনো পরিবতর্ন আসবে কি নাÑ এটাই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর ছড়াছড়ি এ আসনে। অপরদিকে বিএনপিতে মনোনয়ন চান মাত্র তিনজন। আর জাতীয় পাটির্ থেকে শক্তভাবে মনোনয়ন চাইছেন একজন। যদিও এর আগে জাতীয় পাটির্র কোনো প্রাথীর্ জোরালোভাবে মনোনয়ন চাননি। আওয়ামী লীগের অতিরিক্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী শেষ পযর্ন্ত গলার কঁাটা হয়ে দঁাড়ায় কি নাÑ সেটাই দুই উপজেলার প্রবীণ নেতাদের দুশ্চিন্তার কারণ। তবে এসব কোনো চিন্তার কারণ নয় বলে মনে করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন সামনে রেখে সব দলের প্রাথীর্রা জমিয়ে তুলেছেন এ আসনের প্রচার-প্রচারণা। দুগার্পূজার ছুটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ভোটাররা ফিরেছেন দশমিনা-গলাচিপায়। তাই এই সময়টাকে কাজে লাগাতে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিঘুর্ম রাত পার করেছেন। প্রাথীর্রা সীমাবদ্ধ নেই নিজ নিবার্চনী এলাকায়। কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকষের্ণর জন্য তারা ছুটেছেন বরিশাল সিটি নিবার্চনে নিজ দলের প্রাথীর্র পক্ষে ভোট প্রাথর্নায়। দশমিনা-গলাচিপায় গণসংযোগের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রাথীর্রা দলের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছেন ভোটারদের কাছে। অপরদিকে বিএনপি দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তি ও আন্দোলনের জন্য জনগণের সমথর্ন তৈরির চেষ্টা করছেন। বসে নেই জাতীয় পাটির্ও। ভোট, সমথর্ন ও জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে তুলতে প্রাথীর্রা গ্রæপে বিভক্ত হয়ে ছুটছেন ভোটার এবং দলীয় সমথর্কদের বাড়ি বাড়ি। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনায়নপ্রত্যাশীরা হলেন: বতর্মান সংসদ সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কাযির্নবার্হী কমিটির সাবেক সদস্য ও দশমিনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন শওকত, কেন্দ্রীয় যুবলীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক কামরান সহিদ প্রিন্স মহব্বত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. ফোরকান মিঞা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য (ধমর্ বিষয়ক উপ-কমিটি) হিরণ আহমেদ, পটুয়াখালী জেলা কৃষক লীগের সভাপতি মো. তসলিম সিকদার, দশমিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আজিজ মিয়া, পটুয়াখালী জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আলমগীর, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও প্রধান নিবার্চন কমিশনারের ভাগিনা এস এম শাহজাদা শাজু। এ ব্যাপারে দশমিনা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. সাকিল যাযাদিকে বলেন, বতর্মান উপজেলা চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন শওকতের জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন ও অবহেলিত দশমিনা-গলাচিপার ব্যাপক উন্নয়ন করতে পারবেন। তিনি তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ বহুবার দিয়েছেন। কামরান শহিদ বলেন, তিনি মনোনয়ন পাবেন। নিজ অথের্ দশমিনা-গলাচিপার উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। আশা করেন মনোনয়ন পাবেন। অ্যাড. ফোরকান মিঞা বলেন, তিনি ১/১১-এর সময় প্রধানমন্ত্রীর আইনজীবী ছিলেন। দলের জন্য সবসময় কাজ করেছেন ও ত্যাগ শিকার করেছেন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এস এম শাহজাদা সাজু বলেন, তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে পটুয়াখালী-৩ আসনকে মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে চান। অপরদিকে জেলা কৃষক লীগের সভাপতিও মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে নিজের শক্ত অবস্থান দাবি করেন। এ আসনের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রাথীের্দর তালিকায় রয়েছেন, বিএনপির নিবার্হী কমিটির সদস্য হাসান মামুন, সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা। আর জাতীয় পাটির্ থেকে একক প্রাথীর্ হিসেবে মনোনয়ন চাইছেন হাওলাদার মিল্টন আহাম্মেদ মিলন। স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই আসনে আগামী নিবার্চনে হাসান মামুন মনোনয়ন পেলে আওয়ামী লীগের প্রাথীর্র সঙ্গে শক্ত লড়াই হবে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম হাসান মামুনের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। দশমিনা-গলাচিপার তরুণদের কমর্সংস্থানে তার ব্যাপক অবদান রয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের নিবার্চনে আওয়ামী লীগ থেকে আ. বারেক মিয়া, জিয়াউর রহমানের আমলে বিএনপি থেকে আবদুল বাতেন তালুকদার, এরশাদের আমলে ১৯৮৬ সালে অ্যাড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, ’৮৮ সালে ইয়াকুব আলী চৌধুরী, ’৯১ সালে আওয়ামী লীগের আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, ’৯৬ সালের ফেব্রæয়ারিতে বিতকির্ত নিবার্চনে বিএনপির শাহজাহান খান, একই বছরে সবদলের অংশগ্রহনে ফের নিবাির্চত হন আওয়ামী লীগের আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন। এ সময়ে আওয়ামী লীগ তাকে বস্ত্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত নিবার্চনে আবার আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন জয়লাভ করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নিবার্চনে দলীয় টানাপড়েনে আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়েন। আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় এলাকায় একেবারেই অপরিচিত মুখ গোলাম মাওলা রনিকে। তিনিও বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নিবার্চনে ফের আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন আ’লীগের মনোনয়ন পান এবং জয়লাভ করেন।