শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনআইডি কার্ডের সূত্র ধরে খুনিচক্র গ্রেপ্তার

বক্তারপুরে আলোচিত পারুল বেগম হত্যা
স যাযাদি রিপোর্ট
  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি কার্ড) সূত্র ধরে সাভারের বক্তারপুরে আলোচিত পারুল বেগম (৪৫) হত্যা মামলার রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। একইসঙ্গে এ হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও খুনিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সোমবার ক্লুলেস এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের সাব-ইন্সপেক্টর মো. সালে ইমরান যায়যায়দিনকে জানান, স্বামী পরিত্যক্তা পারুল বেগম সাভার থানা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে গত ৯ সেপ্টেম্বর তিনি অজ্ঞাতনামা একজন ব্যক্তিকে স্বামী পরিচয় দিয়ে সাভার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ৫০/১১ নম্বর হোল্ডিংয়ের ভাড়া বাসায় ওঠেন। ওই দিন রাতেই অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা পারুলকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশের আশপাশ থেকে বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করে। এর মধ্যে বিলস্নাল সরদার নামের এক ব্যক্তির এনআইডি কার্ডের ফটোকপি ছিল।

খুনের ঘটনায় পারুল বেগমের ভাই মমিনুল হক ওরফে মোহন ওই রাতেই সাভার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা (নম্বর ২৪) দায়ের করেন। সাভার থানা পুলিশ মামলাটি ১১ দিন তদন্ত করে এ হত্যাকান্ডের কোনো রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে না পারায় পিবিআই ঢাকা জেলা স্ব-উদ্যোগে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব নেয়।

এসআই (নিরস্ত্র) মো. সালে ইমরানকে এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্তের একপর্যায়ে তিনি নিশ্চিত হন খুনিরা বিলস্নাল সর্দারকে (লাশের পাশে যার এনআইডি কার্ডের ফটোকপি পাওয়া যায়) ফাঁসাতেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এর সূত্র ধরে তিনি খুনের পরিকল্পনাকারীকে খুঁজতে শুরু করেন।

তদন্তে বেরিয়ে আসে বাগেরহাটের মোংলা থানাধীন চিলা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী বিলস্নাল সরদারকে ফাঁসাতে তার প্রতিপক্ষ প্রার্থী মো. হালিম হাওলাদার ভাড়াটে কিলারদের দিয়ে যে কাউকে খুন করার পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী আগস্টের মাঝামাঝিতে হালিম মেম্বার ভাড়াটে কিলার জামাল ওরফে সামাদুজ্জামালের সঙ্গে মোংলায় দেখা করেন। যে কাউকে খুন করে লাশের পাশে বিলস্নালের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি রেখে আসার জন্য তাকে অগ্রিম পাঁচ হাজার টাকা দেন। ঘাতক জামাল তার বন্ধু দর্জি মো. মশিউর রহমান ওরফে মিলন কবিরাজের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন এবং কাকে খুন করলে নির্বিঘ্নে পার পাওয়া যাবে এমন কারও সন্ধান চান। এ সময় মিলন তার পূর্বপরিচিত স্বামী পরিত্যক্তা পারুলকে খুন করার পরামর্শ দেন। ঘাতক জামাল পারুলের সঙ্গে কৌশলে পরিচিত হয়ে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেন। এর একপর্যায়ে তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সাভারের বক্তারপুরে বাসা ভাড়া নেন। ওই রাতেই জামাল গলায় ওড়না পেঁচিয়ে পারুলকে হত্যা করে লাশের পাশে বিলস্নাল সরদারের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি ফেলে রেখে পালিয়ে যান।

এনআইডির সূত্র ধরে পিবিআইর তদন্ত দল বিলস্নাল সরদারকে খুঁজে পায় এবং তার ব্যাপারে তদন্ত করে নিশ্চিত হয় যে, তিনি পারুল হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত নন। তার সাথে যোগাযোগ করে তদন্ত দল তার কোনো শত্রম্ন আছে কিনা তা জানতে চায়। এ সময় বিলস্নাল তার প্রতিপক্ষ মেম্বার প্রার্থী হালিম হাওলাদারসহ দুইজনের নাম জানান। তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে পিবিআই জানতে পারে এ হত্যাকান্ডের আগে-পরে হালিম হাওলাদারের সঙ্গে ঢাকায় অবস্থানরত একজন ব্যক্তির ঘন ঘন টেলিফোনে যোগাযোগ হয়েছে। ওই ব্যক্তির ব্যাপারে অনুসন্ধান করে পিবিআই ঘাতক জামালকে চিহ্নিত করে এবং পরে গ্রেপ্তার করে। পরে তার ছবি সাভারের ভাড়া বাসার কেয়ারটেকারকে দেখালে সে জামালকে শনাক্ত করে। জামালকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং এ হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনার হালিম মেম্বারসহ জড়িত অন্যান্যদের ব্যাপারে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর পরপরই হালিম হাওলাদার ও মিলনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে