পায়রা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশকে আজ সবাই সম্মান করে

একটা শ্রেণি আছেই, বাংলাদেশের বদনাম করতে তারা ব্যস্ত। তারা কী চায়? এ দেশের স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক সেটা তারা চায় না

প্রকাশ | ২৫ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

ম যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পটুয়াখালীর লেবুখালীতে নির্মিত পায়রা সেতুর উদ্বোধন করেন -পিবিএ
দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করলে একটি গোষ্ঠীর কদর বাড়ে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'তারা আসলে চায় না বাংলাদেশের মানুষ মর্যাদা নিয়ে বাঁচুক। এ কারণে স্বাধীনতার এত বছর পরও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল অবহেলিত রয়ে গেছে। কিন্তু ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আমরা দেশের প্রতিটি অঞ্চলকে সমান গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।' রোববার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পায়রা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যারা দেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল, তারাই চায় না দেশের মানুষ মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। কিন্তু আজ বাংলাদেশের নাম শুনলে সবাই সম্মান করে। বিশ্বে বাংলাদেশের একটা মর্যাদার জায়গা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, 'আজ যদি পায়রা সেতুতে আমি নিজে উপস্থিত থাকতাম, সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে পারতাম বা হাঁটতে পারতাম তাহলে ভালো লাগত। কিন্তু করোনার কারণে তা হলো না। তবে আমার ইচ্ছা আছে, পরিস্থিতি বুঝে একদিন পায়রা সেতুর ওপর দিয়ে আমি গাড়ি নিয়ে যাব। কাছ থেকে দেখব সেতুটি।' উন্নত যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আর কখনো কেউ পেছনে টানতে পারবে না। কিছু কিছু ঘটনা মাঝে মধ্যে ঘটছে, ঘটানো হচ্ছে, ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হচ্ছে। সেটা আপনারা নিজেরাই টের পান। যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। সেই সঙ্গে অপপ্রচারও চালানো হয়। আমরা যতই উন্নতি করি, ভালো কাজ করি। একটা শ্রেণি আছেই, বাংলাদেশের বদনাম করতে তারা ব্যস্ত। তারা কী চায়? এ দেশের স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক সেটা তারা চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হলে পরে তাদের একটু কদর বাড়ে। সেজন্য তারা সবসময় উন্নয়নটা আর দেখে না। বরং ধ্বংসই তারা করতে চায়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এ ব্যাপারেও দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'করোনা মহামারি আমরা মোকাবিলা করেছি। টিকা আমরা দিচ্ছি। বাংলাদেশের কোনো মানুষই বাদ থাকবে না। স্কুল-কলেজগুলোও ধীরে ধীরে খুলে দিচ্ছি। যাতে আমাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই দেশের যতটুকু উন্নয়ন সেটা আমরাই করে দিচ্ছি। সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও রেলস্টেশনসহ যতটুকু উন্নতি হয়েছে সেটা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই হয়েছে। বরিশাল বিভাগে শুধু রাস্তাই করিনি, সেখানে সেনানিবাস নির্মাণ করা হয়েছে। একটি নৌ-ঘাঁটি হচ্ছে, বিমান ঘাঁটি হচ্ছে। সেই সঙ্গে কোস্ট গার্ডের ট্রেনিং ইন্সটিটিউট এবং কোস্ট গার্ড ঘাঁটি সেখানে করা হয়েছে। বিদু্যৎ কেন্দ্র হচ্ছে। আমরা পটুয়াখালীর গলাচিপাতে বীজ গবেষণা কেন্দ্র করেছি। সেইভাবে বরিশাল বিভাগে বড় কর্মযজ্ঞ চলছে।' পায়রা সেতুতে ওই অঞ্চলের মানুষের আর্থিক উন্নতি হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'এই নামটা আমি পছন্দ করেছি। আর পায়রা তো শান্তির প্রতীক। এই সেতু হওয়ার পর মানুষের আর্থিক যে উন্নতি হবে, মানুষের মনে শান্তি আসবে, মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে- সেই সুযোগটা সৃষ্টি হবে। এখানে পর্যটনের সুযোগ হবে। পায়রায় আমরা বন্দর তৈরি করেছি। সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ হবে।' শেখ হাসিনা বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের এই দক্ষিণাঞ্চলটা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে। তাই এ অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতিটা আমরা যত দ্রম্নত করতে পারব, তত এই অঞ্চলের মানুষ দ্রম্নত আর্থিকভাবে সচ্ছল হবে।' বরিশাল বিভাগ ও বৃহত্তর ফরিদপুরের জেলাগুলো সবসময় অবহেলিত ছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'ওই এলাকার ১২টি জেলা সবসময় অবহেলিত ছিল। তাদের অপরাধটা কী ছিল, সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন। তাদের কেন এত অবহেলার শিকার হতে হলো? এ অঞ্চলের মানুষ সবসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।' আমাদের বরিশাল অফিস ও দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানায়, পায়রা সেতুর টোল পস্নাজায় পটুয়াখালী প্রান্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি, পটুয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহজাহান মিয়া, পটুয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য আসম ফিরোজ, পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদা, পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. মহিবুর রহমান, বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ, বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য বেগম নাসরিন জাহান রত্না, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুলস্নাহ, মহিলা আসন ২৯'র সংসদ সদস্য কাজী কানিজ সুলতানা হেলেন, মহিলা আসন ২৮ অ্যাডভোকেট সৈয়দা রুবিনা আক্তার মীরা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. খলিলুর রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুচ, শেখ হাসিনা সেনানিবাস কমান্ডার জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল আবুল কালাম মো. জিয়াউর রহমান, বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর, প্রবিপ্রবি ভিসি ড. সদেশ চন্দ্র সামন্তসহ বরিশাল, পটুয়াখালী জেলার জেলা প্রশাসনের সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। চার লেনের এই পায়রা সেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৭০ মিটার, প্রস্থ ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার। জলতল থেকে সেতুটি ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচু। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ আমানত সেতুর আদলে নান্দনিক নকশায় সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। \হসেতু বিভাগ সূত্র জানায়, সেতুর উভয় পারে সাত কিলোমিটার জুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক। নদীর মাঝখানে মাত্র একটি খুঁটি বা পিলার ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে না। এ ছাড়া এই সেতুতে 'ব্রিজ হেলথ মনিটর (সেতুর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা)' স্থাপন করা হয়েছে। এতে বজ্রপাত, ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই যানবাহন চলাচলে সেতুর কোনো ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হলে আগেভাগেই সংকেত পাওয়া যাবে। আধুনিক টোল পস্নাজা নির্মাণ করা হয়েছে। রাখা হয়েছে উভয় পার্শ্বে যানবাহনের ওজন পরিমাপের ব্যবস্থা। \হ১ হাজার ৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর ৮২ ভাগ অর্থায়ন করেছে কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ও ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট। নির্মাণ কাজ করেছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন। পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের লেবুখালী পয়েন্টে পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায় ২০১২ সালে। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতুর ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই। কার্যাদেশে সেতু নির্মাণে ৩৩ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হলেও দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের আগেই যান চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো।