শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বাউবি'র ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কাল

করোনাকালেও সচল ছিল শিক্ষা কার্যক্রম

আমানুর রহমান
  ২০ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

প্রতিষ্ঠার ২৯ বছরে পদার্পণ করছে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আগামীকাল বৃহস্পতিবার। ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর জাতীয় সংসদে আইন পাশের মাধ্যমে দেশের একমাত্র দূরশিক্ষণমূলক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। সারা দেশে উন্মুক্ত এবং দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা মহাসরণি থেকে ঝরে পড়া, সুযোগবঞ্চিত নারী-পুরুষ ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সব বয়সের সব মানুষের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

জানা গেছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম এক দিনের জন্য বন্ধ ছিল না। গত ১২ সেপ্টেম্বর দেশের উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সব পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিএ, বিবিএস- পর্যায়ের পৌনে ৪ লাখ শিক্ষার্থী এতে অংশ নিয়েছে। গত ১ অক্টোবর থেকে এ পরীক্ষা শুরু হয়। যা এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া অনার্স ও মাস্টার্স লেবেলের পরীক্ষাসহ নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রমও একই সঙ্গে শুরু হয়েছে।

রাজধানীর পাশ্ববর্তী জেলা গাজীপুরে ৩৫ একর সমতল ভূমিতে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ও স্থায়ী ক্যাম্পাস অবস্থিত। ১২ আঞ্চলিক কেন্দ্র, ৮০টি উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং ৫৬টি একাডেমিক সেন্টার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিস্তৃতি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি থেকে শুরু করে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এএসসি) পাঠদান করানো হয়। শিক্ষার্থীর সংখ্যা হচ্ছে ৬ লক্ষাধিক। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক বিজ্ঞান, মানবিক এবং ভাষা- এ ৬টি ফ্যাকাল্টি রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। রয়েছে উন্মুক্ত বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট অর্জনের সুযোগ। যা অন্য কোনো পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সৈনিক সদস্যদের জন্য উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের বিশেষ সুযোগ রয়েছে। দেশের বাইরে সৌদি আরব, কাতার এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার রয়েছে। এ সব দেশে অন-লাইনে এবং সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় শিক্ষাগ্রহণ করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম এবং ১৯টি প্রোগ্রাম পরিচালনা করে এ বিশ্ববিদ্যালয় নলেজ শেয়ারিং করছে। মিডিয়া প্রোগ্রামের মাধ্যমে এবং ওয়েব টিভি'র মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে দেশের একমাত্র বিশেষায়িত এ বিশ্ববিদ্যালয়। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিক মান নিশ্চিত করতে রয়েছে পৃথক 'কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেল'। এর মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষতা মূল্যায়ন করা হয়।

শিক্ষা, কৃষি, ব্যবসা, আইন, বিজ্ঞান, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, স্বাস্থ্য শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে একাডেমিক প্রোগ্রামে স্নাতক (সম্মান) এবং মাস্টার্সসহ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপেস্নামা প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীরা এখান থেকে স্বল্প খরচে লেখাপড়া করে পেশাগত ক্ষেত্রে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন।

বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান, ওয়েব রেডিও, ওয়েব টেলিভিশন বাউবি টিউব, ফেসবুক, ই-বুক, মোবাইল অ্যাপস, ইউটিউবভিত্তিক বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের অতি সহজেই পঠন-পাঠন ও শিখনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। পাশাপাশি ই-লার্নিং সেন্টার, মুক্তিযুদ্ধ গবেষণাকেন্দ্র, ওপেন এডুকেশন রিসোর্স, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং অনলাইন এডুকেশন, অনলাইন ভর্তি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬ হাজার টিউটর, ১৫ হাজার পরীক্ষক এবং প্রশাসনিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা, কর্মকান্ড ইত্যাদি সফলভাবে পরিচালনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি ভার্চুয়াল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

কর্মমুখী, গণমুখী ও জীবনব্যাপী শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের স্স্নেস্নাগানকে ধারণ করে ২০৪১ সালের মধ্যে সরকারের 'উন্নত বাংলাদেশ' বাস্তবায়নে দক্ষ জনশক্তি সৃজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর সৈয়দ হুমায়ুন আখতার মাঠপর্যায়ের অফিসগুলো নিয়মিত পরিদর্শন ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন।

২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রাক্কালে উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর সৈয়দ হুমায়ুন আখতার যায়যায়দিনকে বলেন, 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা বদ্ধপরিকর। এ জন্য শতভাগ জনগোষ্ঠীর কর্মমুখী, গণমুখী ও জীবনব্যাপী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।'

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় মূল ক্যাম্পাস নয়নাভিরাম সবুজ বৃক্ষরাজি, প্রকৃতির সজীবতা, মক ভিলেজ (চিরন্তন গ্রাম), স্বাধীনতার চিরন্তন স্মারক ভাস্কর্য বিশ্ববিদ্যালয়কে এক মনোরম সুদৃশ্য ক্যাম্পাসে পরিণত করেছে।

শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সর্বমহলে সমাদৃত হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে