পূজামন্ডপে হামলা-ভাঙচুর ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চায় বিএনপি

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

ম যাযাদি রিপোর্ট
কুমিলস্নার ঘটনাসহ সারাদেশে পূজামন্ডপে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চায় বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়ে বলেছেন, বর্তমান যুগে কিছুই ঢেকে রাখা যায় না। অবগুণ্ঠন উন্মেচিত হয়ে সত্য প্রকাশ পাবেই। কুমিলস্নার পূজামন্ডপের ঘটনার রেশ ধরে সারাদেশে যে ন্যক্কারজনক পরিকল্পিত নীলনকশা বাস্তবায়িত হচ্ছে সেটা আজ জনগণের কাছে স্পষ্ট। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে এসব সরকারের ষড়যন্ত্র। \হরোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, পবিত্র কোরআন অবমাননা, পূজামন্ডপ ও মন্দিরে নিরাপত্তা বিধান না করে হামলা-ভাঙচুর-সংঘাত-সংঘর্ষকে উস্কে দিয়ে দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে, মদদ দিয়ে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের জীবন কেড়ে নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চক্রান্ত্রে মেতে উঠেছে সরকার। গণতন্ত্রের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে তারা সাম্প্রদায়িক সংঘাতের উপকরণ ছড়িয়ে, সহিংস রক্তাক্ত পরিস্থিতিতে উদ্ধারকর্তার ভূমিকায় অভিনয় করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুদৃষ্টি পেতে চায়। সরকারের পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক উসকানি ও এর ফলশ্রম্নতিতে দেশব্যাপী রক্তাক্ত হিংসাশ্রয়ী ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পূজামন্ডপের নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর 'নীরব' ভূমিকার সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দুর্গাপূজার প্রাক্কালে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আশ্বাস দেওয়ার পরও কেন পবিত্র কোরআন অবমাননা, মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটল। কুমিলস্নার সাধারণ মানুষের মতো বিএনপিও একমত যে, পুলিশ বাহিনী দ্রম্নত ব্যবস্থা নিলে নানুয়া দীঘির পাড়ের মন্ডপের ঘটনাটি নির্মম অমানবিকতার দিকে গড়াত না। একই ঘটনা ঘটেছে চৌহমুনীতে। বারবার প্রশাসনকে বলার পরে, পুলিশ বাহিনীকে বলার পরেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ৬ ঘণ্টা ধরে সেখানে নৈরাজ্য চলেছে, লুটপাট চলেছে, ভাঙচুর চলেছে। কিন্তু প্রশাসন নীরব ছিল। তারা দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছে কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তিনি বলেন, এখন একটি প্রশ্ন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে, কে বা কারা পবিত্র কোরআন শরীফ পূজামন্ডপে নিয়ে গেছে? সরকারের নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাসের পর কেবলমাত্র ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট দুষ্ট চক্র ছাড়া দেশের জনগোষ্ঠীর কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ই এই কদর্য কাজ করবে না বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। সরকারের মদদেই কুমিলস্নার নানুয়ার দীঘিরপাড়ের পূজামন্ডপে চক্রান্তমূলক কুৎসিত কাজটি করা হয়েছে। এর বড় প্রমাণ- ঘটনার পরপরই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা অতিসত্বর পূজামন্ডপ ও মন্দিরগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাঠানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন এই অনুরোধে সাড়া না দিয়ে অনেক পরে পুলিশ পাঠিয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, যখন কোনো ঘটনা ঘটে তখন বিএনপিকে জড়িত করার চেষ্টা করে সরকার। সেজন্য কল্পিত স্টোরি তারা তৈরি করে। অথচ এই কাজটা তারাই করে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উলস্নাহ আমান ও কুমিলস্না সিটি করপোরেশনের ১২নং ওয়ার্ডের দলের এক নেতার সঙ্গে ফোনালাপের একটি অডিও কল ভাইরাল করা হয়েছে। সরকার এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে। ফোনালাপটি ভুয়া, বানোয়াট, অসত্য, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সুপার এডিটেড। এই চক্রান্তমূলক ফোনালাপ ভাইরালের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এসব চক্রান্ত করে একটা লাভ আছে আওয়ামী লীগের। হিন্দুদের তাড়াতে পারলে সম্পত্তি পায় আর রাখতে গেলে ভোগ পায়। দুইটাতেই তাদের লাভ। তাই এই চক্রান্ত মোকাবিলা করতে হবে। সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে আবেদন থাকবে, এ দেশের আলেম-ওলামাদের কাছেও আবেদন থাকবে যে- আপনারা এই সরকারের ফাঁদে পা না দিয়ে সংগঠিত হোন এবং আজকে এই ঘটনার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলুন, কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়। এ সময় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উলস্নাহ বুলু, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীসহ বেগমগঞ্জ উপজেলার সভাপতি কামাক্ষা চন্দ্র দাস বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উলস্নাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, গৌতম চক্রবর্তী, শামসুল হক প্রামাণিক, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদসহ অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা।