শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি চলবে না

আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী 'যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখনো চেষ্টা করেছি, এখনো চেষ্টা করি এই দেশের শিশুরা যেন নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে। আজকে যেমন আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ, সেটা তৈরি করার জন্য তাদের প্রস্তুত করা, তাদের ট্রেনিং দেওয়া, সব রকম ব্যবস্থা করে দিচ্ছি'
যাযাদি রিপোর্ট
  ২০ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত 'বঙ্গবন্ধুর রক্তঋণ' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন -ফোকাস বাংলা

বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'সব ধর্মের মানুষ তার ধর্ম পালন করবে স্বাধীনভাবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের সংবিধানে সেই নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমাদের ইসলাম ধর্মও সেই কথাই বলে। নবী করিমও (সা.) বলেছেন, "ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না।" আমরাও চাই, কেউ যেন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে। সব মানুষ যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।'

তিনি বলেন, 'এত রক্ত ক্ষয়, এত কিছু বাংলাদেশে ঘটে গেছে, আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।'

মঙ্গলবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের জন্মদিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুক্ত হন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখনো চেষ্টা করেছি, এখনো চেষ্টা করি এই দেশের শিশুরা তাদের লেখাপড়া, তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, তারা যেন নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে। আজকে যেমন আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ, সেটা তৈরি করার জন্য তাদের প্রস্তুত করা, তাদের ট্রেনিং দেওয়া, সব রকম ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।'

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, 'শিশুর নিরাপত্তা, শিশু অধিকার আইন তো জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে করে দিয়ে গেছেন। প্রাথমিক শিক্ষাটাকে অবৈতনিক করে দিয়ে গেছেন, বাধ্যতামূলক করে দিয়ে গেছেন। কাজেই আমার বাবার আদর্শ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এই দেশের শিশুরা যেন আর এই নির্মমতার শিকার না হয়।'

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, 'খুনিদের প্রতি খালেদা জিয়ার এই যে পক্ষপাতিত্ব এটার কারণটা কী? কারণটা খুব স্পষ্ট। কারণ, খুনি মোশতাকের সঙ্গে জিয়াউর রহমান সম্পূর্ণভাবে এই খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল। এই রাসেলকে সর্বশেষে হত্যা করা হয়। বলা হয়েছিল, ওই ছোট্ট শিশুটি যেন না বাঁচে। এই নির্দেশটা কে দিয়েছিল? কারা দিয়েছিল? সব শেষে, সবচেয়ে এটাই কষ্টের।'

তিনি বলেন, 'কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, এখনো আমরা দেখি, সেই নির্মমতা এখনো মাঝে মাঝে দেখি। পরবর্তীতেও আমরা দেখেছি। কিন্তু এইটা যেন না হয়। দেখেছি, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে কীভাবে হত্যা করা হচ্ছে জ্যান্ত মানুষগুলোকে, শিশুকে পর্যন্ত। এই খালেদা জিয়া বিরোধী দলে থাকতে অগ্নিসন্ত্রাস করে চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে। বাপ দেখেছেন- নিজের চোখের সামনে আগুনে পুড়ে সন্তান মারা যাচ্ছে। সেরকম নিষ্ঠুর ঘটনা তো বাংলাদেশে ঘটেছে। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্য এই বাংলাদেশের।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি এইটুকু চাইব, এখানে মানবতার প্রশ্ন যারা তোলে, তারা যেন এই ঘটনাগুলো ভালোভাবে দেখে যে বাংলাদেশে কী ঘটল। কিন্তু আমরা সরকারে আসার পর থেকে আমাদের প্রচেষ্টা- কোনো শিশু রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে না, টোকাই থাকবে না। তাদের যেন একটা ঠিকানা থাকে, তারা যেন একটু ভালোভাবে বসবাস করতে পারে।'

তিনি বলেন, 'আমাদের একটাই লক্ষ্য- এই দেশের প্রতিটি গৃহহীন মানুষ একটা ঘর পাবে। প্রতিটি মানুষ শিক্ষা পাবে। চিকিৎসা পাবে। ভালোভাবে বাঁচবে। প্রতিটি শিশু তার যে মেধা, তার যে জ্ঞান, তার যে বুদ্ধি, সেটা যেন বিকশিত হতে পারে। বাংলাদেশকে তারা যেন সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সেই চেষ্টাই আমি করে যাচ্ছি।'

শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাসেল ছোটবেলা থেকে সহজ সরল ছিল। তার কোনো দাবি ছিল না। তার স্বপ্ন ছিল, বড় হয়ে সেনা অফিসার হবে। সে কারণে ছোটবেলা থেকেই টুঙ্গিপাড়ায় শিশুদের নিয়ে প্যারেড করত। প্যারেড করার পর তাদের পুরস্কার হিসেবে এক টাকা করে দিত। সবাইকে জমা-কাপড়ও কিনে দিত।

তিনি বলেন, আজকে রাসেল নেই। কিন্তু এ দেশের হাজার হাজার শিশু যেন নিরাপত্তা পায়। তারা যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। মানুষের মতো মানুষ হতে পারে। তারা যেন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়। সুকান্তের ভাষায় বলি, 'এ বিশ্বকে বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার অঙ্গীকার।' বিশ্বকে পারব কি না জানি না। এ দেশকে যেন শিশুদের জন্য নিরাপদ করতে পারি, সে লক্ষ্যে কাজ করছি। সবাই দোয়া করবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে