আজ আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস

বাল্যবিয়ে কমাতে নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি

প্রকাশ | ১৫ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

বিশেষ প্রতিনিধি
আজ শুক্রবার আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে 'করোনায় বাল্যবিয়ের আশঙ্কাজনক হার বৃদ্ধি-প্রয়োজন কঠোর সামাজিক ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ'। আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ঢাকাসহ দেশের ৬৪ জেলায়র্ যালি, আলোচনা সভা ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাল্য বিয়েতে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। ইউনিসেফ-এর মতে, 'সারাদেশে ৪০ লাখের বেশি বালিকাবধূ। তারপরও করোনা মহামারিতে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে বাল্যবিয়ে। দ্রম্নত বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলা না গেলে কন্যারা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পতিত হবে। এ জন্য মেয়েদের শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে করোনা মহামারির সময় বাল্য বিয়ে বেড়ে গেছে। যার অন্যতম কারণ ছিল প্রায় দেড় বছরের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা।' আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, মহামারি করোনাকালে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি কম থাকা, প্রবাসী শ্রমিকদের দেশে ফেরত আসা যারা কিনা ভালো পাত্র হিসেবে সমাজে আদৃত, পরিবারের আয় কমে যাওয়া এবং কন্যা সন্তানকে বোঝা মনে করা ইত্যাদি। এর ফলে, দেশব্যাপী ঝরে পড়া স্কুলছাত্রীর সংখ্যাও বেড়েছে যা সম্প্রতি স্কুল খুলে দেওয়ার পর শ্রেণিকক্ষের তাদের উপস্থিতিই বলে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির সভাপতি শামীমা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কমিটির সদস্য তামান্না রহমান, আবু হানিফ, বেলাল হোসেন, লুৎফর রহমান লাবু, মাসুদা ফারুক রত্না, পি এম বিলস্নাল, রাশিদা বেগম, শেখ আসাদ, খন্দকার ফারুক আহমেদ, তাহরিমা আফরোজ, আশরাফুল হাসান তাইমুর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া ইকু্যইটিবিডি'র মোস্তফা কামাল আকন্দ এবং কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকদের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ফেরদৌস আরা রুমী। শামীমা আক্তার বলেন, 'ছেলেমেয়ে পৃথক নয়'-অভিভাবকদের চিন্তার জগতে এই পরিবর্তনটি আনতে হবে। কন্যা সন্তান যাতে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টিতে রাষ্ট্র, সরকার, সমাজ সবার উদ্যোগী ভূমিকা রাখাও জরুরি। আয়োজকদের পক্ষ থেকে মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, দেশের ৬৪টি জেলায় উদ্‌যাপন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও সারাদেশের্ যালি, সেমিনার, মানববন্ধন, মেলা এবং গ্রামীণ নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য সম্মাননা প্রদানসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদ্‌যাপন করা হচ্ছে। ফেরদৌস আরা রুমী বলেন, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারগুলোতে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এ সময় বিয়ে বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে দেখা গেছে-ভালো পাত্র পাওয়া, বাড়ির মুরব্বির ইচ্ছা পূরণ, ছেলে-মেয়ের প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার ভয়, শিশু যৌন হয়রানি বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, অর্থনৈতিক অসঙ্গতি ইত্যাদি। তামান্না রহমান বলেন, করোনায় স্কুল থেকে ঝরে পড়া ছাত্রীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে যাদের অধিকাংশই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। এসব বিয়ের অধিকাংশই নিবন্ধন হয়নি। ফলে ভবিষ্যতে কোনো আইনি সহায়তা দরকার হলে তারা বঞ্চিত হবে। খন্দকার ফারুক আহমেদ বলেন, করোনার শুরুতে মানুষ চলাচল কম থাকায় বাবা-মা হাতের কাছে যোগ্যপাত্র পাওয়া মাত্র বিয়ে দিয়েছেন। মাসুদা ফারুক রত্না বলেন, করোনা মোকাবিলায় প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এত বেশি ব্যস্ত ছিল যে, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সরকারের গৃহিত উদ্যোগগুলো কার্যকর ছিল না। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছেন অভিভাবকগণ। রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে মেয়েরা গ্রাজুয়েশন পর্যন্ত পড়াশোনা করলে বাল্যবিয়ের আশঙ্কা কমে যায়। বরং কন্যাসন্তানদের পড়াশোনায় বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সবার অগ্রণী ভূমিকা পালন করা উচিত। লুৎফর রহমান লাবু বলেন, করোনায় মেয়েশিশুরা নানা দিক থেকে হুমকির মধ্যে ছিল। অন্যদিকে স্কুল কবে খুলবে এই অনিশ্চয়তায় কিংবা যদি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যায় তাই পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে অভিভাবকরা কন্যা সন্তানদের বিয়ে দিয়েছেন। আশরাফুল হাসান তাইমুর বলেন, আনন্দের খবর এই যে-করোনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে যথাসম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। কারণ সারাদেশের চিত্র বলে দিচ্ছে স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বাল্যবিয়ে মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক কার্যক্রমগুলো সচল থাকে।