শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসব আমেজে ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা

ম যাযাদি রিপোর্ট
  ১৮ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

গুচ্ছভুক্ত ২০টি সাধারণ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'এ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা উৎসব আমেজে এবং শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। রোববার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত দেশের ২৬টি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত 'এ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 'এ' ইউনিটে এক লাখ ৩১ হাজার ৯০১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন।

আগামী ২৪ অক্টোবর 'বি' ইউনিটে মানবিক এবং ১ নভেম্বর 'সি' ইউনিটে বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের দুপুর ১২টা-১টা পর্যন্ত পরবর্তী ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য গতকালের মতোই পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগেই সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে পৌঁছানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গুচ্ছভর্তি কোর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (জিএসটি) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কষ্ট লাঘব হয়েছে। এতে বাংলাদেশে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে। আশা করি এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আগামী দিনে আরও সুন্দরভাবে এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া যাবে।' তিনি আরও বলেন, 'আজকের ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি দেশের অন্য কেন্দ্রগুলোয়ও শিক্ষার্থীরা প্রায় শতভাগ অংশগ্রহণ করেছেন। আমরা দু-একদিনের মধ্যেই ফলাফল ঘোষণা করার চেষ্টা করব।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাযাদি'র প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার ঘটেনি বলে জানিয়েছেন।

শাবিপ্রবি থেকে প্রতিনিধি নোমান মিয়া জানান, উৎসবের আমেজে শাহজলাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পন্ন হয়েছে গুচ্ছ 'ক' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। এদিকে কোনো ধরনের প্রশ্ন ও ডিজিটাল জালিয়াতি ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছে গুচ্ছভর্তি পরীক্ষার আয়োজক কমিটি। এটি বাংলাদেশে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলেও দাবি করেন তারা। গতকাল রোববার বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত চলে এ পরীক্ষা। এসময় পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে দেখা গিয়েছে স্বস্তি। পাশাপাশি আর্থিক ও যাতায়াতের ভোগান্তির অবসান হয়েছে বলেও জানান তারা।

ভর্তি কমিটি সূত্রে জানা যায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ছিল ৯২.৬৫ শতাংশ। শাবিপ্রবি কেন্দ্রে ৪ হাজার ৭১০ শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় ছিলেন ৪ হাজার ৩৬৪ জন। অনুপস্থিত ছিলেন ৩৪৬ জন পরীক্ষার্থী। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ হাজার ১৩৬ জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থিতির হার ৮৭.৬১ শতাংশ।

এদিকে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া ও ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে আসার জন্য বাস সার্ভিস চালু রেখেছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বাস চলাচলের সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা সিলেট শহর ও আশপাশের এলাকা থেকে সময়মতো নিরাপদে ক্যাম্পাসে পৌঁছতে ও একই পথ ধরে পরীক্ষা শেষে বাসায় পৌঁছতে পেরেছে।

যবিপ্রবি থেকে স্টাফ রিপোর্টার মিলন রহমান জানান, ভর্তি পরীক্ষায় যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের এক বন্দি অংশ নিয়েছেন। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে 'বন্দি' থাকা এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকের গুচ্ছভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)। রোববার বেলা ১২টায় অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষায় নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার বিচারাধীন ওই শিশু আসামি যবিপ্রবির ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনে (টিএসসি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে 'এ' ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নেয়। যবিপ্রবি সূত্রে জানা গেছে, শিশু আসামিকে চলতি বছরের গত ২ ফেব্রম্নয়ারি রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। তার বাড়ি নাটোরের শিঙড়া উপজেলা। আদালতের নির্দেশে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকের ভর্তি পরীক্ষায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যবিপ্রবি সুযোগ দেয়। পরীক্ষা উপলক্ষে রোববার বেলা ১১টায় তাকে যশোরের পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে যবিপ্রবিতে আনা হয়। এসময় পুলিশ সদস্যরা তার নিরাপত্তা বিধান করেন। পরীক্ষা শেষে তাকে আবার শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ভর্তি পরীক্ষা নীতিমালা মেনেই তাকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়েছিল। তার কক্ষের বাইরে আলাদা পুলিশ মোতায়েন ছিল। সে নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিতে পেরেছে।

দিনাজপুরের হাবিপ্রবি থেকে রেজাউল করিম রঞ্জু জানায়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। হাবিপ্রবিতে ৭ হাজার ২৫ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষা শুরুর পর বিভিন্ন কক্ষ রুম পরিদর্শন শেষে হাবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর এম কামরুজ্জামান বলেন বাংলাদেশে আজ একটি ইতিহাস রচিত হলো। গুচ্ছ পদ্ধতির কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আজকের পরীক্ষায় উপস্থিতির হার অনেক বেশি, প্রায় ৯৮% এর মতো এবং সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা দিয়েছে।

পবিপ্রবি থেকে পটুয়াখালী প্রতিনিধি মো. আনিসুর রহমান মিন্টু জানান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্তসহ পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন পরীক্ষার হলসমূহ পরিদর্শন করেন। চার হাজার পরীক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক।

কুয়েট কেন্দ্রে : খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) কেন্দ্রে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কুয়েট কেন্দ্রে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৪৯৩ জন। পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর কাজী সাজ্জাদ হোসেন ভর্তি পরীক্ষার বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেন। এ সময় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ আবু ইউসুফসহ সংশ্লিষ্টরা ছিলেন। ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর কাজী সাজ্জাদ হোসেন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

ইবিতে গুচ্ছের অধীন 'এ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) গুচ্ছের অধীন 'এ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৭ হাজার ৮৪ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ছিলেন।

পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এ সময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসনে ভূঁইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মু. আতাউর রহমান প্রমুখ ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর শেখ আবদুস সালাম বলেন, 'সুষ্ঠুভাবে গুচ্ছের অধীন ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যার বিষয়ে অবহিত হয়নি।'

এ ছাড়া দেশের মোট ২৬টি কেন্দ্রে একযোগে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রগুলো হলো- শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে