শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

হিমেল হাওয়ায় বাড়ছে পর্যটক

শীত মৌসুমের শুরুতেই সৈকতের বালুকাবেলায় নোনাজলে খালি পায়ে নেমে ভ্রমণের আনন্দটা আরও নিবিড় করতে সফরে আসেন পর্যটকরা
জাবেদ আবেদীন শাহীন
  ২৭ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
আপডেট  : ২৭ নভেম্বর ২০২১, ০৯:২৫
সাগরের নীল জলরাশিতে উলস্নাস করছেন স্নানরত ভ্রমণ পিপাসুরা -যাযাদি

ধীরে-ধীরে কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। দিনে তীব্র গরম আর নেই। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, শেষ বিকালে শীতের হিমেল আমেজ। এর মধ্যে তাপমাত্রা কিছুটা কমে যাওয়ায় বাড়তে শুরু করেছে পর্যটক। বিশেষ করে বন্ধের দিন শুক্র ও শনিবারে সৈকতের ৬টি পয়েন্টে থাকে পর্যটকে ভরপুর। শীত মৌসুমের শুরুতেই সৈকতের বালুকাবেলায় নোনাজলে খালি পায়ে নেমে ভ্রমণের আনন্দটা আরও নিবিড় করতে সফরে আসেন পর্যটকরা। কক্সবাজারে গত এক সপ্তাহ ধরে রাতে হালকা শীতের আমেজ বিরাজ করায় পর্যটন নগরীতে বাড়ছে দেশি-বিদেশি পর্যটকের উপস্থিতি। এতে করে হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও রিসোর্টগুলো প্রতিদিনই সরব হয়ে উঠছে। পর্যটন ব্যবসায় ফিরেছে চাঙাভাব। কক্সবাজার ছাড়াও পর্যটকরা ইনানী, হিমছড়ি রামু টেকনাফ সেন্টমার্টিনস মহেশখালীসহ বিনোদনের মাধ্যম পর্যটক স্পটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিশেষ করে সাগরের নীল জলরাশিতে হালকা গরমে স্নানরত ভ্রমণ পিপাসুরা উচ্ছ্বাস আর উলস্নাসে এখন মুখরিত সৈকতের প্রতিটি পয়েন্ট। কেউ ছবি তুলছেন, আবার কেউ নিজেই সেলফিতে মেতে উঠেছেন। কেউ সমুদ্রের ঢেউয়ে পা ভেজাচ্ছেন, কেউ বেঞ্চে বসে আছেন আরাম করে। সৈকতের ৬টি পয়েন্টে সমুদ্র স্নানে নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন লাইফ গার্ড কর্মীরা। এদিকে পর্যটক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুর চাহিদা বেড়েছে পর্যটন এলাকায়। আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন ব্যবসায়িরা। হোটেল মালিকদের দেওয়া তথ্য মতে, প্রতি বছর শীতের মৌসুমে ২০ লাখের বেশি পর্যটক কক্সবাজারে ঘুরতে আসেন। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে অনেক আগেই শীতের আগাম বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। নভেম্বরের শেষের দিকে শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সিলেটের নববিবাহিত জুবায়ের-আসমা দম্পতি বলেন, কক্সবাজারের এই বিশাল সমুদ্র সৈকতে আগে কখনই আসিনি। এটা আমার জীবনে প্রথম সমুদ্র দেখা। সুন্দর জায়গা, আজকে খুবই মজা করছি। খুব কাছ থেকে সমুদ্র দেখা এ এক ভিন্ন অনুভূতি। তাই সমুদ্র তীরে বসে আছি, মাঝে মাঝে টেউয়ের স্পর্শে পা ভিজিয়ে নিচ্ছি, যে কারণে এত রাত হওয়ার পরও হোটেলে ফিরতে ইচ্ছা হচ্ছে না।' ঢাকা থেকে আসা পর্যটক সোহরাব রুস্তম বলেন, থাকি আমেরিকায়। দুই মাসের ছুটিতে বাংলাদেশে এসেছি। আনন্দ উপভোগ করতে পরিবার-পরিজন নিয়ে সবাই কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছি। সত্যি অসম্ভব ভালো লাগছে, যতদিন ইচ্ছা হয় থাকব। এখানকার ভালো লাগার আরেকটি দিক হলো তাজা সামুদ্রিক মাছের মুখরোচক খাবার। আর পরিবেশটাও অন্য রকম লাগছে।' এদিকে, পর্যটকদের হয়রানি রোধে দায়িত্ব পালন করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পর্যটকদের ভ্রমণে ১ নভেম্বর থেকে চালু করা হয়েছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনস নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ। প্রতিদিনই ৩টি জাহাজে করে সেন্টমার্টিনস ভ্রমণে যেতে পারবে প্রায় দেড় হাজার পর্যটক। \হহোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার বলেন, 'করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল পর্যটন নগরী কক্সবাজারের হোটেল ও রেস্তোরাঁসহ সব দোকানপাট। মৌসুমের শুরুতে যে পরিমাণ পর্যটকের আগমন ঘটেছে, এতেই হাসি ফুটেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মুখে। করোনার সময়ের ক্ষতি কাটানোর আশা এখন তাদের বুকে। তবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উপর গুরুত্ব দিচ্ছি।' সাইমন বস্নু-পার্ল হোটেলের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, 'শীতের হিমেল আমেজ বিরাজ করায় পর্যটকের আগমন বেড়েছে। অধিকাংশ কক্ষই এখন আগাম বুকিং হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ লকডাউনে আমরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আশা করছি এই শীতে পর্যটকের আগমন আরও বাড়বে। আমরা এই মৌসুমটা ভালোমত ব্যবসা করতে চাই।' টু্যরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন জানান, সৈকতের প্রতিটি পয়েন্ট ছাড়াও সেন্টমার্টিন, হিমছড়ি, ইনানীতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। যাতে পর্যটকরা পর্যটন স্পটগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে পারে। টু্যরিস্ট পুলিশের সদস্যরা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলার ওপরও নজরদারি করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে