সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা

প্রকাশ | ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
বৃহস্পতিবার বাগেরহাটে সুন্দরবনের ছয় দস্যুবাহিনীর ৫৪ জন সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিয়ে আত্মসমপর্ণ করেন Ñযাযাদি
বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকায় গণভবন থেকে বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাগেরহাটে জলদস্যুদের একটি আত্মসমপর্ণ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে সরকারপ্রধান এ ঘোষণা দেন। সুন্দরবনের ছয় দস্যুবাহিনীর ৫৪ জন সদস্য এদিন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অঙ্গীকার জানিয়ে বাগেরহাটের শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিয়ে আত্মসমপর্ণ করেন। ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনকে আমি দস্যুমুক্ত ঘোষণা করছি। দীঘির্দন ওই অঞ্চল জলদস্যু বা বনদস্যুদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ জজির্রত ছিল। বিশেষ করে পুরো দক্ষিণাঞ্চল জুড়েই এটা একটা বিরাট সমস্যা ছিল। সাতক্ষীরা থেকে শুরু করে বাগেরহাট হয়ে বরগুনা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, হাতিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বনদস্যুদের বিরাট প্রভাব ছিল। আমরা তাদেরকে মোটিভেট করেছি, তাদের আশ্বস্ত করেছি যে তারা যদি সারেন্ডার করে আমরা তাদের জীবন জীবিকার পথ করে দেব। তারা পযার্য়ক্রমে একে একে আমাদের কাছে সারেন্ডার করেছে। এদিন আত্মসমপর্ণ করা ৫৪ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে এক লাখ করে অথর্ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি তাদের পুনবার্সনের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নিদের্শ দেন। তিনি বলেন, তারা যে যে কাজ করে খেতে চান নিজের গ্রামে বসে, সেই কাজ করার মতো উপযুক্ত কমর্সংস্থানের ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। ফলে অনেকেই এখন সেই জঙ্গলের দস্যুতা, ওই অস্বাভাবিক জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন, নিজের পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন। বাংলাদেশে সুন্দরবনের প্রায় ১০ হাজার বগির্কলোমিটার বনাঞ্চলের পাশাপাশি দেশের উপক‚লীয় এলাকাগুলো ঘিরে জলদস্যুতার ইতিহাস অনেক পুরনো। জেলেদের ট্রলার ছিনতাই করে মাঝিদের আটক রেখে মুক্তিপণ আদায়, বিভিন্ন পেশার বনজীবীদের অপহরণ ও ডাকাতির মাধ্যমে বিভিন্ন দস্যু দল উপক‚লীয় জেলাগুলোতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। উপক‚লীয় এলাকায় এই দস্যুতা দমনের জন্য সরকার ২০১২ সালে র‌্যাব, পুলিশ, কোস্টগাডর্, বিজিবি ও বন বিভাগকে নিয়ে একটি টাস্কফোসর্ গঠন করে দেয়। এরপর র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২৩টি অভিযানে অন্তত ১৩৫ জন সন্দেহভাজন জলদস্যু ও বনদস্যু নিহত হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছে পঁাচ শতাধিক লোক। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় ২০১৬ সাল থেকে এ পযর্ন্ত ২৬টি দস্যু দলের ২৭৪ জন আত্মসমপর্ণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। দস্যুতা ত্যাগ করে আত্মসমপের্ণর মধ্যে দিয়ে যারা স্বাভাবিত জীবনে ফিরে এসেছে, ভিডিও কনফারেন্সে তাদের ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি সুন্দরবন ও উপক‚লীয় এলাকায় শান্তি ফেরানোর চেষ্টার জন্য র‌্যাব, পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান তিনি। ৩২১ প্রকল্পের উদ্বোধন পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংস্কার করে সেখানে জাদুঘর থেকে শুরু করে সুইমিং পুল, জিমনেশিয়াম, নাটকের মঞ্চ, আধুনিক সিনেপ্লেক্স, স্কুল নিমার্ণসহ পুরো এলাকাকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ ও পারিপাশ্বির্ক উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্যে দিয়ে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংস্কার কাজ শুরু হয়। এই প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ২০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় দেশের ৫৬ জেলায় ৩২১টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। যার মধ্যে ২৯৭টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন এবং ২৪ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংস্কার কাজের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা কারাগার, এর সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িত। যেখানে আমাদের জাতির পিতা ছিলেন, যেখানে আমাদের জাতীয় চার নেতাকে নিমর্মভাবে হত্যা করা হয়। সেই জায়গা এবং আমাদের পুরনো কারাগারে কিছু স্মৃতি চিহ্ন সেটাকে আমরা জাদুঘর হিসেবে ধরে রাখব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাকি অংশটা আমাদের পুরান ঢাকার জনগণের জন্য স্কুল হবে, কলেজ হবে, যে স্কুল কলেজগুলো ওই এলাকায় আছে সেগুলোকে আমরা উন্নত করে দেব। পাশাপাশি সেখানে খেলার মাঠ হবে, পাকর্ হবে। সেখানে একটা সিনে কমপ্লেক্স হবে, আধুনিক সিনেমা দেখার সুযোগ থাকবে। ভালো শপিং মল হবে। তিনি বলেন, যেহেতু পুরান ঢাকার মানুষের বিনোদনের জায়গা নেই তাই তাদের জন্য ভালো বিনোদনের জায়গা আমরা গড়ে তুলব। সেই প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি। এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম এখন।