ড্রাগন চাষে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন অনুযের

প্রকাশ | ১৪ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

ম শিশির কর্মকার স্বরূপকাঠি (পিরোজপুর)
পিরোজপুরের নেছারাবাদে অনুয কান্তির ড্রাগন ফলের বাগান -যাযাদি
পিরোজপুরের নেছারাবাদের কাদামাটি আবহাওয়ায় লাল জাতের ড্রাগন ফল চাষ করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন প্রবাসফেরত অনুয কান্তি ঘরামী। ইতোমধ্যে নিজের স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলার পাশাপাশি তিনি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন স্থানীয়দের কাছে। মাস্টার্স পাস করা অনুপ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দশ বছর চাকরির পর পাড়ি জমান বিদেশে। সেখানকার ড্রাগন ফল বাগানের চাষ পদ্ধতি দেখে এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। বিদেশের কৃষি বিভাগের চাকরি ছেড়ে চলে আসেন নিজ বাড়ি নেছারাবাদ জলাবাড়ি গ্রামে। দেশে ফিরেই তিনি যাত্রা শুরু করেন স্বপ্ন পূরণের পথে। ২০১৯ সালে আমেরিকার প্রসিদ্ধ ড্রাগন ফল থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনামের চারা সংগ্রহ করে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেন অনুয কান্তি। জলাবাড়িতে ৮ শতাংশ জমিতে ১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রথম ১শ'টি কংক্রিট পিলারে ৪শ' ড্রাগন গাছের বাগান করেন তিনি। গাছ রোপণের বছর দেড়েক পরেই আশাতীত ফল আসতে শুরু করে। প্রথম বছরই তিনি দেড় লাখ টাকার ফল বিক্রি করেন। আরও এক লাখ টাকার ফল বিক্রয়যোগ্য রয়েছে। এমন সফলতায় ড্রাগন ফল চাষের ৩ বছরেরই মধ্যে এক বিঘা জমিতে ২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২শ'টি পিলারে সাড়ে আট শ' ড্রাগন ফলের বাগান করে বছরে কোটি টাকা লাভের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। তার এই স্বপ্নের ভাগিদার হতে চান এলাকার অনেকেই। অল্প জমিতে কম পরিশ্রমে এবং কম খরচে অধিক লাভের আশায় অনেকেই ড্রাগন ফলের চাষে ঝুঁকছেন। উপজেলার জলাবাড়ি, চামী, উদয়কাঠি, শেরে-বাংলা, মাহামুদকাঠি, করমজা ও গঙ্গমনি-এ ৭টি গ্রামের প্রায় ১১৭টি পরিবার এখন ড্রাগন ফলের বাগান তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নেছারাবাদ কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার সঞ্জয় হালদার বলেন, 'এটি একটি লাভজনক বাণিজ্যিক কৃষিচাষ, ড্রাগন গাছ একবার রোপণ করলে ৩০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত ফল দিতে পারে। ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহীদের কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শের পাশাপাশি তাদের এ চাষে নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।' উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯টি বাগানে ১.২ হেক্টর জমিতে ১৬শ' পিলারে প্রায় ১২ হাজার ড্রাগন গাছের চাষ হচ্ছে। এ ড্রাগন চাষে প্রায় ২ হাজার শ্রমজীবী মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে। ড্রাগনচাষি অনুয ঘরামী বলেন, ড্রাগন গাছে ১২ মাসের ১০ মাসই ফল পাওয়া যায় এবং বছরে ৬ বার ফল নিড়ানো হয়। গাছ রোপণের ৭-৮ মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসে এবং এর ৪৪ দিনের মাথায় ফল আসতে শুরু করে। কোনো রাসায়নিক সার ছাড়াই জৈব সারেই ড্রাগন চাষে ব্যাপক ফলন হয়। এক একটি পিলারের ৪টি গাছ থেকে বছরে ৩০ থেকে ৪০ কেজি ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। এক বিঘার একটি পরিপূর্ণ বাগান থেকে বছরে অন্তত ১০ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। অনুয ঘরামী এখন তার ড্রাগন বাগান থেকে আগ্রহী চাষিদের ড্রাগনের কাটিং বিক্রয় করে বাড়তি অর্থ উপার্জনেরও পথ সুগম করেছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষিবিদ চপল কৃষ্ণ নাথ বলেন, ড্রাগন মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ফল ছিল। পরে ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, তাইওয়ান, ইংল্যান্ড, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, চীন ও অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপক হারে উৎপাদন শুরু হয়। বর্তমানে আমাদের দেশেও এর চাষ ব্যাপক সাড়া পেয়েছে।